ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসূতি মায়ের নিরাপদ সময়

প্রকাশিত: ১২:০২, ১৯ জুলাই ২০১৯

 প্রসূতি মায়ের নিরাপদ সময়

মাতৃত্ব যে কোন মেয়ের চিরায়তবোধ আর আজন্ম লালিত স্বপ্ন সেই শৈশব থেকে কল্পনায় জাল বোনা মায়ের স্নিগ্ধ অনুভূতিতে শিশুকন্যা তার ভাবী জীবনকে গড়ে নেয়। স্বাপ্নিক আবিষ্টতা যখন বাস্তবের দরজায় কড়া নাড়ে সেই সুবর্ণক্ষণে কন্যা সন্তানটি তার নবজীবনের দ্বার খুলতে প্রস্তুত কিনা তাও গভীরভাবে চিন্তার বিষয়। কল্পনার আকাশে উড়তে থাকা স্বপ্ন যখন কঠিন মাটিতে পা রাখে তেমন অনুভবে একটি মেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়ে। বাস্তব জীবন যখন তাকে মা হওয়ার স্বপ্ন জগতে পৌঁছে দেয় সেখানে তার মানসিক এবং শারীরিক সক্ষমতা অত্যন্ত সচেতনতায় ভাবার অবকাশ দাবি করে। প্রথমত আমাদের দেশে এখনও বাল্য বিয়ে সামাজিক অভিশাপ হয়ে অবোধ বালিকাদের জীবনকে অসহায় করে তুলছে। আর বাল্য বিয়ে মানেই অকাল মাতৃত্ব এবং অধিক সন্তান। যা কোন মেয়ের সুরক্ষা কিংবা পরিবার সীমিত রাখতে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক। ছোট পরিবার শুধু ব্যক্তিক জীবনেই নয় জাতীয় পর্যায়েও এক মূল্যবান বিষয়। ক্ষুদ্র ভূখ-টি এমনি অধিক জনসংখ্যার ভারে অনেক সমস্যাকে মোকাবেলা করে যাচ্ছে। যার কারণে জন্মহার কমানোর মধ্য দিয়ে সঙ্কটাপন্ন অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। একটি মেয়ে বয়োসন্ধিকালের চরম বিপন্ন অবস্থাকে পার করতে গিয়ে যে মাত্রায় হিমশিম খায় সেখানে নতুন করে বিয়ে নামক এক সামাজিক বন্ধনের আবর্তে ফেলে দেয়া কোনভাবেই সমীচীন নয়। তা ছাড়া অপরিণত শরীর ও মন বিয়ের মতো একটি গুরু দায়িত্ব ঘাড়ে নেয়ার মতো অবস্থায় থাকে না। এ ছাড়া আইন এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানেও নির্ধারিত করা থাকে নতুন সংসারে পা রাখার গুরুত্বপূর্ণ সময় আসলে কোন্টা। বিয়ের পরবর্তী পর্যায়ে কোন মেয়েকে সন্তান ধারণের ক্ষমতাও অর্জন করতে হয়। জঠরে সন্তান নিতে শারীরিক পরিপূর্ণতাও আবশ্যক। মা যদি শারীরিকভাবে পরিপূর্ণ অবস্থায় না থাকে তাহলে গর্ভের সন্তানটির স্বাস্থ্যও ঝুঁকিপূর্ণ হবে এটা অবধারিত। ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন পরিসংখ্যানে মাতৃমৃত্যু এবং শিশুমৃত্যুর সংখ্যা কমে আসলেও তা নির্ধারিত হারে এখনও পৌঁছাতে পারেনি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিকায়ন, ব্যক্তিক সচেতনতা সর্বোপরি স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নই শুধু নয় নতুন সময়ের ওষুধপত্রও মৃত্যুর হারকে কমিয়ে এনেছে। এর পরও দেখা গেছে হরেক রকম জটিলতায় প্রসূতি মায়ের নিরাপদে সন্তান জন্ম ও মা এবং শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা অনেক সময় কঠিন আবর্তে পড়ে যায়। এ ছাড়া পরিণত বয়সে বিয়ের পর যখন কোন মেয়ে গর্ভবতী হয় সেখানেও তার প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতিতে পরিস্থিতি হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়। পারিবারিকভাবে যথেষ্ট পরিচর্যার অভাব অনেক গর্ভবতী মাকে শঙ্কিত অবস্থায় নিয়ে যায় এমন নজির বাংলাদেশে কম নেই। বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন যথাযথ সাবধানতার অভাবে ও মাতৃত্বকালীন সময়টা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। মাও গর্ভের শিশুটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চিকিৎসকের পরামর্শ অত্যন্ত জরুরী। সুস্থ এবং স্বাভাবিক শিশু জন্ম দিতে মাকেও হতে হয় অনেক সতর্ক এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গভীর উপলব্ধিতে নিজের শিশুর ক্রান্তিকাল পার হওয়া। পারিবারিক নির্মল পরিবেশ প্রসূতি মায়ের যে সুরক্ষা দেয় তাও বিবেচনায় রাখা সঙ্গত। সবার আগে মাকেই সচেতন অনুভূতিতে তার গর্ভের সন্তানটিকে সমস্ত ঝুঁকি থেকে আগলে রাখতে হবে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যেরও বিশেষ দায়বদ্ধতা থাকে একটি সুস্থ সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখানোর প্রয়োজনীয় কর্মযোগের। পরিমিত বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাদ্য, প্রয়োজনীয় শ্রম এবং যথার্থ মানসিক প্রশান্তি যে কোন গর্ভবতী মায়ের জন্য অত্যন্ত জরুরী। শুধু তাই নয়, চলাফেরায়ও হতে হবে অনেক সতর্ক আর সাবধানী। সামান্য বিচ্যুতিতে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে সময় লাগে না। কোন এক অসতর্ক মুহূর্তে তা ঘটেও যায়। এমন সব অনাকাক্সিক্ষত বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে মাকেই বিশেষভাবে তার গর্ভকালীন সময় কাটিয়ে সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাতে প্রস্তুত হতে হয়। সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তান মাকে যে আলোকিত পথের সন্ধান দেয় সেখানেই মায়ের সব থেকে বড় সফলতা। যে সন্তানকে নিয়ে সেই আবাল্য স্বপ্ন গাঁথা সে যখন কোল আলো করে মাকে তার অস্তিত্ব জানান দেয় তার চেয়ে সুখকর আর আনন্দঘন মুহূর্ত অন্য কিছু হতে পারে না। তবে তাকে জগতের মুখ দেখাতে যে নয় মাস নয় দিন সযতেœ নিজের জঠরে লালন-পালন করতে হয় তাও এক অনন্য হৃদয়নিঃসৃত অনুভব। সুতরাং শিশুটির মায়ের দেহে বেড়ে ওঠার গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে মাকে যে মাত্রায় চারপাশের সুরক্ষিত বলয় তৈরি করতে হয় সেটাও শঙ্কিত অনুভবের এক আবশ্যকীয় পর্যায়। যে পর্বে মা ও শিশু দু’জনকেই সার্বিক উপযোগী কর্মযোগ নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে দেয়া কাছের মানুষদের গুরু দায়িত্ব। এমন দায়বদ্ধতাকে কোনভাবেই পাশ কাটানো যাবে না। অপরাজিতা প্রতিবেদক
×