ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়ার ১০ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি শিক্ষকের

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ১৬ জুলাই ২০১৯

রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়ার ১০ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি শিক্ষকের

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর ॥ একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা থেকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেলেও ১০ বছর পর জামালপুর জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার এক স্কুলশিক্ষক আজমত আলী (৭৪)। তার মুক্তির জন্য দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের কপি পেয়ে জেলা কারাগারের জেল সুপার মো: মকলেছুর রহমান আজ মঙ্গলবার সকালে তাকে মুক্তি দিয়েছেন। তার বাড়ি সরিষাবাড়ী উপজেলার আওনা ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের যাবজ্জীবন সাজার রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে আজমত আলীর করা আবেদন নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত ২৭ জুন এক রায়ে তাকে অবিলম্বে মুক্তির আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে এই রায়ের কপি প্রকাশিত হয়। ডাকযোগে পাঠানো সেই রায়ের কপি মঙ্গলবার সকালে হাতে পান জেল সুপার মো: মকলেছুর রহমান। এরপরই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। বাবার মুক্তিতে মেয়ে বিউটি খাতুন বলেন, ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না যে কেমন লাগছে। আমার বাবা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়ার পরও সম্পূর্ণ মিথ্যাভাবে তাকে প্রায় দশ বছর জেল খাটতে হলো। বাবার মুক্তির জন্য আইনের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আজমত আলী তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, আজকে আমার একদিকে আনন্দের বিষয়, আবার দু:খেরও বিষয়। আমার জীবনটা তো জেলেই কাটলো। কেন আমার জীবন থেকে দশটি বছর হারিয়ে গেল। আমাকে যারা চক্রান্ত করে জেল খাটাইলো তাদের বিচার দাবি করছি। জেল সুপার মো: মকলেছুর রহমান আজমত আলীকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জনকণ্ঠকে বলেন, আজমত আলী লিগ্যাল এইড কর্তৃপক্ষের সহায়তা পেয়েছে বলেই মুক্তি পেলেন। মঙ্গলবার সকালে তার মুক্তির রায়ের কপি হাতে পেয়েই দ্রুত তাকে মুক্তি দিয়েছি। মামলা সূত্রে জানা গেছে, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দি এলাকার কলিম উদ্দিনের ছেলে রেজাউল করিম নিহত হয়েছিলেন। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বিচার শেষে ১৯৮৯ সালের ৮ মার্চ জামালপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত এক রায়ে আজমত আলীকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেন। আজমত আলী ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতির দেওয়া এক বিশেষ আদেশের পর তিনি ১৯৯৬ সালের ২১ আগস্ট জামালপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান। ২০০৫ সালের ২ মার্চ হাইকোর্ট তাঁকে খালাস দিয়ে রায় দেন। মামলাটির রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করেন। আপিল বিভাগ ২০০৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আজমত আলীকে নিম্ন আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি হাজির না হওয়ায় ২০০৯ সালের ২৯ অক্টোবর গ্রামের বাড়ি থেকে আজমত আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই থেকে আজমত আলী কারাগারে আটক ছিলেন। ২০১০ সালের ১১ আগস্ট আপিল বিভাগ আজমত আলীর যাবজ্জীবন কারাদ- বহাল রাখেন। এ অবস্থায় রিভিউ আবেদন করেন আজমত আলী। সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কার্যালয় তাঁকে আইনি সহায়তা দেয়। ওই রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গত ২৭ জুন আজমত আলীকে মুক্তির নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।
×