ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

উজানের ঢলে তিস্তার নদীতে ফের বন্যা

প্রকাশিত: ০৪:২১, ২৪ জুলাই ২০১৯

উজানের ঢলে তিস্তার নদীতে ফের বন্যা

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ নীলফামারী জেলায় তিস্তা নদীর বন্যার পরিস্থিতির আবারও অবনতি হয়েছে। আজ বুধবার দুপুর ১২টা হতে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার(৫২ দশমিক ৭৫) উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৫২দশমিক ৬০। এর আগে একই পয়েন্টে তিস্তার পানি সকাল ৬টায় ও ৯টায় বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। যা ছয় ঘন্টার ব্যবধানে বিপৎসীমা অতিক্রম করে ২০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিবিশনের বন্যা পুর্বাভাস ও সর্তকীকরন কেন্দ্র সুত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায় ভারী বৃস্টিপাত ও উজানের ঢলে তিস্তায় দ্বিতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এর আগে গত ১১ জুলাই তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ও ১৩ জুলাই সেটা সর্বোচ্চ ৫০ সেন্টিমিটার ওপরে ওঠে। ১৫ জুলাই পর্যন্ত সেখানে বিপৎসীমা বরাবর পানি প্রবাহিত হলেও ১২ জুলাই থেকে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখে সতর্কাবস্থায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হচ্ছে। এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা অববাহিকার জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ৩০ হাজার মানুষ পুনরায় বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছে। তারা জানায় তিস্তা নদীর বৃদ্ধির কারনে পুনরায় জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের নদী বেস্টিত চরগ্রাম ও নিচু এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। দ্বিতীয় দফায় বন্যা শুরু হলে আরো ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। উজানের পানি চাপে ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ি এলাকায় স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত দুই কিলোমিটার দীর্ঘ বালির বাঁধের নতুন করে আরো দুইশথ মিটার নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। এর আড়ে ওই বাঁধের চারশত মিটার নদী গর্ভে বিলিন হয় বলে জানান টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক। এদিকে প্রথম দফার বন্যায় এ পর্যন্ত রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৫ জেলায় ৩২ হাজার হেক্টর জমির উপরে ফসলের ক্ষতি সাধিত হয়। এ তথ্য রংপুর বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানা যায়। সুত্র মতে রংপুরের কাউনিয়া, গংগাচড়া, পীরগঞ্জ, পীরগাছা, তারাগঞ্জ, গাইবান্ধার সদর, সাদুল্লাপুর, পলাশবাড়ি, গোবিন্দগঞ্জ, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি, কুড়িগ্রামের সদর, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রজিবপুর, ভ’রাঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ি, রাজারহাট, লালমনিরহাট জেলার সদর, আদিতমারী, কালিগঞ্জ, হাতিবান্ধা, পাটগ্রাম এবং নীলফামারী জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলায় ফসল পানির নিচে রয়েছে । গত ১১ জুলাই হতে শুরু হওয়া বন্যায় রংপুরে আউশ ৩০, আমনবীজতলা ২৮ দশমিক ৫, রোপা আমন ১৮ দশমিক ৫ এবং ২৮ হেক্টর জমির শাকসবজি পানির নিচে রয়েছে। গাইবান্ধায়-আউশ ২ হাজার ৭৫৭, আমন বীজতলা ২ হাজার ১৯৭, রোপা আমন ২৫, পাট ৫ হাজার ৯৫০, শাকসবজি ৮৭৬ এবং ৫০ হেক্টর জমির তিল পানির নিচে। কুড়িগ্রামে আউশ ৫ হাজার ৯৬৩, আমন বীজতলা ২ হাজার ৮৯১, পাট ৮ হাজার ১০৫, শাকসবজি ১ হাজার ৯৬২, মসলা জাতীয় ফসল ৫৪৭ এবং কলা ১৭০ হেক্টর পানির নিচে আছে। লালমনিরহাট জেলায় রয়েছে আমন বীজতলা ৩২৫ হেক্টর। নীলফামারীতে আউশ ১২ দশমিক ৫, আমন বীজতলা ৭২ দশমিক ৭, রোপা আমন ৩, পাট ৭, শাকসবজি ২৫ এবং মসলা জাতীয় ফসল শূন্য দশমিক ৭ হেক্টর। মোট ৩২ হাজার ১১৬ দশমিক ৯ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে রয়েছে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, রংপুর অঞ্চলে প্রথম দফার সৃষ্ট বন্যায় ৩২ হাজার ১১৬ দশমিক ৯ হেক্টর জমির ফসল পারি নিচে রয়েছে। এখনও পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতির হিসাব জানা যায়নি। তবে কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
×