ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও মধ্যাঞ্চলে অবনতি

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ২১ জুলাই ২০১৯

 উত্তরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও মধ্যাঞ্চলে অবনতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বন্যার বিস্তৃতি ক্রমেই বাড়ছে। বর্তমানে দেশের প্রায় ২২ জেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ছে। উত্তরাঞ্চল থেকে পানি নেমে এখন মধ্যাঞ্চলে পরিস্থিতির অবনিত হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় এই এলাকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। উত্তরের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনও পানিবন্দী সাধারণ মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, দেশে ভারি বর্ষণ না হলেও উজানের পানির কারণে আগামী দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগবে বন্যার পানি নামতে। আর যদি ভারি বৃষ্টি যোগ হয় তাহলে এবার বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে ভারি বৃষ্টিপাতের কোন পূর্বাভাস নেই। তবে মৌসুমি বায়ু আবারও সক্রিয় হয়ে উঠছে। তারা জানিয়েছে, দু’একদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বাড়বে। সেক্ষেত্রে দেশের কোন কোন এলাকায় ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারি বৃষ্টিপাত হলে বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। ভারি বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে ১০দিন ধরে দেশের উত্তরের জেলাগুলো এখন পানির নিচে। এছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। যদিও এসব এলাকায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু বাসভাসি মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। এখনও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দী হয়ে পড়ছে মানুষ, দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সঙ্কট। রোগব্যাধিও ছড়িয়ে পড়ছে। বন্যা কবলিত এলাকায় সাপের উপদ্রব বেড়ে গেছে। পাশাপাশি গবাদিপশুর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে মহা সঙ্কটে পড়েছে এসব এলাকার লোকজন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছেÑ এ বছর একই সময়ে বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, বিহার, নেপাল, মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ভারতের অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং বিহারে বন্যার পানি নেমে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। ফলে ভাটির দেশ হওয়ার কারণে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হচ্ছে। তারা বলছেন, এমনিতেই মধ্য জুলাইয়ে প্রতিবছর উজান থেকে নেমে আসা পানি এবং বৃষ্টিপাতের কারণে দেশে বন্যা হয়। এবার ভারতের এসব রাজ্যে একসঙ্গে বন্যা হওয়ায় বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। উজান থেকে এত বেশি পানি আসছে যে, আর যদি বৃষ্টিপাত নাও হয় তাহলেও দু’সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগবে বন্যার পানি নেমে যেতে। তারা বলছে যমুনা, পদ্মা নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। অপরদিকে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি কমতে থাকায় উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা এবং ঢাকার চারপাশের নদ-নদী ছাড়া সব প্রধান নদ-নদীর পানি কমছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানি বাড়বে। সুরেশ্বর পয়েন্ট দিয়ে এই নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। পদ্মায় পানি বাড়ার কারণে মধ্যাঞ্চলের মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। মধ্যাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বন্যা আক্রান্ত হবে ফরিদপুর জেলা। তারা আরও জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। বগুড়া, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বন্যা পারিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। বর্তমানে যমুনা নদীর পানি ফুলছড়িতে ১২৯ সেন্টিমিটার, বাহাদুরাবাদে ১৩৭ সেন্টিমিটার, সারিয়াকান্দিতে ১১৬ সেন্টিমিটার, কাজিপুরে ১১১ সেন্টিমিটার ও সিরাজগঞ্জে ৯৩ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া ও চিলমারী পয়েন্টে এবং পদ্মা নদীর পানি গোয়ালন্দ ও ভাগ্যকূল পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ, কুশিয়ারার পানি শেরপুর-সিলেট, পুরনো সুরমার পানি দিরাই, তিতাসের পানি ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মেঘনার পানি চাঁদপুর, ধরলার পানি কুড়িগ্রাম, ঘাঘটের পানি গাইবান্ধা, করতোয়ার পানি চকরহিমপুর, আত্রাইয়ের পানি বাঘবাড়ি, ধলেশ্বরীর পানি এলাশিন পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
×