ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাসের হার বেড়ে ৭৩ দশমিক ৯৩;###; জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৭ হাজার ২৮৬

সাফল্যের বিস্ফোরণ ॥ উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ১৮ জুলাই ২০১৯

সাফল্যের বিস্ফোরণ ॥ উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্রেডিং পদ্ধতির প্রথম বছর ২০০৩ সালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাঁচ লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৫ পেয়েছিল মাত্র ২০ জন। পাসের হার ছিল ৩৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ১৬ বছরের মাথায় এবার অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় পাসের হার যেমন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ তেমনি জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা চলে এসেছে ৪৭ হাজার ২৮৬ জনে। গত এক বছরের ব্যবধানেই পাসের হার বেড়েছে সাত দশমিক ২৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ এক বছরে বেড়েছে ১৮ হাজার ২৪ জন। কমেছে শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠান ও বেড়েছে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। ফলের এই চিত্রই বলে দিচ্ছে দেশের দশ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলে যথারীতি সাফল্যের বিস্ফোরণ ঘটেছে। পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিসহ সকল সূচকেই আগের সাফল্যকে ম্লান করে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। ফলের চিত্র বলছে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট ইউনিটের (বেডু) অধীনে খাতা মূল্যায়নে কঠোর ও কার্যকর পদ্ধতি চালুর পর পাসের হার বৃদ্ধিতে ছেদ পড়লেও এবার ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে পরীক্ষার্থীরা। কিন্তু শিক্ষার্থীদের এমন ফলের রহস্য কি সেই প্রশ্ন এবার সামনে চলে এসেছে। শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তা, পরীক্ষকসহ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কঠোর মনিটরিংয়ে শ্রেণীকক্ষে নিয়মিত শিক্ষা নিশ্চিত করা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ফলে প্রভাব ফেলেছে একথা ঠিক। তবে এক বছরের ব্যবধানেই ফলের এমন চিত্রের মূল কারণ হচ্ছে ইংরেজী ও আইসিটিতে পাসের হার বৃদ্ধি। পাশাপাশি মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার্থীদের ব্যাপক পাসের হার প্রভাব ফেলে ১০ বোর্ডের মোট ফলের চিত্রে। বিশেষজ্ঞরা ইংরেজী ও আইসিটিতে পাসের হার বৃদ্ধির বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, প্রতিবছর মূলত এ দুটি বিষয়ে বেশি শিক্ষার্থী ফেল করার কারণে মোট পাসের হার কমে যায় ব্যাপকভাবে। এবার দুটি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ভাল ফল পাল্টে দিয়েছে সার্বিক চিত্র। যদিও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দিপু মনি সংবাদ সম্মেলনে এমন ফলের কারণ হিসেবে বলেছেন, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা করে ভাল প্রস্তুতি ও নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ বেড়েছে। প্রশ্নপত্র সহজ বা কঠিন করায় পাসের হারে প্রভাব পড়েনি। শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করে ভাল প্রস্তুতি নিয়েছিল বলেই ভাল ফল হয়েছে। কয়েক বছর ধরেই লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ করা হচ্ছে। এবার লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৫৫ দিনের মাথায় বুধবার প্রকাশ করা হলো ফল। সকাল ১০টায় রীতি অনুসারে বোর্ড চেয়ারম্যানদের নিয়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলের কপি হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সারাদেশের ফল ঘোষণার কথা থাকলেও রাস্তায় ব্যাপক জ্যামের কারণে নির্দিষ্ট সময় ফিরতে পারেননি মন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও বোর্ড চেয়ারম্যানরা। ফলে সাড়ে ১২ টায় সংবাদ সম্মেলনের পর পরই সারাদেশের ফল উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা থাকলেও তা ঠিক রাখা সম্ভব হয়নি। উপমন্ত্রী ও বোর্ড চেয়ারম্যানদের অধিকাংশই রাস্তায় আটকে থাকায় তাদের ছাড়াই দুপুর সোয়া ১টায় সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দিপু মনি। কোন্ বোর্ডে কেমন ফল ॥ সাধারণ আট শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষায় এবার পাসের হারের দিক থেকে এগিয়ে কুমিল্লা বোর্ড, যেখানে পাস করেছে ৭৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। সবচেয়ে কম পাস করেছে চট্টগ্রাম বোর্ডে, ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ। তবে, জিপিএ ৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে আছে ঢাকা বোর্ড। ১০ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসের হার সবচেয়ে বেশি মাদ্রাসা বোর্ডে। এ বোর্ডে পাস করেছে ৮৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল তিন লাখ ৯৩ হাজার ৮৩৫ ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে দুই লাখ ৭৯ হাজার ৯৭৯ জন। পাসের হার ৭১ দশমিক ০৯ শতাংশ, গত বছর তা ছিল ৬৬ দশমিক ১৩ শতাংশ। এবার ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮ হাজার ১৮৭ জন, গত বছর পেয়েছিল ১২ হাজার ৯৩৮ জন। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৬৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয় হাজার ৭২৯ জন, গত বছর যা পেয়েছিল চার হাজার ১৩৮ জন। কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৬৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। কুমিল্লায় এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই হাজার ৩৭৫ শিক্ষার্থী, গত বছর তা পেয়েছিল ৯৪৪ জন। যশোর শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৬০ দশমিক ৪০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে পাঁচ হাজার ৩১২ জন, গত বছর তা পেয়েছিল দুই হাজার ৮৯ জন। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৬২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই হাজার ৮৬০ শিক্ষার্থী, গত বছর তা ছিল এক হাজার ৬১৩ জন। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭০ দশমিক ৬৫ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৭০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ২০১ জন, গত বছর যা পেয়েছিল ৬৭০ শিক্ষার্থী। সিলেট শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৬৭ দশমিক ০৫ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৬২ দশমিক ১১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৯৪ শিক্ষার্থী, গত বছর যা পেয়েছিল ৮৭৩ জন। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭১ দশমিক ৭৮ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৬০ দশমিক ২১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ৪৯ জন, গত বছর যা পেয়েছিল দুই হাজার ২৯৭ শিক্ষার্থী। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮২ দশমিক ৬২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ২৩৬ জন। গত বছর পাসের হার ছিল ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ বছর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার বেড়েছে। মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষায় পাসের হার ৮৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। গত বছর পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এবার জিপিএ ৫ পেয়েছেন দুই হাজার ২৪৩ শিক্ষার্থী। গত বছর ছিল এক হাজার ২৪৪ জন। এইচএসসি পরীক্ষায় এবার বিদেশের আটটি কেন্দ্রে অংশ নিয়েছিল ২৭০ পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ২৫৪ জন। পাসের হার ৯৪ দশমিক ০৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৬ জন। সাফল্যের পেছনে ॥ শিক্ষার্থীদের সাফল্য চমকে দিয়েছে সকলকে। কিন্তু এই সাফল্যের রহস্য কী? শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, কঠোর মনিটরিংয়ে শ্রেণীকক্ষে নিয়মিত শিক্ষা নিশ্চিত করা, বিজ্ঞান বিষয়ে ভাল ফল, নকল বিরোধী ব্যাপক প্রচার আজকের ভাল ফলের পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলছিলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরের ফলের সূচকে বেশকিছু ইতিবাচক লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে। পরীক্ষায় পাসের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানের পাশাপাশি মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায় পাসের হার গত বছরের চেয়ে বেশি। জেলা, উপজেলা সদরে শিক্ষার্থীরা ভাল করেছে। পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এ তথ্যগুলো