ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবেশবান্ধব তিন কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ হচ্ছে পুরান ঢাকায় ॥ দশ তলার ভবনে

প্রকাশিত: ০৯:১০, ২০ জুলাই ২০১৯

পরিবেশবান্ধব তিন কমিউনিটি সেন্টার  নির্মাণ হচ্ছে পুরান ঢাকায় ॥ দশ তলার ভবনে

মশিউর রহমান খান ॥ সবুজে ঢাকা পরিবেশবান্ধব ও অগ্নিনির্বাপণের আধুনিক যন্ত্রপাতির সুবিধাসমৃদ্ধ নাগরিকবান্ধব নতুন তিনটি কমিউনিটি সেন্টার কাম মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। পুরাণ ঢাকার নাগরিকদের বিশেষ চাহিদার কথা চিন্তা করে লালবাগ, নাজিরাবাজারে কাজী আলাউদ্দীন রোড ও হাজারীবাগে এসব কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হচ্ছে। এই প্রথমবারের মতো এসব নতুন কমিউনিটি সেন্টারের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সর্বক্ষণিক যোগাযোগ বাড়াতে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। অল্প জমিতে অধিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যেই এক সময়ের শুধু কমিউনিটি সেন্টারের পরিবর্তে একই স্থানে নানা সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন মাল্টিপারপাস সেন্টার হিসেবে এসব ভবন গড়ে তোলা হবে। ডিএসসিসির পুরনো কমিউনিটি সেন্টারের জমিতেই এসব ভবন নির্মিত হবে। এসব কমিউনিটি সেন্টারে প্রবেশ পথেই রাখা হবে সবুজের সমারোহ। নানা প্রকারের ছোট ছোট গাছ লাগানো থাকবে প্রায় প্রতিটি ফ্লোরে। চারদিকে তাকালেই মিলবে সবুজের ছোঁয়া। ডিএসসিসি সূত্র জনকণ্ঠকে এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানায়, এসব ভবনে বিশেষভাবে ইনডোর গেমের ব্যবস্থা, সুইমিং পুল, নারী-পুরুষের জন্য পৃথক জিমের ব্যবস্থা থাকবে। যা ডিএসসিসির কোন কমিউনিটি সেন্টারে এর আগে কখনও ছিল না। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাগরিক চাহিদার কথা বিবেচনা করে এমন উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসসিসি। প্রকল্প সূত্র জানায়, প্রায় ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ তিনটি কমিউনিটি সেন্টার কাম মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমানে তিনটি ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। এ বছরের জুলাই থেকে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের কাজ ’২১ সালের জুন নাগাদ শেষ হবে। প্রকল্প সূত্র মতে, ডিএসসিসির ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী আলাউদ্দিন রোডে বা নাজিরাবাজারে যা মেয়র মোহাম্মদ হানিফ কমিউনিটি সেন্টার কাম মাল্টিপারপাস ভবন, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের খলিল সরদার কমিউনিটি সেন্টার ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের শায়েস্তাখান কল্যাণ কেন্দ্রে এই ভবন নির্মিত হচ্ছে। বর্তমানে তিনটি কমিউনিটি সেন্টারেই আধুনিক কমিউনিটি হল রুম, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, কাউন্সিলরের কার্যালয়, পাঠাগার, নারী-পুরুষের জন্য পৃথক শরীরচর্চা কেন্দ্র ও ইনডোর গেমস এবং ফুড কোডের বিশেষ ব্যবস্থাসহ পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা থাকবে। এসব মাল্টিপারপাস সেন্টারে শরীরচর্চার জন্য নারী-পুরুষের পৃথক পৃথক ব্যায়ামাগার (জিম) নির্মাণ করা হবে। এসব জিমে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সুবিধাসম্পন্ন ব্যায়ামের যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হবে। বর্তমানে কোন কমিউনিটি সেন্টারেই সবুজের ছোঁয়া নেই বললেই চলে। নতুন এসব ভবনে ঢোকার পথেই সবুজ বৃক্ষাদি লাগানো হবে। প্রতিটি ফ্লোরের বিভিন্ন স্থানে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হবে। পরিবেশ রক্ষার্থে নতুন প্রতিটি কমিউনিটি সেন্টার কাম মাল্টিপারপাস ভবনে সবুজ পরিবেশকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এছাড়া হঠাৎ যে কোন সময় লেগে যাওয়া আগুনের হাত থেকে বাঁচতে ভবনের নিচে ও সামনে বিশেষ জলাধারের ব্যবস্থা থাকবে। পুরাণ ঢাকায় পানির অনেক সমস্যা থাকায় যে কোন অগ্নি দুর্ঘটনার সময় পানি পেতে বিশেষ পানির ট্যাঙ্কার স্থাপন করা হবে। যাতে আগুন লাগলে অন্যত্র যেতে না হয়। মূলত নাগরিক চাহিদার কথা বিবেচনা করে ও ডিএসসিসির রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে এসব ভবন কার্যকরি ভূমিকা পালন করবে। ডিএসসিসিতে বর্তমানে ৪৬ কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ কমিউনিটি সেন্টারেই নিজস্ব পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। দু’একটি কমিউনিটি সেন্টারের পার্কিং ব্যবস্থা থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। পার্কিংয়ের যথেষ্ট জায়গা না থাকা এবং সড়কের প্রশস্ততা কম থাকায় অনেকেই এসব সেন্টার ভাড়া নিতে তেমন একটা আগ্রহ দেখান না। নতুন এসব সেন্টারে গাড়ি পার্র্কিংয়ের বিশেষ সুবিধা থাকবে। অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ পুরান ঢাকায় বেসরকারী বা ব্যক্তিমালিকানাধীন অনেক কমিউনিটি সেন্টার থাকলেও সরকারী কোন কমিউনিটি সেন্টার নেই। এলাকাবাসী বাধ্য হয়েই অধিক অর্থ ব্যয়ে বিয়ে সাদিসহ সামাজিক নানা অনুষ্ঠান ওসব সেন্টারে করতে বাধ্য হচ্ছেন। বেসরকারী কমিউনিটি সেন্টারের ভাড়া সরকারী সেন্টারের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় মধ্যবিত্ত বা ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বিয়ে জন্মদিন তথা কোন প্রকার সামাজিক অনুষ্ঠান পালন করতে তেমন একটা সাহস পান না। এসব শ্রেণীর বাসিন্দার সুবিধার কথা চিন্তা করেই নতুন কমিউনিটি সেন্টারগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। স্বল্প ব্যয়ে ও অধিক সুবিধাসম্পন্ন এসব সেন্টার চালু করা গেলে নাগরিকদের অনেকটা স্বস্তি মিলবে। বাবা ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের নামে পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোডে কমিউনিটি সেন্টার কাম মাল্টিপারপাস ভবনটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন মেয়র সাঈদ খোকন। ১ বিঘা জমির ওপর ভবনটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১ কোটি টাকা। নির্মাণের প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পরবর্তীতে ভেতরের ডেকোরেশনসহ আধুনিক সুবিধাযুক্ত করে সর্বমোট ৬১ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। তবে ১০ তলার এই মাল্টিপারপাস সেন্টারটির নিচে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। প্রকল্প সূত্র জানায়, মেয়রের কাছে এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ওপরের তলায় একটি সুইমিং পুলও স্থাপন করা হবে। তবে ভবনটিতে পার্কিং স্পেস বাড়ানো অতি জরুরী। বর্তমানে ভবনটির পাইলিংয়ের কাজ চলছে। ডিএসসিসির ২২ নম্বর ওয়ার্ডের হাজারীবাগের খলিল সরদার কমিউনিটি সেন্টারটিকে নতুন মাল্টিপারপাস ভবন হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে। পুরনো এই কমিউনিটি সেন্টারটি ভেঙ্গে সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে সর্বাধুনিক সুবিধার ১০ তলার মাল্টিপারপাস ভবন। এ ভবনে ইনডোর গেমের ব্যবস্থা রাখা হবে। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে লালবাগের শায়েস্তা খান কল্যাণ কেন্দ্রটি ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। আগের র‌্যাব ২০-এর কার্যালয় এখান থেকে শহীদনগর কমিউনিটি সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক আবুল হাশেম জনকণ্ঠকে বলেন, নাগরিকদের স্বার্থে পুরনো ঢাকায়ই আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন পরিবেশবান্ধব ও অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলায় সক্ষম এমন তিনটি কমিউনিটি সেন্টার কাম মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব সবুজে ঘেরা আধুনিক এসব ভবনের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। জুলাই থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ ’২১ সালের জুলাইয়ে শেষ হবে। তিনটি মাল্টিপারপাস ভবনে গার্ডেনসহ পরিবেশ সহায়ক সব কিছু রাখা হবে। ভবনগুলোর নক্সা অনুযায়ী অতিথিরা সেখানে এলেই প্রকৃতির ছোঁয়ায় তাদের মন সতেজ হয়ে উঠবে। পুরনো কমিউনিটি সেন্টারের জমিতেই প্রায় ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব কমিউনিটি সেন্টার কাম মাল্টিপারপাস ভবন হচ্ছে।
×