ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রবীন্দ্রসঙ্গীতের দ্বিভাষিক উপস্থাপনায় মুগ্ধ শ্রোতা

প্রকাশিত: ০৭:১৮, ২২ জুলাই ২০১৯

 রবীন্দ্রসঙ্গীতের দ্বিভাষিক উপস্থাপনায় মুগ্ধ শ্রোতা

গৌতম পান্ডে ॥ রবীন্দ্রপ্রেমীদের জন্য সন্ধ্যাটি ছিল মনোরম এবং প্রথম অভিজ্ঞতা। মঞ্চ থেকে মাইকে ভেসে আসছে রবীন্দ্রনাথের গান ‘আকাশভরা সুর্য তারা, বিশ্বভরা প্রাণ’। গানটি শেষ হওয়ার পরক্ষনেই গানটি হুবহু সুরে ও তালে শোনা যাচ্ছে ইংরেজিতে। দেশের বরেণ্য শিল্পী স্বপন দত্ত মনের মাধুরী মিশিয়ে গাইছেন, আর গানটিকে লালিত্যমাখা সুরে আরেক গুণী শিল্পী আনন্দময়ী মজুমদার গাইছেন ইংরেজিতে। মিলনায়তনজুড়ে এক অভিনবত্ব বিরাজ করে এসময়। রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে সতত লিমিটেড আয়োজিত রবীন্দ্রসঙ্গীতের দ্বিভাষিক অডিও এ্যালবাম প্রকাশনানুষ্ঠানে এমনই সঙ্গীত আবহ বিরাজ করে শনিবার সন্ধ্যায়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন একুশে ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক সুজেয় শ্যাম। এছাড়া অনুষ্ঠানের আরেকটি বিশেষ চমক ছিল ভারতের পশ্চিম বঙ্গের গুণী শিল্পী সুতপা ভট্টাচার্যের গান। এ্যালবামের মোড়ক উন্মোচনের সময় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি একুশে ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক বলেন, সঙ্গীতের কোন ব্যাখ্যা হয় না। আমাদের হৃদয়ের সব চাইতে গভীর স্তরে সাহিত্য, শিল্প, সৈন্দর্যের চেতনাগুলো কাজ করে। সঙ্গীতও সেই রকম। সঙ্গীতের সাথে তুলনীয় কিছু নেই। সেই সঙ্গীত নিয়ে অসাধারণ কাজের একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে আজ। আনন্দময়ী মজুমদার আমার কন্যাতূল্য। খুব ছোটবেলা থেকে ওকে দেখে আসছি। খুব অল্প বয়স থেকেই প্রতিভাময়ী। সে এমনিতেই বিদুষী। তার বাবা ড. সুব্রত মজুমদার, মা দিপিকা মজুমদার। এরা দুজনই আমার খুব প্রিয় মানুষ। রবীন্দ্রনাথের গান যখন একটি-দুটি করে আনন্দময়ী ইংরেজিতে অনুবাদ করতে শুরু করে তখন আমি ভেবেছিলাম এর শেষটা কি হবে? একে তো রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি অনুবাদের প্রসংশা করেছেন অনেকেই। সেগুলো আমাদের তেমন মনে নেই। তার নিজের করা অনুবাদ কোন বাঙ্গালি আশা করবেন না। কিন্তু এই অসাধারণ কাজটি আমাদের এই মেয়ে আনন্দময়ী করেছে। যখন ও এটা শুরু করে হয়ত তার আগে সে আমাকে বলেছিল, আমি এটা করতে যাচ্ছি। আমি বলেছিলাম করো। আজ তা পরিপূর্ণতা পেল। তার ১০ খানি গান সিডি আকারে আজ প্রকাশ হলো। তার এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হলো আরেক উদার মানুষ স্বপন দত্ত। সে এবং তার স্ত্রী বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথও আমার ঘনিষ্ট। রবীন্দ্রনাথের গানের সুরেই আনন্দময়ী আমাদের গেয়ে শুনিয়েছে। সঙ্গীত নিজের ব্যাখ্যা নিজেই দেয়। সঙ্গীতের পরে নিস্তব্দতা। সঙ্গীতের পরেই ভাষা শেষ। রবীন্দ্রনাথের গান অনুবাদ দুরহ কাজ। শুধু অনুবাদ নয় সেই মূল সুরে আবার গাওয়া এই অভিজ্ঞতা আমাদের প্রথম। আমার মনেহয় এই কাজের একটা স্থায়ী মূল্য পাবে। বঙ্গ ভাষাভাষীর কাছে চির আদরনীয় হয়ে থাককে। বরেণ্য শিল্পী শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়ের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশনার মধ্যদিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। পরে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সতত লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফরিদুর রহমান। শিল্পীদ্বয়কে আমন্ত্রীত অতিথিদের আশীর্বাণীর পর শুরু হয় সঙ্গীত পরিবশেনা। শুরুতে স্বপন দত্ত পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আকাশভরা সূর্য তারা’। গানটি ইংরেজিতে পরিবেশন করেন শিল্পী আনন্দময়ী মজুমদার। তাদের পরিবেশনায় ছিল এ্যালবাম থেকে নেয়া রবীন্দ্রনাথের ৬টি গান। এগুলো হচ্ছে আমার মন যখন জাগলি নারে, মনে রবে কিনা রবে আমারে, মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, আমি চিনি গো চিনি তারে ও তুমি কি কেবলই ছবি। এরপর মঞ্চে আসেন পশ্চিম বাংলার শিল্পী সুতপা ভট্টাচার্য। শিল্পী তার নিজের মৌলিক গানের পাশাপাশি কালজয়ী কিছু গান পরিবেশন করেন। শুরুতে ‘গানই সর্বশ্রেষ্ঠ সাধনা’ দিয়ে আসর বন্দনা করে নেন শিল্পী। এরপর নিজের মৌলিক গান ‘আবার নতুন কোন ভোরে’ পরিবেশন করেন। পরে সুমন কল্যানের ‘আমার স্বপ্ন দেখা দুটি নয়ন’, নির্মলা মিশ্রর ‘রিমিঝিমি রিমিঝিমি’, প্রতিমা বন্দোপাধ্যায়ের ‘বড় সাধ জাগে’, শিপ্রা বসুর ‘যমুনা কি বলতে পারে’সহ বেশ কিছু কালজয়ী গান পরিবেশন করে সকলকে মুগ্ধ করেন।
×