ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম শহরে ৫০০ কিলোমিটার এলাকার বৈদ্যুতিক তার যাবে মাটির নিচে

প্রকাশিত: ০৯:১১, ২০ জুলাই ২০১৯

 চট্টগ্রাম শহরে ৫০০ কিলোমিটার এলাকার বৈদ্যুতিক তার যাবে মাটির নিচে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নগরের বিভিন্ন সড়ক কিংবা গলিপথে ওপরের দিকে তাকালেই চোখে পড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে তারের জঞ্জাল। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে ওভারলোডিং, শর্ট সার্কিট ও আর্থিং। বিভিন্ন সংস্থার এসব তার একদিকে নগরবাসীকে হুমকির মুখে ফেলছে, অন্যদিকে নগরের সৌন্দর্যহানি হচ্ছে। ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট ক্যাবল অপারেটরদের তারের ভারে বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, অগ্নিদুর্ঘটনার ৭৫ শতাংশই বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় নানা সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। তবুও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এসব তার সরানোর ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেই। নগরে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অগ্নিকান্ডের বেশিরভাগই বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে ঘটেছে। ২০১৫ সালে ২০৬টি অগ্নিকান্ডে মারা গেছে ১০ জন। নষ্ট হয় ৪০ কোটি টাকার সম্পদ। ২০১৬ সালের ৫০০টির মতো অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৭ সালে সাড়ে ৪শ’ ও ২০১৮ সালে প্রায় ৪শ’টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলোতে তারের জঞ্জাল ঝুলছে। নিউমার্কেট, রেয়াজউদ্দীন বাজার, আগ্রাবাদ, চকবাজার, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, টাইগারপাস, জামাল খান, আন্দরকিল্লাসহ পুরো নগরজুড়ে চিত্র একই। বিভিন্ন সময়ে এসব তার ছিঁড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না। সেবা সংস্থাগুলোর দায়িত্বহীনতার কারণে নগরের ৭০ লাখ মানুষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ৬০ বর্গমাইলের নগরে পিডিবির ৩ হাজার কিলোমিটার বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। বড় ধরনের অগ্নিকা-ের ঘটনা রোধে সম্প্রতি ঝুলে থাকা এসব তার সরানোর নির্দেশনা দেয় আদালত। পরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সব তারই মাটির নিচে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বিউবো চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলও মাটির নিচে তার নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিতরণ) দক্ষিণাঞ্চল প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন বলেন, বিদ্যুতের খুঁটিতে ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট ক্যাবল অপারেটরদের তার টাঙিয়ে এ জঞ্জাল সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের তারগুলো সরিয়ে নিতে বলেছি, কিন্তু তা মানা হয়নি। নগরের কাজির দেউড়ী এলাকার বাসিন্দা মোঃ ইমরান জানান, গত ডিসেম্বরে বিজয়মেলা চলাকালে পুলিশ বক্সের পাশে সড়কে বৈদ্যুতিক তারে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। লোকজন দ্রুত আগুন না নেভালে সেদিন বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। মার্কেট ও বাসার সামনে তারের জঞ্জাল ঝুলছে। ভয়ে পথ চলতে হয় পথচারীদের। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, মাটির নিচে বিদ্যুতের তার নেয়া হলে অগ্নিকান্ডের ঘটনা কমে যাবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বর্ষায় তার ছিঁড়ে পড়ার ভয়ও থাকবে না। নান্দনিক শহর গড়ে তুলতে তারের জঞ্জাল সরানো জরুরী। প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন বলেন, প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম শহরে ৫০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মাটির নিচে নেয়া হবে বৈদ্যুতিক তার। পরে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা শহর ও উপজেলা শহরেও এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
×