বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভায় পদোন্নতি পেয়ে পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা ইমরান আহমেদ। একই সঙ্গে মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এই দুজনকে শপথ বাক্য পড়ান। বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
নতুন প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরাকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আর পদোন্নতি পেয়ে মন্ত্রী হওয়া প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদকে আগের মন্ত্রণালয়েই রেখে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রুলস অব বিজনেসের ক্ষমতাবলে প্রধানমন্ত্রী এদের দফতর বণ্টন করেছেন বলে শনিবার রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আদেশে জানানো হয়েছে। এর আগে শুক্রবার তাদের মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করার বিষয়টি প্রকাশ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ওই আদেশে বলা হয়, শপথ নেয়ার দিন থেকে এ নিয়োগ কার্যকর হবে। সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (২) দফা অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ তাদের এ নিয়োগ দিয়েছেন।
ইমরান আহমেদ এখন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন। পদোন্নতি পেয়ে তিনি পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। আর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ। ইমরান আহমেদকে মন্ত্রী এবং ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরাকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়ে আনুষ্ঠানিক আদেশ শুক্রবারই জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
দরবার হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিসভার সদস্য, জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতাসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে ঢোকেন। প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে মনোবিদ বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ হোসেন শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আলাদাভাবে শপথ নেয়ার পর পৃথকভাবে গোপনীয়তার শপথ নেন মন্ত্রী ইমরান আহমেদ ও ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর গত ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা তৃতীয় মেয়াদে শপথ নেন শেখ হাসিনা। ২৪ মন্ত্রী, ১৯ প্রতিমন্ত্রী এবং তিনজন উপমন্ত্রীকে নিয়ে নতুন সরকারের চমকের মন্ত্রিসভা সাজান তিনি। পাঁচ মাসের মাথায় মন্ত্রিসভায় প্রথম পরিবর্তন এলেও নতুন কাউকে নেয়া হয়নি। প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বরত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়।
শনিবারের শপথ গ্রহণের মাধ্যমে একজনের পদোন্নতি এবং একজনের অন্তর্ভুক্তিতে বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় এখন মন্ত্রীর সংখ্যা বেড়ে হলো ২৫ জন। তবে প্রতিমন্ত্রীর সংখ্যা আগের মতোই ১৯ জন এবং উপমন্ত্রীর সংখ্যা তিনজন থাকল। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এতদিন কোন মন্ত্রী ছিল না। সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমেদ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে একাই দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন।
দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ী ইমরান ১৯৮৬ সাল থেকে ছয় বার সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তার স্ত্রী অধ্যাপক নাসরিন আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য। মন্ত্রীর দায়িত্বে ইমরান আহমেদ একই মন্ত্রণালয়ে থাকবেন, না প্রধানমন্ত্রী তার দফতর বদলে দেবেন, সে বিষয়ে কোন ঘোষণা এখনও আসেনি। ঘোষণা না এলেও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এতদিন প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ মন্ত্রণালয়ের দেখভাল করে আসছেন। মুন্সীগঞ্জের মেয়ে ইন্দিরা ইডেন কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি। তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। টানা তৃতীয়বার সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য হিসেবে সংসদে রয়েছেন তিনি।
