স্টাফ রিপোর্টার ॥ এদেশের সংস্কৃতির সংগ্রামের সঙ্গে মিশে আছে তাদের কীর্তি। জাতিসত্তার জাগরণে শাণিত হাতিয়ার হয়েছে তাদের সৃষ্ট সুর। ভাষার লড়াই, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে জনতাকে উদ্দীপ্ত করেছে শিল্পীদ্বয়ের সুরারোপিত গণসঙ্গীত। স্বদেশতে ভালবাসা সেই দুই কালজয়ী শিল্পীকে স্মরণ করা হলো সোমবার। সুরস্রষ্টা শহীদ আলতাফ মাহমুদ ও শেখ লুতফর রহমানকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হলো তাদেরই সুরের ধারায়। আষাঢ়ের সন্ধ্যায় সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে দুই শিল্পীকে নিবেদিত অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ।
দুই পর্বে বিভক্ত ছিল স্মরণের এ আয়োজন। প্রথম পর্বে দেশের সংস্কৃতি সংগ্রামে আলতাফ মাহমুদ ও শেখ লুতফর রহমানের অনন্য ভূমিকার কথা উঠে আসে বিশিষ্টজনদের আলাপনে। সুরাশ্রিত দ্বিতীয় পর্বে পরিবেশিত শিল্পীদ্বয়ের সুরারোপিত গণসঙ্গীত। আলোচনায় অংশ নেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও অভিনয়শিল্পী শিমুল ইউসুফ। সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর। স্বাগত বক্তব্য দেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুুরী সুইট। গোলাম কুদ্দুছ বলেন, সাতচল্লিশ পরবর্তী পাকিস্তানী শাসনামলে গণসঙ্গীতের মধ্য দিয়ে বাঙালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন এই দুই কিংবদন্তি শিল্পী। সুরের আশ্রয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, শোষণমুক্তি ও মানবতা বোধকে তারা ছড়িয়ে দিয়েছেন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের গণসঙ্গীত দারুণভাবে উদ্দীপ্ত করেছে সেই সময়ের তরুণ প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধাদের।
আলোচনায় আলতাফ মাহমুদ ও লুতফর রহমানের সুরারোপিত গানকে কণ্ঠে তুলে নেন শিমুল ইউসুফ। গেয়ে শোনান ‘ঘুমের দেশে ঘুম ভাঙাতে’, ‘আমি মানুষের ভাই স্পাটার্কাস’, ‘রক্তে আমার আবার প্রলয় দোলা’, ‘জনতার সংগ্রাম চলবেই’ ‘বিপ্লবেরই রক্তে রাঙানো’ শিরোনামের সঙ্গীত।
পরিবেশনা পর্বে লুতফর রহমানের সুরারোপিত সঙ্গীত পরিবেশন করেন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা। অনেক কণ্ঠ এক সুরে গেয়ে শোনান ‘বিপ্লবেরই ঝান্ডা ওড়ে আকাশে’ ও ‘হিমালয় থেকে সুন্দরবন’ শিরোনামের গান। আলতাফ মাহমুদের সুরারোপিত সঙ্গীতকে কণ্ঠে ধারণ করেন বহ্নিশিখার শিল্পীরা। সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ ও ‘আমরা পুবে-পশ্চিমে’। ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘মিলিত প্রাণের কলরবে’ ও ‘লাঞ্ছিত নিপীড়িত’। সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা গেয়ে শোনায় ‘ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য’ ও ‘জনতার সংগ্রাম চলবেই’। আনন্দনের শিল্পীদের শিল্পীদের কণ্ঠে গীত হয় ‘জনতার মুখগুলি আগুনের হলকায়’ এবং ‘ওরে মাঝি নৌকা ছেড়ে দে’। সমস্বরের শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘রক্ত শিমুল, তপ্ত পলাশ দিলো ডাক সুনীল ভোরে’ এবং ‘ওরে বিষম দরিয়ার ঢেউ উথাল-পাথাল করে রে’।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: