ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে উত্তরে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা

প্রকাশিত: ১০:২০, ১৪ জুলাই ২০১৯

 ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে উত্তরে ভয়াবহ বন্যার  আশঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তিস্তার পর এবার যমুনা নদীর পানিও বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে আগামী তিন থেকে চারদিন বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। ভারি বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে ঢলে উত্তরাঞ্চলে বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। দু’একদিনের মধ্যে দেশের মধ্যাঞ্চলের বন্যা বাড়বে। এদিকে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় উত্তর এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের কয়েক লাখ লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। ঘরবাড়ি এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। হুমকির মুখে রয়েছে স্থানীয় অনেক বাঁধ সড়ক ও মহাসড়ক। আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের উপরে ভারি বর্ষণ অব্যাহত আছে। এছাড়া পার্শ¦বর্তী আসাম মেঘালয়ে ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। উজার থেকে ভারি বৃষ্টির পানি নেমে দেশে বন্যার অবনতি হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দেশের ওপর ভারি বর্ষণ আরও দুএকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। অপর দিকে ভারতের আসাম মেঘালয় এবং বিহার প্রদেশেও ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। তবে উত্তরাঞ্চল এবং উত্তরা-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হলেও এখন দেশে ভয়াল আশঙ্কা করছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানের বন্যা পূর্বাভাস এবং সতর্কীকরণ কেন্দ্রে নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুইয়া জনকণ্ঠকে বলেন, ভারি বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসার পানির কারণে আগামী কয়েকদিন দেশের বন্যার পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে। তিনি জানান, এখন উত্তরাঞ্চলে বন্য প্রকোপ বাড়ছে। দু’একদিনের মধ্যে মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে। ২০ জুলাইয়ের পর বন্যা স্থিতিশীল হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বিশেষজ্ঞরা বলছে দেশের তিনটি প্রধান নদীর পানি এক সঙ্গে বাড়লে বন্যা ভয়াল আকার ধারণ করার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু তিস্তা এবং যমুনা নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও এই মুহূর্তে পদ্মা নদীতে সেই আশঙ্কা নেই। যদিও বিহারের ভারি বর্ষণের কারণে গঙ্গা নদীর পানি বাড়ছে। এছাড়া লোয়ার স্টিমে মেঘনা নদীর অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। ফলে এই মুহূর্তে সারাদেশে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। আরিফুজ্জামান বলেন, জুলাইয়ে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি স্বাভাবিক থাকবে। আগস্টে গিয়ে এই নদীর পানি বেড়ে যেতে পারে। এই মুহূর্তে যমুনা নদীর পানির বৃদ্ধির সঙ্গে পদ্মার পানি বৃদ্ধির সংযোগ ঘটবে না। ফলে বন্যা ভয়াল আকার ধারণ করার আশঙ্কা নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড সারাদেশের নদ নদী পানি বৃদ্ধির তথ্য পর্যবেক্ষণ করে জানিয়েছে দেশের সব নদ নদীর পানি সমতলে বাড়ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অফিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল, ভারতের সিকিম, পশ্চিমবঙ্গে উত্তরাঞ্চল, আসাম ও মেঘালয় প্রদেশসমূহের বিস্তৃত এলাকায় আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে। এ ছাড়া ভারতের বিহার এবং নেপালেও এই সময়ে ভারির বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এ কারণে এসব এলাকার বৃষ্টির পানিতে বন্যার আরও অনতির আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তারা জানায়, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের সব প্রধান নদীর পানি সমতলে বাড়বে। আজকেই যমুনা নদীর পানি সারিয়াকন্দি এবং কাজীপুর পয়েন্ট বিপদসীমা অতিক্রম করবে। চট্টগ্রাম সিলেট, রংপুর বিভাগের সুরমা, কুশিয়ারা, কংস সৌমেশ্বরী ফেনী হালদা, মাতামুহুরী, সাঙ্গু, ধরলাসহ প্রধান নদ নদীর পানি সমতলে বাড়বে। এসব নদীর পানি বাড়ার কারণে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার বান্দরবান, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম জামালপুর, গাইবান্ধা জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে। তারা জানায়, দেশের ২৩৪ পয়েন্টে ১১টি নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে দেশের প্রধান নদী যমুনার ২টি পয়েন্টে বিপদ সীমার ৩১ এবং ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের ২টি পয়েন্ট দিয়ে এবং একটি পয়েন্টে তিস্তা নদী ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর ািদয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সারাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ু সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। এ কারণে রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট এবং চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি (৪৪-৮৮ মি.