খুবই ইতিবাচক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গৃহীত নানা পদক্ষেপ, শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকগণের অক্লান্ত প্রচেষ্টাসহ সমগ্র শিক্ষা পরিবারের সার্বিক সহযোগিতায় এ অবস্থায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। শিক্ষা পরিবারের সকলকে জানাচ্ছি অভিনন্দন। ]শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বোর্ডসমূহ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলে পরীক্ষার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ক্রমশ উন্নতির ধারা অব্যাহত রয়েছে। পরীক্ষার্থীদের বলব, যদি মূল্যবোধ তৈরি না হয় তা হলে শুধু বেশি নম্বর পেয়ে কি হবে, মানবিক গুণে গুণান্বিত হও, চারপাশে তাকাও- মানুষকে ভালবাস। নীতি-নৈতিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠো, স্বদেশপ্রেমে উজ্জীবিত হও, নিঃস্বার্থচিত্তে মানব কল্যাণে নিবেদিত হও। অভিভাবকদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, আপনার সন্তানকে অসুস্থ প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে দেবেন না, স্বার্থপর হিসেবে গড়ে তুলবেন না। দেশের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হওয়ার শিক্ষা যদি আপনার সন্তান না পায়, মনে রাখবেন এ শিক্ষা অর্থবহ হবে না, শিক্ষার আসল উদ্দেশ্যই বৃথা যাবে। যারা শিক্ষকতা পেশায় আছেন আপনাদের দায়িত্ব অনেক অনেক বেশি। শিক্ষার গুণগত পরিবর্তনে বিষয়ভিত্তিক মানসম্পন্ন শিক্ষাদানে আপনাদের ভূমিকাই প্রধান। মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক তৈরির ক্ষেত্রে আপনারাই রাখতে পারেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এক বছরের ব্যবধানে ফলের এমন পরিবর্তনের কারণ হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের ভাল প্রস্তুতি ও নকলমুক্ত পরিবেশে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ বেড়েছে। আবার যারা খারাপ পরীক্ষা দিয়েছে তারা এ দুটিতে পিছিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। প্রশ্নপত্র সহজ বা কঠিন করায় পাসের হারে প্রভাব পড়েনি। যারা ভাল প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে তারা ভাল করেছে, আর যাদের প্রস্তুতি দুর্বল ছিল তারা ভাল ফল পায়নি। তবে যে সকল বোর্ড ভাল করছে তারা আরও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, যাতে তাদের ভাল ফলের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। তবে শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগের বছর পাসের হার কমার পেছনে যেমন প্রভাব ছিল ইংরেজী, আইসিটি ও বিজ্ঞান বিভাগের খারাপ ফল এবার তেমনি ভাল ফলের পেছনে কাজ করেছে ওই বিষয়গুলোর পাসের হার বৃদ্ধি। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাবকমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক জনকণ্ঠকে বলেছেন, আসলে এবার পাসের হার অনেক বেড়েছে, জিপিএ-৫ও বেড়েছে। অন্যান্য সূচকেও ভাল ফল করেছে শিক্ষার্থীরা। তার অনেক কারণ থাকলেও সবচেয়ে বড় কারণ হলো দুটি বিষয়ে ভাল ফল। ইংরেজী ও আইসিটিতে পাসের হার বৃদ্ধির কারণেই এবার সার্বিক ফল ভাল হয়েছে। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আসলে এ দুটি বিষয়ে ফেল করার মাত্রাটা বেশি থাকে। এ দুটি বিষয়ে ফেল করার সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে গত বছরও পাসের হার কমে যায় অনেক বেশি। মূলত এ দুটি বিষয়ে পাসের হার যতটুকু বাড়ে সকল বোর্ডের পাসের হার তাতে বেড়ে যায় তার কমপক্ষে দুই গুণ। এবার আগের বছরের তুলনায় ইংরেজীতে প্রায় প্রত্যেক বোর্ডেই এক শতাংশেরও বেশি পাস করেছে। আর আইসিটিতে পাস করেছে প্রায় ৭ শতাংশের বেশি। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক তপন কুমার সরকারও বলছিলেন, দুটি বিষয়ে এবার শিক্ষার্থীদের পাসের হার অনেক বেড়েছে। এ দুটি বিষয়ে ফেল করার কারণেই দেখা যায় বিভিন্ন সময় সার্বিক ফল খারাপ হয়। এবার যেহেতু দুটি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা ভাল করেছে সেহেতু সার্বিক ফলেও তার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। এছাড়া বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরাও তাদের বিষয়গুলোতে আগের বছরের চেয়ে ভাল করেছে। এটা ফলে প্রভাব ফেলেছে। এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, ইংরেজী ও আইসিটি বিষয়টি মানবিক ও বাণিজ্যের শিক্ষার্থীদের ফলে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এ দুটি বিষয়ে তারা ভাল করলে সার্বিক পাসের হারও বেড়ে যায়। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক সৈয়দ সাদিক জাহিদুল ইসলাম বলছিলেন, আসলে দুই বা তিনটি বিষয়ে বেশি খারাপ করলেই সাধারণত সেই বছর ফল বেশি খারাপ হয়। ইংরেজী ও আইসিটিতে ফল খারাপ হলে তার প্রভাব পড়ে সার্বিক ফলে। এবার যেহেতু সেই দুটি বিষয়ে পাসের হার বেড়েছে সে কারণে সার্বিক ফলও ভাল হয়েছে। এছাড়া কঠোর মনিটরিংয়ে শ্রেণীকক্ষে নিয়মিত শিক্ষা নিশ্চিত করা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ফলে প্রভাব ফেলেছে বলে আমি মনে করি। পাশাপাশি মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার্থীদের ব্যাপক পাসের হার প্রভাব ফেলে ১০ বোর্ডের মোট ফলের চিত্রে। এইচএসসিতে এবার পাসের হারে সবার সামনে আছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড। এ বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ আবদুস সালাম বলছিলেন, যেসব বিষয়ে আগে আমাদের শিক্ষার্থীরা খারাপ ফল করেছে সেসব বিষয়ে আমরা বেশ কিছু কাজ করেছি। শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষকদের নিয়ে কর্মশালাসহ নানা কাজ আমরা করেছি। কি কি কারণে আমাদের খারাপ ফল হয়েছে তা চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নেয়ার কারণেই এবার পাসের হার বেড়েছে। এদিকে বিভিন্ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বোর্ডে ইংরেজীতে এবার পাস করেছে ৭৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ, আগের বছর ছিল ৭৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। রাজশাহী বোর্ডে ৯৬ দশমিক ৮৬ শত্ংাশ, গত বছর ছিল ৭২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। কুমিল্লা বোর্ডে ৯৬ দশমিক ৪৬, গত বছর ছিল ৭৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। যশোর বোর্ডে ৯৫ দশমিক ২২, গত বছর ছিল ৬৫ শতাংশ। চট্টগ্রাম বোর্ডে ৯৩ দশমিক শূন্য নয়, গত বছর ছিল ৭৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। বরিশালে ৯১ দশমিক ৬১, গত বছর ছিল ৭১ দশমিক ০৬ শতাংশ। সিলেট বোর্ডে ৯২ দশমিক ৪৮, গত বছর ছিল ৮২ দশমিক ৩৩ শত্ংাশ। দিনাজপুর বোর্ডে ৯৫ দশমিক ১৩, গত বছর ছিল ৬৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। ঢাকা বোর্ডে আইসিটিতে এবার পাস করেছে ৯০ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ, আগের বছর ছিল ৮২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। একইভাবে তারতম্য লক্ষ্য করা যায় অন্যান্য বোর্ডের ফলেও। পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন শুরু আজ থেকেই ॥ পরীক্ষার্থীদের ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে। আগামী ২৪ জুলাই পর্যন্ত পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করা যাবে। পত্র প্রতি আবেদন ফি নির্ধারিত হয়েছে ১৫০ টাকা। এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুধু টেলিটক সিম থেকেই ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করা যাবে। প্রথমে মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিনটি অক্ষর লিখতে হবে। এরপর স্পেস দিয়ে রোল লিখে আবার স্পেস দিয়ে Subject Code লিখে 16222 নম্বরে Send করতে হবে। (উদাহারণ: RSC DHA 1234 101 লিখে 16222 নম্বরে পাঠাতে হবে)। একাধিক বিষয়ের উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণে কমা দিয়ে সাবজেক্ট কোড এসএমএস করতে হবে। যেমন, 101, 102, 103 ইত্যাদি । মেসেজ সেন্ড হলে টেলিটক থেকে পিন নম্বরসহ একটি এসএমএস আসবে। পিন নম্বরটি সংগ্রহ করতে হবে। এরপর আবারও মেসেজ অপশনে RSC লিখে স্পেস দিয়ে YES লিখে স্পেস দিয়ে ‘পিন নম্বর’ লিখে স্পেস দিয়ে নিজস্ব মোবাইল নম্বর লিখে 16222 নম্বরে সেন্ড করতে হবে। এবার টেলিটক থেকে ট্র্যাকিং নম্বরসহ একটি মেসেজ আসবে। ট্র্যাকিং নম্বরটি সংগ্রহ করতে হবে। (উদাহারণ: RSC YES PIN-NUMBER MobileNumber লিখে 16222 নম্বরে পাঠাতে হবে।) আবেদনের জন্য ১৫০ টাকা টেলিটক নম্বর থেকে কেটে নেয়া হবে। দ্বিপত্র বিশিষ্ট বিষয়ে একটি বা দুইটি পত্রে আবেদন করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া ফল পুনঃনিরীক্ষণে কোন ম্যানুয়াল আবেদন গ্রহণ করা হবে না বলেও জানিয়েছে ঢাকা বোর্ড।
×