ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

প্রকাশিত: ১০:১৩, ১৪ জুলাই ২০১৯

 দক্ষিণ কোরিয়ার  প্রধানমন্ত্রীকে  লাল গালিচা  সংবর্ধনা

দক্ষিণ কোরীয় প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইয়োন তিন দিনের সরকারী সফরে শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ পৌঁছেছেন। বিমানবন্দরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। দু’দেশের মধ্যকার বিদ্যমান সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে ও নতুন বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগের সন্ধানে তার এই বাংলাদেশ সফর। একটি বিশেষ ফ্লাইটে দক্ষিণ কোরীয় প্রধানমন্ত্রী বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন। বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। -খবর বাসসর। কোরীয় প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরে পৌঁছলে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এরপর অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে কোরিয়া ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের পর কোরীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের উদ্দেশে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। লি তার চার দেশ সফরের প্রথমভাগে বাংলাদেশে এসেছেন। তিনি ১৩ থেকে ২১ জুলাই এই সফর করবেন। বাংলাদেশের পর তিনি তাজিকিস্তান, কিরগিজিস্তান ও কাতার সফরে যাবেন। কোরীয় প্রধানমন্ত্রীর অফিসের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে খবরে বলা হয়, ‘সিউলের বহুমুখী কূটনৈতিক কৌশলের আওতায় মধ্য ও দক্ষিণপশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার এবং মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে লি এই সফর করছেন।’ দক্ষিণ কোরীয় প্রধানমন্ত্রী সফরকালে তিনি এই হোটেলেই থাকবেন। দক্ষিণ কোরীয় প্রধানমন্ত্রী রবিবার সকালে সাভারে জাতীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবকের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তার এই সরকারী সফরের কার্যক্রম শুরু করবেন। এরপর তিনি সাভার ইপিজেড এ ইয়াংওয়ান হাইটেক স্পোর্টসওয়্যার ও ঢাকার মুগদাপাড়ায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এডভান্সড নার্সিং এডুকেশন এ্যান্ড রিসার্চ- এ পরিদর্শন করবেন। একইদিন বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে কোরীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে (পিএমও) এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে, দুপুরে লি ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এফবিসিসিআই ও কেআইটিএ আয়োজিত বাংলাদেশ- কোরিয়া বিজনেস ফোরামে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর কোরীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করবেন। সন্ধ্যায় তিনি হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আয়োজিত এক নৈশভোজে যোগ দিবেন। সোমবার ঢাকা ছাড়ার আগে, কোরীয় প্রধানমন্ত্রী ধানম-িতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বেলা ১১টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে কোরীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানাবেন। কোরীয় প্রধানমন্ত্রী একটি বিশেষ ফ্লাইটে তাজাকিস্তানের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। কোরীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমনের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বাসস’কে বলেন, ‘আমরা নতুন পণ্য উৎপাদন করার জন্য তাদের (কোরিয়ান) বিনিয়োগের সন্ধান করব, কারণ বৈচিত্র্যপূর্ণ পণ্য উৎপাদনে তাদের রয়েছে যথেষ্ট উদ্ভাবনী শক্তি।’ চট্টগ্রামের কোরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড) এখনও পুরোপুরি কাজে লাগানো হয়নি বলে উল্লেখ করে মোমেন বলেন, কেইপিজেডের পূর্ণ সুবিধা গ্রহণ করে কোরিয়ান প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঢাকা আরও বিনিয়োগের আহ্বান করবে। তিনি বলেন- ‘আমরা আরও কোরিয়ান কোম্পানিকে আকৃষ্ট করার জন্য সেখানে বিশাল জমি বরাদ্দ করেছি (কেইপিজেড)।’ এছাড়া, মোমেন বলেন, বাংলাদেশ আইসিটি খাতে আরও উন্নতির জন্য কোরিয়ান প্রযুক্তিগত সহায়তাও চাইবে। ব্যবসা ও বাণিজ্য খাতের পাশাপাশি রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশও কোরিয়ান সমর্থন চাইবে। তিনি বলেন- ‘আমরা সুস্পষ্টভাবে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসন নিয়ে আলোচনা করব। এটি নিয়ে এখন আমাদের সকলের সঙ্গে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কেউ এখানে আসবে, আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে (রোহিঙ্গা সঙ্কট) সমাধানের জন্য তাদের সমর্থন চাইব।’ হাসিনা-লি আলোচনা আজ ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি নাক ইওন আজ রবিবার দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে আলোচনায় বসবেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, দু‘নেতা রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টা দিকে তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠকে বসবেন। দু’দেশের মধ্যকার আনুষ্ঠানিক আলোচনার আগে দু’নেতা কিছু সময়ের জন্য একান্তে আলাপ করবেন। প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ কোরিয়ার নেতা লি নাক ইওনকে বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের টাইগার গেটে স্বাগত জানাবেন। খবর বাসসর। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, দু’দেশের আনুষ্ঠানিক আলোচনার পর দু’প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দু’দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। প্রেস সচিব বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরের পর দুই নেতা যৌথ বিবৃতি দেবেন। সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ত্যাগের আগে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী পরিদর্শক বইয়ে সই করবেন। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী শনিবার বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে একটি বিশেষ ফ্লাইটযোগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বিমানবন্দরে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী এই সফরকালে লি নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, দু’দেশের জনগণ পর্যায়ে যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতার উপায় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও আইসিটি সেক্টর ছাড়াও বাংলাদেশ দীর্ঘ দিনের রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে কোরিয়ার সমর্থন চাইবে। তিনি আরও বলেন, আমরা অবশ্যই রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনা করব, এটি এখন আমাদের সকলের সঙ্গে আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারাই আমাদের এখানে আসবেন, আমরা তাদের কাছেই এ সমস্যার (রোহিঙ্গা সঙ্কট) সমাধানে সহযোগিতা চাইব।
×