ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

২৯ বছর পর চ্যাম্পিয়ন আলজিরিয়া

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ২১ জুলাই ২০১৯

 ২৯ বছর পর চ্যাম্পিয়ন আলজিরিয়া

জিএম মোস্তফা ॥ আলজিরিয়ান ফুটবলারদের মুখেই ফুটবল শিরোপার হাসি। সেনেগালকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আফ্রিকান কাপ অব নেশন্সের শিরোপা জিতল তারা। শুক্রবার টুর্নামেন্টের ফাইনালে রিয়াদ মাহরেজের আলজিরিয়া ১-০ গোলে পরাজিত করে সাদিও মানের সেনেগালকে। সেই সঙ্গে ২৯ বছর পর আফ্রিকান কাপ অব নেশন্সের শিরোপা জিতল আলজিরিয়া। এর আগে ১৯৯০ সালে প্রথমবার এই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আলজিরিয়া। এবার সেই সংখ্যাটাকে দুইয়ে নিয়ে গেল মাহরেজ-বোউনেদজারা। অন্যদিকে আরও একবার তীরে এসে তরী ডুবল সেনেগালদের। ২০০২ সালে প্রথমবার ফাইনালে হারা দলটি এবার দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জয়ের খুব কাছাকাছি এসেও স্বপ্ন-ভঙ্গের বেদনা নিয়ে মাঠ ছাড়ল। আফ্রিকান নেশন্স কাপের শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলে মরুর শেয়ালরা। টানা ছয় ম্যাচ জিতেই টুর্নামেন্টের ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করে ডিজামেল বেলমাদির শিষ্যরা। শিরোপার লড়াইয়েও দেখা যায় আলজিরিয়ার দাপট। ম্যাচ শুরুর দ্বিতীয় মিনিটেই যে প্রথম এগিয়ে যায় তারা। আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে- ম্যাচের বয়স যখন ৭৯ সেকেন্ড ঠিক তখনই জয়সূচক গোল পেয়ে যায় আলজিরিয়া। যা আফ্রিকান কাপ অব নেশন্সের ফাইনালের ইতিহাসেরই দ্রুততম গোল। গোলটি আসে অদ্ভুত কায়দায়। বামপ্রান্ত দিয়ে আক্রমণে গিয়ে ডি-বক্সের সামান্য বাইরে থেকে গোলমুখে শট নেন আলজিরিয়ান স্ট্রাইকার বাগদাদ বোউনেদজা। বল প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে বেশ উঁচুতে উঠে যায়। এরপর একদম ক্রসবার ঘেঁষে জড়ায় জালে। আর তাতেই উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসে আলজিরিয়ান সমর্থকরা। সেনেগালের গোলরক্ষক আলফ্রেড গোমেস ভাবতেও পারেননি এমনটা ঘটতে পারে। বলকে উঁচুতে উঠতে দেখে বক্সের ভেতরেই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। চেষ্টাও করেননি রুখে দেয়ার। অথচ শেষ পর্যন্ত এই গোলেই নিশ্চিত হয় শিরোপার। ম্যাচের শুরুতে এগিয়ে যাওয়ার পর পুরোপুরি খোলসবন্দী হয়ে পড়ে আলজিরিয়া। বিপরীতে সেনেগাল একের পর এক আক্রমণ চালাতে থাকে। কিন্তু সফলতার দেখা পায়নি তারা। দ্বিতীয়ার্ধে দারুণ সুযোগ আসে তাদের সামনে। ম্যাচের ৬০ মিনিটে পেনাল্টিও পায় মানের দল। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের। ভিএআর প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে নিজের প্রথম সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলেন ম্যাচের রেফারি। এর পরের সময়টাতে অবশ্য আর কোন গোলের দেখা পায়নি কেউ। যে কারণে ১ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে আলজিরিয়া। অন্যদিকে বল দখলের লড়াই (৬২ শতাংশ) ও শট নেয়ার (১২টি) ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলেও হারের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় সেনেগালকে। ২০০২ সালের ফাইনালে ক্যামেরুনের কাছে পেনাল্টি শূটআউটে হেরে গিয়েছিল সেনেগাল। সেই সময়ে দলটির অধিনায়কত্বের ভার ছিল এলিও সুইসের কাঁধে। দীর্ঘ ১৭ বছর পর এবার সেই সুইসের কাঁধে কোচের ভার। এবারও সেই পরাজয়ের দুঃখ নিয়েই মাঠ ছাড়তে হলো তার। সুপার ঈগলদের অভিজ্ঞ এই কোচের হতাশাটা তাই একটু বেশিই। ম্যাচের শেষে নিজের অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘১৭ বছর আগে ফাইনাল খেলেছিল সেনেগাল। দীর্ঘ সময় পর আবারও ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু শিরোপা জিততে এবারও ব্যর্থ হয়েছি। এটা খুবই হতাশার এবং দুঃখজনক ব্যাপার। তবে পরাজয়ের ব্যবধানটা খুব কম। কিন্তু আমাদের আরও ভাল একটা রাতের প্রত্যাশা ছিল।’ এদিকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর উড়ছে আলজিরিয়া। দারুণ খুশি দলটির কোচ ডিজামেল বেলমাদিও। তবে সব কৃতিত্ব শিষ্যদেরই দিলেন তিনি। ম্যাচের পর নিজের অভিমত জানাতে গিয়ে বেলমাদিও বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে এই শিরোপার পেছনে সব ভূমিকা খেলোয়াড়দের। তাদের ছাড়া আমি কিছুই না। দলকে এই পর্যন্ত নিয়ে আসার মূল কারিগর তারাই।’ চ্যাম্পিয়ন দলটিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন রিয়াদ মাহরেজ। যার দল ম্যানচেস্টার সিটি ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগেরও চ্যাম্পিয়ন। দারুণ পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে দলকে শিরোপা উপহার দেয়ায় নিজে গর্বিত বলে মন্তব্য করেন মাহরেজ। তবে গোল্ডেন বুট জিতেছেন নাইজিরিয়ার স্ট্রাইকার অডিয়ন ইগহালো।
×