মি.) থেকে অতি ভারি (৮৯ মি.মি.) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারি বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ী এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমি ধসের আশঙ্কা রয়েছে। লালমনিরহাট ॥ অবিরাম বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের তিস্তা-ধরলাসহ সব নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। শনিবার সকাল ৬টা থেকে তিস্তা ব্যারাজ দোয়ানী পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৪৮ সেঃ মিঃ ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানির তোড়ে হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী তালেব মোড় এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং বড়খাতা-বিডিআর গেট বাইপাস সড়ক ভেঙ্গে যায়। ফলে হাতিবান্ধা উপজেলা শহরে বন্যার পানি প্রবেশ করে। বন্যায় অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নৌকা বা ভেলা ছাড়া চরাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পঁচিশটি উপজেলার নদী তীরবর্তী নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ছে। এসব মানুষ পরিবার-পরিজন এবং গৃহপালিত পশু নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে। খাদ্যাভাব, বিশুদ্ধ পানি এবং পোকা-মাকড়ের ভয়সহ নানা সঙ্কটে রয়েছে তারা। বন্যা দুর্গত এলাকার ফসলি জমি, রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। দেখা দিয়েছে নানা পানিবাহিত রোগ। কয়েক হাজার একর আমন ধানের বীজ তলাসহ অনেক ফসলি ক্ষেত তিস্তার পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। ভেসে যাচ্ছে শ’ শ’ পুকুরের মাছ। নীলফামারী ॥ ভারি বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। যা বিগত কয়েক বছরের চেয়ে এবার তিস্তা নদীর বন্যা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড তিস্তা অববাহিকায় হলুদ সঙ্কট জারি অব্যাহত রেখেছেন। উজানের ঢল সামাল দিতে খুলে রাখা হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট। এদিকে তিস্তার বন্যায় বসতঘর প্লাবিত হওয়ায় মানুষজন তিস্তার ডান তীর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। তিস্তার বন্যার চাপে ডিমলা উপজেলার খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর এলাকার স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত তিনটি বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। কুড়িগ্রাম ॥ কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ৯টি উপজেলার চরাঞ্চলের তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ১ লাখ মানুষ। নদ-নদী অববাহিকার প্রায় সব চরের আমন বীজতলা, পাট, ভুট্টা ও সবজি ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট, মাছের ঘের ও স্কুল। চিলমারীর তিস্তার ভাঙ্গনে হরিপুর এলাকার মহির প্রামাণিকের বাড়ির পাশের একটি সাব বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় এসব গ্রামের বাসিন্দারা ইউনিয়নের ওয়াবদা বেড়িবাঁধ, জোরগাছ ২ নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রিয়াজুল জান্নাত মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছে। জামালপুর ॥ যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যায় দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার অন্তত ৩০টি গ্রামের বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ২০ হাজার পরিবার। যমুনার পানি ছড়িয়ে পড়ছে বিস্তীর্ণ জনবসতি এলাকায়। ইতোমধ্যে এসব গ্রামের বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৩০০ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় অনেকেই ঘরের টিনের চাল, বেড়া, ধান-চাল, আসবাবপত্র ও গবাদি পশু সরিয়ে নিচ্ছেন উঁচু রাস্তার পাশে এবং সেতুতে। বগুড়া ॥ উজানী ঢলে যমুনার পানি বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে মথুরাপাড়া পয়েন্টে শনিবার দুপুরে বিপদসীমা অতিক্রম করে বিকেল পর্যন্ত ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানিয়েছেন পানি বৃদ্ধির এই ধারা এক সপ্তাহেরও বেশি অব্যাহত থাকবে। এ মাসের শেষ সপ্তাহে ঢলের পানি বিপদসীমার নিচে নামতে থাকবে। ঢলে যমুনার ভিতরের গ্রাম ও চরগ্রামের নি¤œাঞ্চল ডুবে যাবে। তবে ভয়াবহ বন্যার সম্ভাবনা নেই। গাইবান্ধা ॥ ভারি বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদ নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা এবং সদর উপজেলায় নদী তীরবর্তী ও বিভিন্ন চরাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে ওইসব এলাকার বিভিন্ন ফসলি জমি ও রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের নিচু এলাকাগুলো তলিয়ে যাওয়ায় সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। টাঙ্গাইল ॥ যমুনা নদীতে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরীভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করলেও পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। ফলে বর্ষার শুরুতেই টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মাহমুদনগর ইউনিয়ন ও ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি যমুনার পেটে চলে যাচ্ছে। ভাঙ্গনের শিকার হয়ে ইতোমধ্যে সহ¯্রাধিক পরিবার অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। যমুনার বাম তীরে অবস্থিত টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মাহমুদনগর ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। পাট, ধান, বাদামসহ বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি ইতোমধ্যে যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। রংপুর ॥ ভারত থেকে আসা পাহাড়ী ঢলে রংপুর জেলার তিস্তা, ঘাঘট, করতোয়া নদীর পানি অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। ওইসব নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে পানি ঢুকে পড়ায় বন্যা দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে তিন উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ৪৪টি দুর্গম চরাঞ্চলের ৪০টি গ্রাম হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শেরপুর ॥ টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত গ্রামগুলোর নিম্নাঞ্চলের কাঁচা ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট, রোপা আমন ধানের বীজতলা, সবজি, পুকুরের মাছ পানিতে তলিয়ে গেছে। সেইসঙ্গে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ওইসব গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। নকলা উপজেলার মৃগী নদীতে পানির তীব্র স্রোতে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। নেত্রকোনা ॥ ভারি বৃষ্টিপাত এবং পাহাড়ী ঢলের কারণে জেলার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এ তিন উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের অন্তত ২৫০টি গ্রাম পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তিন উপজেলার ২০২টি বন্যা কবলিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। এদিকে দুর্গাপুরের কামারখালি, জাগিরপাড়া, বাড়ইপাড়া, মাইজপাড়া ও রানীখং গ্রামে সোমেশ^রী নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। সিলেট ॥ টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢল অব্যাহত থাকায় সিলেটের বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সবক’টি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার সিলেট সদর উপজেলার খাদিম নগর, হাটখোলা জালালাবাদ, কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পানি প্রবেশ করেছে। বন্যার পানিতে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও সদর উপজেলার নিচু এলাকার রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। তিন লক্ষাধিক লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এছাড়া ১০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। হবিগঞ্জ ॥ একটানা ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে হবিগঞ্জ শহর সংলগ্ন খোয়াই ও সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলা নবীগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর পানি ক্রমশ বেড়েই চলছে। দু’দিনে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় হবিগঞ্জ শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত। বরিশাল ॥ টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরীর বাসিন্দারা। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সড়কে বৃষ্টির পানি জমে এ ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে সড়কে সৃষ্ট খানাখন্দেও পানি জমেছে। আর এতে করে রাস্তাঘাটও কর্দমাক্ত হয়ে গেছে। কক্সবাজার ॥ অব্যাহত ভারি বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের প্রভাবে চকরিয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। বেড়িবাঁধের ভেঙ্গে যাওয়া অংশ দিয়ে লোকালয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ঢলের পানি। উপকূলের প্রতিটি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি চরম অবনতি ঘটেছে। পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের তা-বে মাতামুহুরী নদীতে ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত দুইদিনে নদীর দুই তীরের বিভিন্ন পয়েন্টে অন্তত ২০ অংশে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পঞ্চগড় ॥ গত এক সপ্তাহ ধরে ভারি বর্ষণ আর ভারত থেকে আসা পানিতে পঞ্চগড়ের তালমা নদীর রাবার ড্যামের রাবারের ফুটো দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হতে শুরু করেছে। উজানের চা বাগানসহ ফসলের ক্ষেতে ঢুকেছে পানি। এই অবস্থা চলতে থাকলে উজানে প্লাবিত হয়ে ১০টি গ্রামের ২ সহ¯্রাধিক মানুষ পানিবন্দী হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চা বাগানসহ প্রায় ২শ’ একর জমির ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। পটিয়া ॥ টানা ৭ দিনের প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব হাইদগাঁও গ্রামের একটি গ্রামীণ সড়ক শ্রীমাই খালে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। যার ফলে এলাকার লোকজন দুর্ভোগের কবলে পড়েছেন। ফটিকছড়ি ॥ গেল তিন দিনের অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে বৃহত্তর ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীতে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির বেশ অবনতি ঘটেছে। এ দু’উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হালদা নদীর পানি বিপদসীমার এক ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
×