ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ডঃ এটিএম রফিক উজ্জল

ভয়ঙ্কর ডেঙ্গুজ্বর, এবারের অভিজ্ঞতা ও করণীয়

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৬ জুলাই ২০১৯

ভয়ঙ্কর ডেঙ্গুজ্বর, এবারের অভিজ্ঞতা ও করণীয়

২০০০ সালের পর থেকেই অনেকটা ডেঙ্গুজ্বরকে অতিক্রমই করেছিলাম বলতে গেলে এমনটি হিমশিম খেতে কখনও হয়নি। কারণ তো ভিন্ন এবার যে ডেঙ্গু কিছুটা ভিন্ন তার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম কারণ- অতিরিক্ত মশার উপদ্রপ এবং অতিরিক্ত দংশনে শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাসের মাত্রাতিরিক্ত বংশ বিস্তার (Vioal Load)। ডেঙ্গুজ্বর এর আগে হয়ত ভাইরাস Den-1 Den-2 দ্বারা হয়েছে এখন তা Den-3 Den-4 দ্বারা হচ্ছে হয়ত বেশি, হয়ত কোন কারণে ডেঙ্গু ভাইরাসের ধরন, ধারণ ও আক্রমণের ধরনও পাল্টিয়েছে। ফলে তা ভয়ঙ্কর রূপে আবির্ভূত হয়েছে। তার ভয়ঙ্ককরত্ব এত বেশি যে প্রতি ১০টা বাচ্চার মধ্যে ৬টা বাচ্চাই ভর্তি হচ্ছে ডেঙ্গু শক সিনড্রম নিয়ে, তাদের শরীরের অনুচক্রিকা বিপুল হারে কমে যাচ্ছে অতিদ্রুত। গতকালও যা ছিল ১ লাখেরও ওপরে তা নেমে একেবারে ১০ হাজারে নেমে যাচ্ছে (নর্মাল ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার) সঙ্গে অন্যান্য উপসর্গের পরিমাণও অনকে বেশি। লিভার আক্রান্ত হচ্ছে অনেক বেশি, বিশৃঙ্খল হচ্ছে কিডনি কার্যকারিতা। আন্ত্রিক রক্তক্ষরণের মাত্রা এবার অনেক বেশি। পানি আসছে বুকে ও পেটে এবং মাঝে মাঝে নিউমোনিয়া দেখা যাচ্ছে। নিউমোনিয়া ও রক্তে ইনফেকশনের কারণে লাগছে উচ্চমাত্রায় এ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে রক্তের অনুচক্রিকার মাত্রা। ঠিক আছে কিন্তু সে ঘামছে, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে এবং ব্লাড, প্রেসার নেমে যাচ্ছে। ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে রণনীতি ও রণকৌশল তাই কিছুটা পাল্টাতে হচ্ছে * যে কোন জ্বরের রোগীকে ডেঙ্গু এ্যান্টিজেন (Dengue antgen NSI) পরীক্ষা করা উচিত হবে অথবা ৫ দিন পর ডেঙ্গু এ্যান্টিবডি। * ডেঙ্গু এ্যান্টিজেন পজিটিভ হলে অন্যান্য পরীক্ষা করে নিতে হবে যেমন পুরোপুরি রক্তের গণনা ব্লাড গ্রুপিং। * লিভার ফাংশন টেস্ট ( SGOT SGPT PT APTT) * কিডনি ফাংশন টেস্ট যেমন সিরাম Creatinine Urea ইত্যাদি। * সিরাপ এ্যালবুমিন * পেটের ও বুকের সনোগ্রাম ও এক্স-রে * সিরাম ইলেকট্রলাইটস করণীয় বিষয়গুলো মধ্যে * জ্বরের রোগীকে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান * ডেঙ্গু প্রমাণিত হলে- বাচ্চাকে উপযুক্ত বিশ্রামে রাখুন, প্যারাসিটামল সিরাপ বা বড়ি ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা পর পর খেতে দিন যদি জ্বর থাকে, তরল খাদ্য যেমন- পানি, খাওয়ার স্যালাইন, স্যুপ, ডাবের পানি, গ্রহণের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। * প্রথম ২/৩ দিনের পর থেকে যখন জ্বর কমে যাচ্ছে তখনই খারাপ সময় [মধ্যে ৩/৪ দিন] এ সময় প্রায় প্রতিদিন রক্তের অনুচক্রিকার পরিমাণ দেখা উচিত। যদি দেখা যায় – * অনুচক্রিকার পরিমাণ অনেক কমতির দিকে * বাচ্চা বার বার বমি করছে * অতিরিক্ত পেটে ব্যথা * অতি স্তবরিতা অথবা অতি অস্থিরতা * মুখ থেকে, নাক থেকে রক্ত বেরুচ্ছে কিংবা কালো পায়খানা অথবা কালো রক্ত বমি অথবা রক্তের মতন প্রস্রাব করছে * মুখ-চোখ ফ্যাকাশে, অতিরিক্ত ঠান্ডা হাত পা * ৪ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে কোন প্রস্রাব করেনি তাহলে বাচ্চাকে ভর্তি করে দিন এবং যথোপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করুন। মনে রাখতে হবে এবার ডেঙ্গুজ্বর ভয়ঙ্করভাবে আবির্ভূত হয়েছে তাই হাসপাতালগুলোকে অতি সতর্ক ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে। নজর দিতে Team work-এর ওপর। দলগত প্রচেষ্টা ছাড়া এ যুদ্ধে জয়ী হওয়া যাবে না। লেখক : রেজিস্ট্রার, শিশু বিভাগ হলি ফ্যামেলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ
×