ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যাকবলিত এলাকায় পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ২৪ জুলাই ২০১৯

বন্যাকবলিত এলাকায় পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পানি কমতে শুরু করলেও বন্যাকবলিত এলাকায় ডায়রিয়া ও চর্মরোগসহ নানা প্রকার পানি বাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। বানভাসি লোকজনের দুর্ভোগ আরও বাড়ছে। বন্যায় এখন পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় প্রায় এক শ’ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদের বেশিভাগই শিশু এবং পানিতে ডুবে মারা গেছে। এছাড়া সাপের কামড়সহ অন্যান্য কারণেও এই মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী বন্যায় পানিতে ডুবেই প্রায় ৭০ জনের পাণহানি হয়েছে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে বন্যার পনি দ্রুত নামতে শুরু করলেও প্রধান প্রধান নদীর পানি এখনও বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে খোদ উত্তরাঞ্চলের কোন কোন এলাকায় এখনও বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। তবে এই সময়ের মধ্যে ধরলা ও তিস্তা নদীর পানি আরও বাড়তে পারে। একই সঙ্গে সুরমা কুশিয়ারা নদীর পানিও বেড়ে যেতে পারে বলে বন্যা পূর্বাভাস এবং সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে। এদিকে বন্যার কারণে গাইবান্ধায় এখনও ৩৬৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে পানিতে ডুবে একজন শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কুড়িগ্রামে সাড়ে নয় লাখ বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। ছড়িয়ে পড়ছে ডায়ারিয়াসহ পানি বাহিত নানা রোগ। কুড়িগ্রামের চিলমারি দীর্ঘবন্যার কবলে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত দেশে যেসব এলাকা ভয়াবহ বন্যার কবলে রয়েছে তার মধ্যে চিলমারি রয়েছে এক নম্বর অবস্থানে। বন্যা পূর্বাভাস এবং সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান বলেন, ভারি বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদের মধ্যভাগের জেলাগুলোতে গত তিন চারদিন ধরে পানি খুব হ্রাস পাচ্ছে। বিপদ সীমার নিচে নেমে এসেছে। দুই তিনটি পয়েন্টে পানি এখনও বিপদ সীমার উপরে থাকলেও তা দ্রুত নেমে যাবে। মধ্যাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। এদিকে বাংলাদেরেশর আহাওয়া অধিদফতর এবং ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর থেকে আবারও ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আরিফুজ্জামান বলেন, বৃষ্টির কারণে কিছুটা বন্যা স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছালেও পরিস্থিতির আবারও উন্নতি হবে। ভারতের অসমে নতুন করে বৃষ্টিপাত হলেও সেটা স্বল্পমেয়াদী এবং স্বল্প মাত্রায় হওয়ায় বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতিতে তেমন কোন প্রভাব ফেলবে না বলে উল্লেখ করেন। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডে পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশের এগারো নদীর পানি ২১ পয়েন্টে বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সমতল স্টেশনের ৯৩ কেন্দ্রের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল ৩২ পয়েন্টে। এর বাইরে ৫৯ কেন্দ্রে পানি কমেছে বলে জানানো হয়েছে। কুড়িগ্রাম ॥ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি আবারও অবনতি হয়েছে। সাড়ে নয় লাখ বানভাসি মানুষ চরম দুর্ভোগে। নেই বিশুদ্ধ পানি। অপ্রতুল ত্রাণ। বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট, বাঁধ, ঘরবাড়ি। নেই শৌচকর্ম সম্পন্ন করার মতো নিরাপদ ব্যবস্থা। দেখা দিয়েছে পানিবাহিত নানা রোগ বালাই। সব মিলিয়ে এ জনপদের কয়েক লাখ মানুষ দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছেন। ধরলা নদীতে নুতন করে পানি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। সেই সঙ্গে চলছে অবিরাম বৃষ্টি। গাইবান্ধা ॥ বন্যার কারণে সাত উপজেলার ৩৬৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। পাঠদান বন্ধ থাকা এসব বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩০৯ বিদ্যালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া নদী ভাঙ্গনে ইতোমধ্যে তিনটি প্রাথমিক ও একটি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়েছে। বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অধিকাংশই দুর্গম চরে অবস্থিত। এছাড়া বন্যা ও ভাঙ্গনের মুখে থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ হুমকির মুখে রয়েছে আরও ১৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গাইবান্ধা প্রাথমিক শিক্ষা ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বগুড়া অফিস ॥ বাঙালীর পানি প্রতিদিনই বাড়ছে। পানি ১০৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সোনাতলা উপজেলার অন্তত ২৫ গ্রামে ঢলের পানি প্রবেশ করেছে। রানীরপাড়া গ্রামের মূল সড়কের ওপর দিয়ে ¯্রােত বইছে। জেলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানাচ্ছে সারিয়াকান্দি সোনাতলা ও ও ধুনট উপজেলার ১৭৯ গ্রামের দুই লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। এদের মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে আছে চার হাজার জন। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর আশ্রিত হয়েছে প্রায় পাঁচ শ’ পরিবার। বন্যাক্রান্ত গ্রামগুলোর প্রায় তিন হাজার টিউবওয়েল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই হাজার পাঁচ শ’ বারোটি ল্যাট্রিন বিধ্বস্ত হয়েছে। যে এলাকাগুলোতে বন্যার পানি নেমে যাচ্ছে সেখানে ডায়রিয়া ও চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। নীলফামারী ॥ তিস্তা নদীর বন্যা ও ভাঙ্গনে পরিস্থিতির আবারও অবনতি হয়েছে। এতে তিস্তা পাড়ে ডিমলা উপজেলার দুই চরের প্রায় আড়াই হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। উজানের পানির চাপে মঙ্গলবার বিকেলে জেলার ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ি এলাকায় স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত দুই কিলোমিটার দীর্ঘ বালির বাঁধের চার শ’ মিটার নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। এতে ওই চার শ’ মিটারের ফাকা স্থান দিয়ে চরখড়িবাড়ি মৌজায় নদীর পানি প্রবেশ করে বসতঘর প্লাবিত করছে। অপরদিকে ডালিয়ার তিস্তা ব্যারাজের ভাটির দিকে নদীর দিক পরিবর্তনে ঝুনাগাছচাঁপানী ইউনিয়নের ফরেস্টের চরের নয় শ’ পরিবারের বসতঘরে পানি প্রবেশ করেছে। কিশোরগঞ্জ ॥ জেলার হোসেনপুরে বন্যার পানিতে ডুবে রাহুল মিয়া (৫) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে উপজেলার চর বিশ্বনাথপুর গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে। স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকালে ওই শিশু বাড়ির পাশে বন্যার পানিতে কলা গাছের ভেলায় চড়ে সহপাঠীদের নিয়ে খেলা করার সময় হঠাৎ সে গভীর পানিতে তলিয়ে যায়। পরে আশপাশের লোকজন সজ্ঞাহীন অবস্থায় শিশু রাহুলকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) ॥ পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার পর এখন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌর সদরসহ উপজেলার ১৩ ইউনিয়ন বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এবং বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পরেছে। পৌর সদরের পুকুরপাড়, তালতলা, রূপপুর, দ্বাবারিয়া, বাড়াবিল, নলুয়া, মাদলা, পারকোলাসহ অধিকাংশ এলাকার নি¤œাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এদিকে রূপপুর উরিরচর এলাকায় বেশকিছু বাড়িঘর ডুবে গেছে। তাদের চরম মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
×