ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হোক প্রতিবাদ ॥ নারী ও শিশু নির্যাতন

প্রকাশিত: ১২:০২, ১৯ জুলাই ২০১৯

হোক প্রতিবাদ ॥ নারী ও শিশু নির্যাতন

সম্প্রতি আমাদের দেশে নারী ও শিশুধর্ষণে যেন বর্ধিতমাত্রা পরিলক্ষিত হচ্ছে। শিশুধর্ষণে মেয়ে-শিশু এবং ছেলে-শিশু উভয়ই অন্তর্ভুক্ত। তবে মেয়ে শিশুর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি এবং তাদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক ক্ষতির পরিমাণও অনেকগুণ। এরূপ পরিস্থিতিতে মানুষের মনে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, কেন এমনটা হচ্ছে? এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলে যে বিষয়গুলো সহজেই চোখে পড়ে সেগুলোর অন্যতম হলো সামাজিক অস্থিরতা। এই অস্থিরতায় যুবসমাজ যেমন সংক্রমিত, তেমনি মধ্যবয়স্ক ও প্রৌঢ়ের মধ্যেও এর প্রভাব বিস্তার করতে দেখা যাচ্ছে। অবাধ তথ্যপ্রবাহের দরুন ইন্টারনেট, ফেসবুক কিংবা দেশী-বিদেশী বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে যৌন উত্তেজনাপূর্ণ ছবি দেখে অনেকে তাদের লালসা চরিতার্থের পথ খুঁজে ফেরে। ফলে বিকৃত রুচি ও মানসিকতাসম্পন্ন এসব লোকের সহজ শিকারে পরিণত হয় নিরীহ নারী কিংবা কোমলমতি শিশুরা। নিকটাত্মীয়, প্রতিবেশী, দায়িত্বপ্রাপ্ত অভিভাবক বা কর্তৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক যেমন স্কুল-কলেজের শিক্ষক, মাদকাসক্ত ব্যক্তি দ্বারা ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। বিস্ময়কর হলেও, প্রায়শ পরিবারের কর্তা বা অভিভাবককেও নিজ সন্তানকে ধর্ষণে প্রবৃত্ত হতে দেখা যাচ্ছে। আজকাল পরিবার থেকে প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন, বিনোদনকেন্দ্র এসব স্থানের কোথাও যেন নারী ও শিশুর নিরঙ্কুশ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাওয়া দায়। স্কুল-কলেজের কিশোরী, তরুণীরা এই ধর্ষণের শিকার বেশি হচ্ছে। ধর্ষণ শুধু এখন আর নির্যাতনেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, ক্ষেত্রবিশেষে ধর্ষিতা নারী বা শিশুর প্রাণহানিও ঘটতে দেখা যাচ্ছে। সংবাদমাধ্যমে ধর্ষণের যেসব খবর আসে তা শুনে শিউরে উঠতে হয়। আট মাসের শিশু থেকে শুরু করে প্রায় ষাট বছরের বৃদ্ধাও ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না আজকাল। আর প্রতিটি ধর্ষণকাহিনী নির্মমতা ও নৃসংসতায় যেন একটি অপরটিকে হার মানায়। এসব খবর যখন শুনি তখন হতবাক হয়ে ভাবি, কোথায় বাস করছি আমরা ! তবে এ ধরনের অপরাধ দমনে দেশে এ সংক্রান্ত আইন নেই তা বলা যাবে না। বরং আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের তুলনায় আমাদের দেশের আইন তুলনামূলক কঠোর। আমাদের দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত আইনে যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে তবে সে যাবজ্জীবন কারাদ-ে দ-িত হবে। আবার ধর্ষণ বা পরবর্তী অন্য কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটলে ধর্ষকের মৃত্যুদ- বা যাবজ্জীবন কারাদ- হবে। একই সঙ্গে জরিমানার কথাও সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে। তারপরও কেন এর প্রবণতা হ্রাস পাচ্ছে না, এর মূলে শুধুই কি শিক্ষার অভাব, না অন্য কিছু? উত্তর খুঁজলে প্রভাবশালীদের ক্ষমতার দাপট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সততার অভাব, নির্যাতিত পরিবার ও সামগ্রিক মানুষের সচেতনতারও অভাব প্রভৃতি কারণ উঠে আসে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেকেই নিজ স্বার্থ রক্ষায় অপরাধীদের পক্ষ অবলম্বন করে বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি করে থাকে। আবার ত্রুটিপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার কারণেও অনেক সময় ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দোষী প্রমাণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এতে আসামিরা সাহস পেয়ে আরও উৎসাহী হয়ে ওঠে। কোন ভয়ই তাদের ভীত করতে পারে না। ফলে ভুক্তভোগীরা সঠিক বিচার পায় না। ক্ষেত্র বিশেষে অনেকে ধর্ষণের শিকার হয়ে বছরের পর বছর ঘুরে ন্যায়বিচার পায় না, অনেকে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ মাথায় নিয়ে বছরের পর বছর হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক সহায়তা না পেয়ে ভিকটিমের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার আতঙ্ক তাড়া করে। কত ঘটনা যে ধামাচাপা পড়ে যায় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ধর্ষণকারী বিকৃত রুচিসম্পন্ন এসব লোকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অপরাধীরা যথাযথ শাস্তি না পাওয়ায় অন্যরাও অপরাধ প্রবণতায় জড়িয়ে যেতে উৎসাহ বোধ করছে। সামাজিক এই অবক্ষয় কোনভাবেই আমাদের কাম্য নয়। এর থেকে পরিত্রাণে সামাজিক সচেতনার পাশাপাশি তুমুল প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে আমাদের সকলের অংশগ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
×