ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাত কলেজের ঢাবিতে অধিভুক্তি এখন ‘বিষফোঁড়া’!

প্রকাশিত: ১০:২০, ২২ জুলাই ২০১৯

 সাত কলেজের ঢাবিতে অধিভুক্তি এখন ‘বিষফোঁড়া’!

বিভাষ বাড়ৈ/মুনতাসির জিহাদ ॥ সেশনজট কমানো আর মানোন্নয়নের আশায় রাজধানীতে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ সাত সরকারী কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হলেও সেই উদ্যোগ আজ শিক্ষায় মহাসঙ্কটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষমতা দেখানোর খেলায় কোন প্রস্তুতি ছাড়াই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাত থেকে এনে অতি আগ্রহে গিলে ছিল ঢাবি। তবে আগ্রহ নিয়ে গিললেও অধিভুক্ত সাত কলেজ এখন ঢাবির ‘গলার কাঁটা’। ক্রমেই শিক্ষার ‘বিষফোঁড়া’ হয়ে উঠছে অধিভুক্তির সিদ্ধান্ত। দুই বছরের মাথায় আজ খুশি নয় ঢাবি ও সাত কলেজের কোন পক্ষই। এদিকে মাসের পর মাস পরীক্ষা না হওয়া, পরীক্ষা হলেও ফল না পাওয়া, ভয়াবহ সেশনজটসহ বহুমুখী সঙ্কটের প্রতিবাদে একদিকে চলছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অন্যদিকে অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ঢাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে রীতিমতো অচল দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানগুলো। শনিবার সঙ্কট সমাধানে ঢাবি কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিল আন্দোলনরত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যেই রবিবার অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে রীতিমতো ভবনে ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা। কেবল তাই নয়, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণাও দিয়েছেন তারা। ফলে সঙ্কটের মুখে এখন ঢাবি ও অধিভুক্ত সাত কলেজের প্রতিটি শিক্ষার্থী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই বছর আগে ঢাবি ও জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের দুই উপাচার্যের মতবিরোধের ফল আজ ভোগ করতে হচ্ছে লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে। দুই প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয় থাকলে এমন সঙ্কটের সৃষ্টি হতো না বলেই মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সাতটি সরকারী কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অধিভুক্ত সরকারী সাত কলেজ হলোÑ ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারী শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারী মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারী বাঙলা কলেজ ও সরকারী তিতুমীর কলেজ। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় বলা হয়, সাত কলেজের প্রত্যেকটি একেকটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কেবল তিতুমীর কলেজেই শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫৪ হাজার। যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা থেকেও বেশি। বাকি ছয় কলেজের প্রত্যেকটিতেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়োজিত থাকা লোকবলই দিয়ে এই সাত কলেজের দুই লাখ শিক্ষার্থীর যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। উচ্চশিক্ষার মান বৃদ্ধির কথা বলে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করায় প্রথমে খুশিই হয়েছিল সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তবে মোহভঙ্গ হতে সময় লাগেনি। এক বছর যেতে না যেতেই সঙ্কটের মুখে পড়ে তারা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকতে যেসব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিয়েছিলেন তারা ফল পাননি এক বছরেও। অর্থাৎ তাদের সঙ্গে থাকা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরা তাদেও ফল নিয়ে যোগ দিয়েছেন চাকরিতে। এমন অবস্থায় এক বছরের মধ্যেই চতুর্থ শিক্ষাবর্ষ ও চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা নামেন ফল প্রকাশের দাবির আন্দোলনে। ফল খুব একটা হয়নি। ববং ঢাবি কর্তৃপক্ষের কঠোর অবস্থানে সংঘর্ষে আহত হন বহু শিক্ষার্থী। এরপর থেকেই ফল প্রকাশ ও পরীক্ষার দাবিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে চলছে অব্যাহত আন্দোলন। কারণ একটাই। সেটি হলো প্রতিনিয়ত সেশনজট, সময়মতো পরীক্ষা না হওয়া, রুটিন প্রকাশ না হওয়া, ফল না হওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে কলেজগুলোর কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর জীবন। শিক্ষার্থী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাত কলেজের দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ ঢাবি প্রশাসন। যদিও কর্তৃপক্ষ বিশেষ পরীক্ষা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের উদ্ভূত সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছে। কিছুদিন আগে আন্দোলনের মধ্যে ঢাবি কর্তৃপক্ষ নিজেই স্বীকার করেছে প্রস্তুতি ছাড়া সরকারী সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে অপরিকল্পিতও বলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ‘পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া অপরিকল্পিতভাবে হঠাৎ করে ঢাকার সাত সরকারী কলেজকে অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রহণের ফলে অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে।’ গত প্রায় দের বছর ধরেই সেশনজট, গণহারে ফেল, নিজস্ব প্রশাসনিক ভবন, রুটিন প্রকাশসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে কিছুদিন পরপরই আন্দোলনে নামতে বাধ্য হচ্ছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রতিবারই কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করছেন তারা। কিন্তু এরপরই আশ্বাসের বাস্তবায়ন না দেখে আবার নামছেন আন্দোলন। অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকেই নানা সঙ্কট লেগেই আছে এসব কলেজের। শিক্ষার্থীরা কখনও পরীক্ষার রুটিন, কখনও ফলের দাবিতে রাজধানীর নীলক্ষেত ও শাহবাগের মোড় অবরোধ করছে শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে তিতুমীর কলেজের আবু বকর সিদ্দিক নামে এক শিক্ষার্থী চোখও হারিয়েছে। তবুও সুফল পায়নি সাত কলেজের লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর। তাই বারবার রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছে তারা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ঢাবি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অবহেলায় তারা চরম হতাশা নিয়ে শিক্ষাজীবন পার করছেন। এবার কর্তৃপক্ষের কারণে পরীক্ষায় ফল বিপর্যয়ের অভিযোগ এনেছে শিক্ষার্থীরা। অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে শুরু করেন আন্দোলন। এর মধ্যেই বদরুন্নোসা কলেজের এক ছাত্রী খাতা মূল্যায়নে অবহেলার কারণে ফেল করায় আত্মহত্যা করেছেন এমন খবরে আন্দোলন ব্যাপক রূপ পায়। প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকে তাদের প্রত্যাশীত নম্বর পাচ্ছেন না। কোন কোন কলেজে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ফেল করছে বলে বলা হচ্ছে। আবার অভিযোগ করা হলে ঢাবি কর্তৃপক্ষ সন্তোষজনক জবাবও দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এছাড়া ঢাবির শিক্ষকরা সরকারী কলেজে গিয়ে যেভাবে খবরদাবি করছে, খাতা মূল্যায়নে ঢাবির শিক্ষকদের যেভাবে সুবিধা দেয়া হচ্ছে তাতেও সাত কলেজের শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের মাঝে ক্ষোভ বাড়ছে। তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাব্বি বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতি কোন নজর দিচ্ছে না। অবহেলা করছে খাতা মূল্যায়নে। এটা দিনের পর দিন হচ্ছে। দ্রুত সঙ্কটের সমাধান করা না হলে লাগাতার আন্দোলনের হুমকি দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভে অংশ নেয়া শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম শিশির বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করছে। এর আগে আমাদের এত ফল বিপর্যয় ছিল না। কিন্তু এখন এটি যেন নিয়ম হয়েছে দাঁড়িয়েছে। ঢাবি শিক্ষকরা আমাদের বঞ্চিত করছেন। এটা অন্যায়। তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ২৯০ জন তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে মাত্র ২৫ জন সব বিষয়ে পাস করেছেন। আর একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েও চতুর্থ বর্ষে উত্তীর্ণ হয়েছেন সর্বমোট দেড় শ’ শিক্ষার্থী। বাকি ১৪০ জনই তৃতীয় বর্ষে রয়ে গেছেন। তারা এই অস্বাভাবিক ফল নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধান পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ কোন সমাধান দিতে না পারায় তারা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন। ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী শ্রাবণী সরকার বলছিলেন, অধিভুক্ত করার পরে বার্ষিক ক্যালেন্ডার নেই, সিলেবাস নেই, রেজাল্ট দেয়ার আগে কোন নোটিস দেয় না। চরম অব্যবস্থপনার মাধ্যমে আমাদের শিক্ষাজীবন পার করতে হচ্ছে। আমাদের দায়িত্ব নিতে না পারলে তারা কেন আমাদের অধিভুক্ত করল? ফারজানা ইয়াসমীন নামের ইডেন কলেজের আরেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, তাদের একেক বর্ষে একেক রকম সিজিপিএ। তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করেন। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, অধিভুক্ত হওয়ার আগে আমাদের এত সমস্যা ছিল না। কোন নিয়ম না করেই অধিভুক্ত করেছে। বারবার রাস্তায় নামতে বাধ্য করছে কর্তৃপক্ষ। যতবারই নামি, শুধু আশ্বাস দেয়। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী হাসান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছিলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবহেলা ও অনীহার কারণেই আমরা আজ ভুক্তভোগী। কিন্তু আমাদের কী দোষ? আমরা কি চেয়েছিলাম আমাদের অধিভুক্ত করা হোক? এখন কেন এজন্য আমাদের ভুক্তভোগী হতে হবে? এই দায় সম্পূর্ণভাবে দুই বিশ্ববিদ্যালয়কে নিতে হবে। এমন এক অবস্থার মধ্যেই শনিবার অধিভুক্ত বেগম বদরুন্নেছা সরকারী মহিলা কলেজের ছাত্রী মনিজা আক্তার মিতুর আত্মহত্যার ঘটনায় বিচারের দাবিতে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হলে আগামী ২৭ জুলাই ফের রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে খেলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফল প্রকাশে লম্বা সময় ব্যয় করা হচ্ছে, ভাল পরীক্ষা দিলেও উত্তরপত্রে প্রাপ্ত নম্বর দেয়া হচ্ছে না, ইচ্ছামতো শিক্ষার্থীদের ফেল করানো হচ্ছে, দেখার যেন কেউ নেই। ঢাবি কর্তৃপক্ষের এমন আচরণে সাত কলেজ শিক্ষার্থী হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এ কারণে আত্মহত্যা করেন ঢাবি অধিভুক্ত বেগম বদরুন্নেছা সরকারী মহিলা কলেজের ছাত্রী মনিজা আক্তার মিতু। এর দায় কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নীলক্ষেতে সড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর পর্যন্ত চলে তাদের আন্দোলন। এরপর তিন-দফা দাবি ঘোষণা করে আগামী সাত দিনের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। দাবিগুলো হচ্ছে- নিহত ছাত্রী মিতুর একাডেমিক ও পরীক্ষার সব কাগজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে হবে, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মিতুর আত্মহত্যার কারণ উদঘাটন করতে হবে ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং আর যাতে কেউ এমন হতাশাগ্রস্ত না হয় সে জন্য সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের সব দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। এদিকে কঠোর আন্দোলনে ঢাবির শিক্ষার্থীরাও। রবিবার তাদের কর্মসূচীতে পুরোপুুরি অচল হয়ে পড়ে ঢাবি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে এ কর্মসূচীর ডাক দেয়া হয়েছে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবি জানান তারা। কর্মসূচীতে তারা, ‘শোন বোন শোন ভাই, ঢাবির কোনো শাখা নাই!’, ‘একটা ঢাবির সম্মান, সাত কলেজ বেমানান’, ‘নিজ সমস্যার শেষ নাই, সাত কলেজ বাতিল চাই’, ‘আমাদের দাবি মানতে হবে, সাত কলেজ ছাড়তে হবে’, ‘সাত কলেজের ঠিকানা, ঢাবিতে হবে না’, ‘এক দফা এক দাবি, সাত কলেজ মুক্ত ঢাবি’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। রবিবার সকাল ১০টায় ঢাবিতে কর্মকর্তা কর্মচারীরা এলেও রেজিস্টার ভবনের দুই প্রধান গেটে তালা দেয়ায় কেউ প্রবেশ করতে পারেননি। বিশ^বিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মুহম্মদ সামাদ আন্দোলনকারীদের আশ্বাস দিলেও শিক্ষার্থী অবরোধ চালিয়ে যান। প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও প্রবেশ করতে না পেরে তিনি চলে যান। অন্যদিকে কলা ভবন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে তালা দেয়ায় সব বিভাগের ক্লাস বর্জন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে কার্জন হল ও বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগগুলো ক্লাস পরীক্ষা চলমান ছিল। সাত কলেজ অধিভুক্তি সমস্যা নিরসনে রবিবার বিকেলে চারটার দিকে আলোচনায় বসেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মুহম্মদ সামাদ। ছিলেন সাত কলেজ অধিভুক্তির সমন্বয়ক অধ্যাপক শিবলী রুবায়তুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় কোষাধ্যক্ষ ড. কামাল উদ্দীন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার ড. এনামুজ্জামান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সাদেকা হালিম, কলা অনুষদের ডিন আবু দেলোয়ার মুহাম্মদ প্রমুখ। ছাত্রনেতাদের মধ্যে ছিলেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর, জিএস গোলাম রাব্বানী, এজিএস সাদ্দাম হোসাইন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন প্রমুখ। আলোচনা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক ড. সামাদ বিশ^বিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির প্রতি প্রশাসনের সমর্থন রয়েছে। আমরা এ দাবিগুলো পূরণে সাধ্যমতো চেষ্টা করব। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করা হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক সামাদ বলেন, সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করার এখতিয়ার আমাদের নেই। এটি সরকারের সিদ্ধান্ত। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে- এই প্রশ্নের জবাবে বলেন, এ বিষয়ে ডাকসু কাজ করবে। ডাকসুর একটি সভা রয়েছে। সভা শেষে তারা একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেবেন। উপাচার্য দেশে ফিরলে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান ও ডাকসুর সদস্যদের সঙ্গে সাত কলেজের সমস্যার সমাধানে আলোচনা করা হবে। এছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব।
×