ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আল কায়েদা বাংলায় ‘আচরণবিধির’ অডিও প্রকাশ করেছে

প্রকাশিত: ১০:১৬, ১৪ জুলাই ২০১৯

 আল কায়েদা বাংলায় ‘আচরণবিধির’ অডিও প্রকাশ করেছে

শংকর কুমার দে ॥ ভারতীয় উপমহাদেশের বাংলাভাষী বিশেষ করে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গীদের জন্য বাংলা ভাষায় অডিও বার্তার মাধ্যমে ‘আচরণবিধি’ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক ভয়ঙ্কর জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদা। আল কায়েদা তাদের অন্যতম শীর্ষনেতা আনওয়ার আল আওলাকির বিভিন্ন ভাষণ সঙ্কলিত করে বাংলায় ‘দ্য বুক অব জিহাদ’ নামে একটি বই প্রকাশ করেছে। আওলাকির ভাষণের বাংলা অনুবাদের সিডিও তৈরি করে প্রচার করছে বিশ্ব ত্রাস ওই জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদা। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের এক জিহাদী আল কায়েদার হয়ে চার বছর আগে আফগানিস্তানে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হওয়ার ঘটনায় তার নামে গজল তৈরি করেও প্রচার করছে, আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদা এখন বাংলাভাষী মুজাহিদদের বেশি গুরুত্ব দিয়ে বাংলা ভাষায় জিহাদী কার্যক্রম ও জিহাদী নিয়োগ শুরু করেছে এবং আল কায়েদাকে সাহায্য করছে জামা’আতুল মুজাহিদিন নামের জঙ্গী সংগঠন। এ খবর নিশ্চিত করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশের জিহাদী মুজাহিদিনদের জন্য আদর্শ, আচরণবিধি প্রকাশ করেছে, যার বাংলা ভাষায় অডিও বার্তা প্রকাশ করার ঘটনাটি এই প্রথম। এই জঙ্গী সংগঠনটির বাংলাভাষায় আচরণবিধি প্রকাশ করে জঙ্গী সংগ্রহ অভিযান পরিচালনা, জঙ্গী তৎপরতা শুরু করার ঘটনাটি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের জন্য নিরাপত্তা হুমকিস্বরূপ। অডিও বার্তায় আল কায়েদা তাদের অন্যতম শীর্ষনেতা আনওয়ার আল আওলাকির বিভিন্ন ভাষণ সঙ্কলিত করে বাংলায় ‘দ্য বুক অব জিহাদ’ নামে একটি বই প্রকাশ করে আওলাকির ভাষণের বাংলা অনুবাদ করে সিডিও তৈরি করার ঘটনাটি ভারতীয় উপমহাদেশের জঙ্গী তৎপরতা ও হুমকির জন্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে। শুধু বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গই নয়, কাশ্মীর, অসম, ত্রিপুরা, কেরালাসহ বাংলাভাষী প্রধান এলাকায় এই অডিও প্রকাশের মাধ্যমে বাংলাভাষী জিহাদী সংগ্রহের অভিযানে মাঠে নেমেছে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদা। আমেরিকা ও ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা বিশ্ব ত্রাস আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদার জঙ্গী তৎপরতা, জিহাদী সংগ্রহ বিশেষ করে বাংলাভাষী অডিও প্রকাশ করে জঙ্গী সংগঠনটির বিস্তারের বিষয়টি জানিয়ে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাকে সতর্ক করে দিয়েছে। ওই সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, ভারতে আল কায়েদার সংগঠন বিস্তারের মূল ফোকাস এলাকা দুটি। এক. কাশ্মীর এবং দুই. পশ্চিমবঙ্গ সমেত পূর্ব ভারতের বাংলাভাষী এলাকা, যা বাংলাদেশ এলাকাটিকেই চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটসের (আইএস) আদলে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে প্রচার বিভাগকে সাজিয়েছে জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদা। ইসলামিক জঙ্গী কার্যকলাপের ওপর নজর রাখা ভারতীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা বলেছেন, ইসলামিক স্টেট (আইএস) জমি হারানো শুরু করার পরই পশ্চিম এশিয়ার একাধিক দেশের বিভিন্ন প্রকাশ্য সংগঠনের মাধ্যমে আল কায়েদার তহবিলে বিপুল অঙ্কের টাকা ঢালা হচ্ছে। আইএসকে টেক্কা দিতে, ওই সংগঠনেরই ট্রেডমার্ক অনলাইন প্রচারকে হাতিয়ার করেছে আল কায়েদা। