বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ রাজধানীসহ সারাদেশে বেড়েই চলেছে। ডেঙ্গু জ্বর এক ধরনের ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। এইডসএজিপটি নামক মশার মাধ্যমে এ রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসটির ৪টি ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। এক এক সময় একেকটি প্রজাতির সংক্রমণ হওয়ায় নির্দিষ্ট ভ্যাক্সিন দিয়েও রোগটিকে দমন করা সম্ভব নয়।
ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোন ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়।
আবার, আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোন জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেই মশাটিও ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবেই এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী এডিস মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস, বিশেষ করে গরম ও বর্ষার সময় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ অনেক বেশি থাকে। অপরদিকে শীতকালে সাধারণত এই জ্বর হয় না বললেই চলে।
রোগলক্ষণ॥
একজন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির সাধারণত উচ্চ জ্বর হয় অর্থাৎ তাপমাত্রা ১০৪-১০৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তার থেকে বেশি হবে। সঙ্গে নিম্নের লক্ষণগুলোর অন্তত দুটি প্রকাশ পাবে।
তীব্র মাথাব্যথা
চোখের পেছনের দিকে তীব্র ব্যথা
জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা
মাংসপেশী অথবা হাড়ে ব্যথা (এ জন্য অন্য নাম : হাড়ভাঙ্গা জ্বর)
হামের মতো র্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা যায়
নাক, দাঁতের মাড়ি থেকে অল্প রক্তপাত হতে পারে
রক্তে শ্বেতকণিকার পরিমাণ কমে যাবে।
লক্ষণগুলো রোগীর বয়স অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। ছোট বাচ্চাও প্রথমবার আক্রান্তদের থেকে বয়স্ক, শিশু ও দ্বিতীয়বার আক্রান্তদের মাঝে রোগের তীব্রতা বেশি হয়।
জটিলতা॥
সাধারণত ৩-৭ দিনের মধ্যেই জ্বরের তাপমাত্রা কমতে থাকে। তবে যদি নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো দেখা যায় দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
তীব্র পেটব্যথা ও ক্রমাগত বমি
ত্বকে লাল দাগ
নাক ও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়লে
বমির সঙ্গে রক্ত আসলে
কালো বা আলকাতরার মতো পায়খানা হলে
ত্বক ফ্যাকাশে, ঠাণ্ডা ও স্যাঁতসেঁতে হলে
শ্বাসকষ্ট হলে।
তবে হেমোরোজিক ডেঙ্গু জ্বর কিংবা শকসিনড্রোম হলে দাঁতের মাড়ি, নাক, মুখ ও পায়ুপথে রক্ত আসতে পারে। রোগী রক্তচাপ কমে যাওয়ায় অস্বস্তি বোধ এমনকি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়তে পারেন।
প্রতিরোধ ॥
এ রোগের কোন টিকা নেই। তাই প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হয়। এ জন্য -
জমে থাকা খোলা পাত্রের পানিতে মশা ডিম পাড়ে। পোষা প্রাণীর খাবারপাত্র, পানিরপাত্র, ফুলগাছের টব, নারকেলের মালা ইত্যাদিতে পানি জমে থাকতে পারে। সেগুলো পরিষ্কার রাখবেন। ঘরে পর্দার আশপাশে, বিছানার নিচে স্প্রে করুন।
দিনের বেলায় এরা কামড়িয়ে থাকে। তাই দিনের বেলাতেও মশারি ব্যবহার করুন।
চিকিৎসা ॥
এই রোগের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তাই রোগ লক্ষণগুলোর ওপর চিকিৎসা দেয়া হয়।
রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখুন।
প্রচুর পানি, পানীয় অথবা খাবার স্যালাইন পান করতে দিন।
জ্বর হলে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শরীর বারবার মুছে দিন।
জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল ব্যতীত অন্য কোন ওষুধ দিবেন না।
রোগীকে ব্যথার ওষুধ অ্যাসপিরিন বা আইব্র প্রুফেন জাতীয় ওষুধ দিবেন না।
ডেঙ্গু জ্বরের রোগীর মাঝে অস্থিরতা দেখা দিলে নির্দিষ্ট সময়ান্তে তার রক্তচাপ পরীক্ষা করুন। রক্তচাপের তারতম্য তথা অবনতি ডেঙ্গু শকসিন্ড্রোমের প্রাথমিক লক্ষণ। ডেঙ্গু শকসিন্ড্রোমের রোগীদের জরুরী ভিত্তিতে নরমাল স্যালাইন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধায়নে দিতে হবে। প্লাটিলেট কমে পনেরো হাজারের নিচে এলে বা রক্তক্ষরণ দেখা দিলে প্লাটিলেট পরিসঞ্চালনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরের রোগীকে তার রোগের উপসর্গ দেখে যত দ্রুত চিকিৎসা প্রদান করা হবে তা তার শরীরের জন্য ততই মঙ্গলজনক বার্তা বয়ে আনবে।
ডাঃ আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার
সহযোগী অধ্যাপক
শিশু রোগ বিভাগ
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
শীর্ষ সংবাদ: