ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে ভাসছে ইংল্যান্ড

প্রকাশিত: ১১:৫০, ১৭ জুলাই ২০১৯

বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে ভাসছে ইংল্যান্ড

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে ভাসছে ইংল্যান্ড। ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ড। অথচ শিরোপা ছোঁয়ার জন্য তাদের অপেক্ষাটা ৪৪ বছরের। ক্রিকেটের মক্কা লর্ডসে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল টাই হওয়ার পর সুপার ওভারও টাই হলে বাউন্ডারিতে এগিয়ে থাকার সুবাদে আসে তাদের ঐতিহাসিক সেই মুহূর্ত। ১২তম বিশ্বকাপের শিরোপা উঁচিয়ে ধরে ইয়ন মরগান ও তার দল। ইংল্যান্ডই একমাত্র দেশ যারা ফুটবলের পর ক্রিকেটেও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলো। স্বভাবতই আনন্দের জোয়ারে ভাসছে ইংলিশরা। রাজধানী লন্ডন ছাপিয়ে উদ্যাপনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বৃটেনে। বিয়ারের চিয়ার্স, নাচে-গানে মরগান, বেন স্টোকস, জো রুটরা লর্ডসেই আলোর রোশনাই ছড়িয়েছেন। মাঠের বাইরে উৎসবের সে রং ছড়িয়ে পড়েছে গোটা গ্রেট ব্রিটেনে। ট্রেনে, বাসে, টিউবে, রাস্তায় সর্বত্রই চলছে বিশ্বকাপ জয়ের উল্লাস। পুরো ইংলিশ জাতি যেন এই উদ্যাপনের অপেক্ষায় ছিল। সবাই যেন মিলেমিশে একাকার। লর্ডস থেকে প্রথমে বিশ্বকাপ জয়ের এই উৎসব ছড়িয়ে পড়ে ওভালে। যেখানে মূল আয়োজনটি করে ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। ওভাল ক্রিকেট গ্রাউন্ডে চলে উচ্ছ্বাসের জোয়ার। ঝাঁক বেঁধে আনন্দে রাস্তার এদিক ওদিক দৌঁড়াচ্ছে তরুণ, বুড়ো, নারী, পুরুষ সবাই এক সঙ্গে। সবার একটি গন্তব্য। তা হচ্ছে ওভাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম। বাস, ট্যাক্সি চলাচলের মধ্যেও চলে তাদের ‘ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান’ খেলা। একটি ক্রিকেট ম্যাচ কতটা রোমাঞ্চের হতে পারে, কতটা রং ছড়াতে পারে, কতটা রুদ্ধশ্বাস হতে পারে, কতটা নাটকীয় হতে পারে তা গত রবিবার দেখিয়ে দিয়েছে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। আগেই ঘোষণা দিয়েছিল ইংলিশ সমর্থকরা বিশ্বকাপ জয়ের পর জাতীয় বীরদের নিয়ে প্যারেড করবে বার্মি-আর্মিরা। তবে সমর্থকদের সঙ্গে জয় উদ্যাপন করেই বসে থাকেনি ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। খেলোয়াড়দের বীরের মতো সংবর্ধনা দিতে ডাউনিং স্ট্রিটে মঞ্চ প্রস্তুত করে তারা। খেলোয়াড়দের পাশাপাশি দেশের মানুষকে সেই গৌরবের অংশীদার করতে দ্য ওভালে বিজয় প্যারেডের আয়োজন করে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। স্বপ্নের ট্রফি নিয়ে ইয়ন মরগানের নেতৃত্বে সমর্থকদের সঙ্গে উদ্যাপন করতে আসেন ইংলিশ খেলোয়াড়রা। কথা বলা, ছবি তোলার পাশাপাশি এক সঙ্গে নেচে গেয়ে মেতে ওঠেন কর্মকর্তা, সমর্থক সবাই। সেখানে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন অধিনায়ক মরগান, ফাইনালের নায়ক বেন স্টোকস, জোফরা আরচার, লিয়াম প্ল্যানকেট, আসরজুড়ের দুর্দান্ত ব্যাটিংশৈলী উপহার দেয়া জো রুট, জেসন রয় সবাই। সুপার ওভারে ইংল্যান্ডের হিরো জোফরা আর্চার বলেন, ‘সকাল বেলা খেলার হাইলাইটস এবং স্টাফদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করার পর আমি মনে করি, ফাইনালের দিন যা করেছি তার প্রভাবটা এখন বুঝতে পারছি আমরা। বড় একটা দিন ছিল রবিবার। সবাই চাইছিল আমি যেন ভাল করি। তাই আমি কাউকে নিচু করতে চাইনি। ছক্কা খাওয়ার পর কিছুটা চাপে পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি আমার পরিকল্পনা নিয়ে অনড় ছিলাম। শেষ পর্যন্ত এটাই কাজে দিয়েছে। জো রুটের অভিব্যক্তি, ‘সম্ভবত ক্রিকেটের অন্যতম সেরা একটি ম্যাচ ছিল এটি। আর এর ভাগিদার ছিলাম আমরা। আমি মনে করি না এই ম্যাচে যা ঘটেছে তাতে আপনি চূড়ায় উঠতে পারবেন। তবে আমার মতে এটা ছিল ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ম্যাচ।’ যে যেভাবে পারছেন নেচে, গেয়ে, হুল্লোড় করে বিশ্বকাপ শিরোপাকে অভিবাদন জানাচ্ছেন। কেবল ওভাল গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠাস্থলই নয়, অভিবাদন ছিল লন্ডনের টিউবেও। সাদা জামা, সাদা প্যান্ট ও মাথায় ক্যাপ পরে গিটার হাতে বন্ড স্ট্রিটের আন্ডারগ্রাউন্ডে যাত্রীদের গান শোনাচ্ছেন এক ইংলিশ। বিনিময়ে কিছুই নিচ্ছেন না। আনন্দের ক্ষণে গান ফ্রি। যিনি বারবারই বলছিলেন, ‘নো পেমেন্ট টুডে। ইংল্যান্ড ওন ওয়ার্ল্ডকাপ।’ যাত্রীরাও যেন ঠিক এই অপেক্ষায় ছিলেন। হয়তো কাজ সেরে বা কেউ কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছেন বলে টিউবে চেপে বসেছেন। আর সেখানেই বেজে উঠছে নতুন দিনের গান। গায়কের সঙ্গে নেচে, গেয়ে তারাও নতুন দিনকে স্বাগত জানাচ্ছেন। ইংল্যান্ডই একমাত্র দেশ যারা ফুটবলের পর ক্রিকেটে বিশ্বকাপ জয় করল। প্রায় একইরকম রুদ্ধশ্বাস নাটকীয় ফাইনালে। ১৯৬৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আর ২০১৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ। দুই বিশ্বকাপের শিরোপা গেছে আয়োজকদের হাতে। ইংল্যান্ডের হাতে। দুই বিশ্বকাপের ফাইনালটা শেষ হয়েছে রোমাঞ্চকরভাবে। ফুটবলের পর ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ী একমাত্র দেশ হিসেবে অনন্য মাইলফলক গড়ল ইংল্যান্ড। টাইম মেশিনে একটু পেছনে ফেরা যাক। ১৯৬৬ সাল। জুলাই মাস। ঠিক ৫৩ বছর আগে ফুটবলের সর্বোচ্চ মর্যাদার আসরটির আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড। সেবার পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছিল ইংল্যান্ড। সেটাও কি নাটকীয়ভাবে। এবার ঠিক ৫৩ বছর পর ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসর ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এবারও আয়োজক ইংল্যান্ড। এবারও কি নাটকটাই না হলো ফাইনালে। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ঘরে রেখে দিয়েছে ইংল্যান্ড। দুইটাই লন্ডনের মাঠে। ফুটবলটা ওয়েম্বলিতে। ক্রিকেটে লর্ডসে। দুই বিশ্বকাপ জিতে ইংল্যান্ড অনন্য মাইলফল ছুঁয়েছে। একমাত্র দল হিসেবে ফুটবল ও ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মঞ্চে বিশ্বকাপ জিতেছে। এমন কীর্তি আর কোন দলেরই নেই। কি নাটকীয় রোমাঞ্চ ছড়িয়ে দুই বিশ্বকাপ জিতেছে ইংল্যান্ড। ফুটবলে নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ২-২ ব্যবধানে অমীমাংসিত ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে (৩০ মিনিট) জিতে নেয় ইংল্যান্ড। ওই ম্যাচে তিনবার বল জালে জড়ান জিওফ হার্স্ট। বিশ্বকাপের অষ্টম আসরের শিরোপা নেন ববি মুর। অর্ধশত বছর পর ক্রিকেট বিশ্বকাপের ১২তম আসরে শিরোপা ঘরে তুলল ইংল্যান্ড। এবারও কত নাটক ছড়িয়ে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা ম্যাচটাই দেখলো ক্রিকেটভক্তরা। নির্ধারিত ম্যাচে ২৪১ করেছে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। সুপার ওভারের লড়াইয়েও ১৫ রানের ড্র রোমাঞ্চ। শেষে বাউন্ডারির হিসেবে ম্যাচটি জিতে নেয় ইয়ন মরগানের ইংল্যান্ড।
×