ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অসুস্থ ফুটবলার লুৎফরকে ৩০ লাখ টাকা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ১৭ জুলাই ২০১৯

অসুস্থ ফুটবলার লুৎফরকে ৩০ লাখ টাকা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ জীবনের শেষপ্রান্তে এসে যখন থমকে গেছে যশোরের অহঙ্কার স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম সদস্য লুৎফর রহমানের চিকিৎসা। ঠিক তখনই পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত সোমবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে লুৎফর রহমানের স্ত্রী মাজেদা রহমানের হাতে ২৫ লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র ও ৫ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লুৎফর রহমানের স্ত্রী মাজেদা রহমান বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী আমার স্বামীকে যোগ্য সম্মান দিয়েছে, এতকাল মানুষটা বিছানায় পড়ে আছে যশোরের কোন নেতা, এমপি, খেলোয়াড় কেউ এসে খবর নেননি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হারুণ আর রশীদ ও যশোরের সন্তান সাবেক জাতীয় দলের ফুটবলার ও বিকেএসপির সাবেক চীফ কোচ কাওছার আলী। লুৎফর রহমান যশোর শহরের লোন অফিস পাড়ার ১৯৫১ সালে জন্মগ্রহণ কারেন। তার বাবা বরকতুল্লাহ ও মাতা রাবেয়া বেগম। লুৎফর রহমান ছোটবেলা থেকে ফুটবল এবং হকি খেলায় আগ্রহী ছিলেন। যশোর জেলা স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় ফুটবলে শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান। তিনি ১৯৬৫ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত যশোর জেলা ফুটবল দলের হয়ে নিয়মিত খেলায় অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি ১৯৬৮তে পূর্ব পাকিস্তান বোর্ড দলের পক্ষে পশ্চিম পাকিস্তানের সম্মিলিত বোর্ডের বিরুদ্ধে খেলেছিলেন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা ওয়ারী ক্লাবে যোগ দেন এবং ১৯৭০ সালে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। এরই মধ্যে দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। তখন দেশের স্বাধীনতার সপক্ষে জনমত সৃষ্টিতে খেলোয়াড়দের ডাক দিয়ে সংঘবদ্ধ করার উদ্যোগ নিলেন কয়েকজন তরুণ- আলী ইমাম, প্রতাপ, প্যাটেল, জাকারিয়া পিন্টু, আশরাফ ও মুজিবনগরে গঠিত বাংলাদেশ ক্রীড়া সমিতির সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ১৬টি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলে ৩ লাখ টাকা তুলে তৎকালীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের কাছে দিয়েছিলেন। ১৬টি খেলার মধ্যে ১২টি খেলায় জয়লাভের স্মৃতিচারণ করেন তিনি। সব থেকে গৌরবময় খেলাটি ছিল ২৪ জুলাই ভারতের নদীয়া স্টেডিয়ামে। ওইদিন ছিল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের প্রথম খেলা। খেলোয়াড়রা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে তারা মাঠে যাবে। এরপর মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের তালে তালে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে হবে। বিষয়টি নদীয়া ক্রীড়া সমিতিকে যথাসময়ে অবহিত করা হয়। এই খেলাকে উপলক্ষ করে নদীয়া স্টেডিয়ামে ব্যাপক ফুটবলপ্রেমী জড়ো হয়। অন্যদিকে স্বাধীন বাংলা বেতার মারফত খেলার বিষয়ে অবহিত হয়ে কুষ্টিয়া জেলা থেকে উৎসাহী ক্রীমামোদীরা বিপুল সংখ্যায় মাঠে সমবেত হলেন। কিন্তু সমস্যা বাধলো বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন নিয়ে। ভারতের সরকার তখন বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। খেলার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যায়। কিন্তু পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতের বিষয়ে নিষ্পত্তি ছাড়া বাংলাদেশের ফুটবল দল মাঠে নামবে না কিছুতেই। অবশেষে নদীয়ার জেলা প্রশাসক স্বপ্রণোদিত হয়ে ভারত ও বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর বিষয়ে সম্মত হয়। সেদিন পিন্টু-প্রতাপের হাতে ধরা মানচিত্র খচিত পতাকা উড়লো বিদেশের মাটিতে। এই খেলার মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা প্রথমবারের মতো বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে অন্য একটি স্বাধীন দেশের পতাকার সমমর্যাদায় উত্তোলিত হয়। এ ঘটনার পর নদীয়ার জেলা প্রশাসক সাময়িক বরখাস্ত হন এবং নদীয়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার এ্যাফিলিয়েশন বাতিল করা হয়। কিন্তু এ সংস্থার নজিরবিহীন ঘটনা রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের বিপুলভাবে উৎসাহিত করে।
×