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা প্রায় দু’ডজন ওয়েবসাইট চিহ্নিত করেছেন যেখানে প্রকাশ্যে আল কায়েদার হয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে। তার মধ্যে এক ডজনের বেশি ওয়েবসাইট বাংলায়। বাংলা ওয়েবসাইটগুলো আল কায়েদার মতাদর্শ থেকে শুরু করে সংগঠনের শীর্ষ জিহাদী নেতাদের আরবী বক্তব্যকে বাংলায় ডাব করে প্রচার করছে। সেই সঙ্গে ওয়েবসাইট পড়ুয়াদের জন্য দেয়া হচ্ছে অনলাইন প্রশিক্ষণ। কীভাবে ফোন এবং ইন্টারনেটের নজরদারি এড়ানো সম্ভব বা কীভাবে নিজের মোবাইলে কোন নির্দিষ্ট ফাইল গোপন রাখা সম্ভব হবে। মূলত ওয়ার্ডপ্রেসে সেসব সাইট বানানো হচ্ছে। সাইটগুলো চিহ্নিত করে বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে নতুন সাইট খোলা হচ্ছে। সাইটগুলোর বেশিরভাগই পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেছেন, পাকিস্তানে নিহত আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেন জীবিত থাকাকালীন আল কায়েদা কখনওই এভাবে সংগঠনের প্রচার করত না। বর্তমানে জঙ্গী সংগঠন আইএস আর ধাঁচে নতুন পন্থা নিয়েছে আল কায়েদা। আইএস বা আল কায়েদার মতো সংগঠনে এতদিন বাঙালীদের আলাদা কোন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। এমনকি, মার্কিন গোয়েন্দাদের বিভিন্ন রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, আইএস শিবিরেও, মূল বাহিনীতে ভারতীয় এবং বাঙালীদের যোদ্ধা হিসেবে কোন সম্মান ছিল না। মূলত পশ্চিম এশিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং আফ্রিকার মুজাহিদরাই বেশি গুরুত্ব পেয়েছে ওই দুই সংগঠন আইএস ও আল কায়েদায়। কিন্তু আল কায়েদার সাম্প্রতিক কার্যকলাপ থেকে গোয়েন্দারা নিশ্চিত যে, এবার তারা সংগঠন বিস্তার করতেই বাংলাভাষী মুজাহিদদের গুরুত্ব দিচ্ছে। আল কায়েদা তাদের প্রচারে বাংলাভাষী শহীদদের কথাও ফলাও করে প্রচার করছে। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশের এক জিহাদী আল কায়েদার হয়ে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হয় আফগানিস্তানে। তার নামে গজল তৈরি করে প্রচার করা হচ্ছে। গোয়েন্দাদের ধারণা, এভাবে বাংলাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আল কায়েদা দুই বাংলাতেই জিহাদী নিয়োগ শুরু করেছে। এতে সাহায্য করছে জামা’আতুল মুজাহিদিনের মতো সংগঠন। আল কায়েদা প্রতি সপ্তাহে একটি উপমহাদেশীয় সংবাদ বুলেটিন প্রচার করছে যেখানে পশ্চিমবঙ্গ সমেত দেশের বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করা হচ্ছে। সম্প্রতি ক্যানিং লোকালে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনাও জায়গা পেয়েছে ওই বুলেটিনে। গোটা প্রক্রিয়াটিকে উস্কানিমূলক খবর দিয়ে পরিকল্পিতভাবে মগজ ধোলাই করার পরিকল্পনা বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। ঢাকায় জঙ্গী সংগঠনগুলো নিয়ে কাজ করেন এমন একজন গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, আল কায়েদার এই বাংলাকেন্দ্রিক প্রচার, বাংলাভাষী জঙ্গী সংগ্রহ, জিহাদী তৎপরতা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জিহাদী প্রশিক্ষণ দান, আরও বড় কোন ধরনের নাশকতা ঘটানোর মতো অশনি সঙ্কেতের ইঙ্গিতই বহন করছে। বাংলাদেশের জঙ্গী সংগঠনগুলো যেই ধাঁচে দমন করা হয়েছে সেই কৌশলেই আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আইএস হোক আর আল কায়েদা-ই হোক তা দমন করার জন্য এখনই উপযুক্ত সময় বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি।
×