ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফকির সিরাজের জন্মদিনে আনন্দ আয়োজন

প্রকাশিত: ১০:১৭, ১৩ জুলাই ২০১৯

 ফকির সিরাজের জন্মদিনে আনন্দ আয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রচারের আলোয় আসেন না সবাই। কেউবা আত্মপ্রচারের চেয়ে আপন কাজটাকেই বেশি ভালবাসেন। তেমনই এক নিভৃতচারী গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির সিরাজ। গণসঙ্গীতকে হাতিয়ার করে তার দীর্ঘ পথচলা। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান থেকে স্বৈরাচারবিরোধী কিংবা যুদ্ধাপরাধী আন্দোলনসহ দেশের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে গণমানুষের গান নিয়ে থেকেছেন রাজপথে। সংস্কৃতির পথরেখায় অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে রেখে চলেছেন নিরবচ্ছিন্ন ভূমিকা। গত ৭ জুলাই ছিল আত্মপ্রচারহীন এই শিল্পীর ৬৫তম জন্মবার্ষিকী ও ৬৬তম জন্মদিন। নিজেও না চাইলেও সুহৃদদের ভালবাসায় সেই জন্মদিনটি উদ্্যাপিত হলো শুক্রবার সন্ধ্যায়। তাকে জানানো হলো ফুলের শুভেচ্ছা। কাটা হলো কেক। ছিল কবিতার শিল্পিত উচ্চারণ ও সুরে বাধা শুভাকাক্সক্ষীদের সঙ্গীত পরিবেশনা। আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সুইমিং পুল চত্বরে। বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির সিরাজের ৬৫ শীর্ষক অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সহযোদ্ধারা। অনুষ্ঠানের শুরুতে ফকির সিরাজকে নিবেদিত সঙ্গীত পরিবেশন করেন পরিষদের শিল্পীরা। সবাই মিলে গেয়ে ওঠেন তপন বাগচী রচিত অলেকা দাস গুপ্তর সুরারোপিত গান- উৎসবে সঙ্গীতে পথে আর প্রান্তরে ... সকলের অতিপ্রিয় ফকির সিরাজ। এরপর কাটা হয় জন্মদিনের কেক। ফকির সিরাজকে নিবেদিত আলোচনার মাঝে সাজানো ছিল সঙ্গীত পরিবেশনা ও কবিতা আবৃত্তি। আলোচনায় অংশ নেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহসভাপতি মাহমুদ সেলিম, পথনাটক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ গিয়াস, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট প্রমুখ। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ, পথনাটক পরিষদ, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের থেকে শিল্পীকে জানানো হয় জন্মদিনের ফুলের শুভেচ্ছা। অনুভূতি প্রকাশে ফকির সিরাজ বলেন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান থেকে গণসঙ্গীতকে সঙ্গী করে রাজপথে নেমেছি। মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করতে অংশ নিয়েছি মুক্তিযুদ্ধে। পরবর্তীতে শোষণমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রগতিশীল রাজনীতির পাশাপাশি সক্রিয় থেকেছি সংস্কৃতি অঙ্গনে। আত্মপ্রচারকে পেছনে ফেলে কাজ করেছি সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে। আমাকে ঘিরে আজকের এই আয়োজনে এসে নিজেকে সফল মনে হলো। যে ভালবাসা দেখানো হলো আমার কাছে সেটা কোন রাষ্ট্রীয় পদকের চেয়ে কম নয়। এই ভালবাসায় দায়িত্বটি আরও বেড়ে গেলো। গণসঙ্গীত ও সংস্কৃতির জাগরণের মাধ্যমে আরও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে আমাকে। ফকির সিরাজের মূল্যায়নে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, কিছু মানুষ আছেন যারা নিজেকে প্রকাশের চেয়ে কাজকে প্রাধান্য দেন। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ তেমনই এক গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির সিরাজ। স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রাম, যুদ্ধাপরাধবিরোধী আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারসহ গণমানুষের অধিকার আদায়ের প্রতিটি সংগ্রামের লড়াকু যোদ্ধা ফকির সিরাজ। সংস্কৃতির স্রোতধারায় উজ্জীবিত সেই লড়াইয়ে তিনি বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছেন। নেতৃত্বেগুণেই ফকির সিরাজ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সহসাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রায় চার দশক ধরে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর সংগঠক ও শিল্পী হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। ফকির আলমগীর বলেন, বিত্ত-বৈভব ও খ্যাতি মানুষের মাঝে প্রাচীর গড়ে দেয়। আর সেই প্রেক্ষাপটে প্রচারের মোহ ত্যাগ করে ফকির সিরাজের মতো ত্যাগী মানুষরাই বেগবান করে সংস্কৃতির আন্দোলনকে। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন আবিদা রহমান সেতু, সমর বড়ুয়া ও অলোক দাস গুপ্ত। কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী রফিকুল ইসলাম, মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল ও শাহাদাৎ হোসেন নীপু। ছায়ানটে নজরুলসঙ্গীতের আসর ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, বৃষ্টিঝরা সন্ধ্যায় ভেসে বেরাল নজরুলের গানের সুর। হৃদয় উতলা সেই বাণী আর সুরের অবগাহনে সিক্ত হলো শ্রোতার অন্তর। শ্রোতায় পরিপূর্ণ ছিল নজরুলসঙ্গীতে সাজানো সেই সঙ্গীতাসরটি। শুক্রবার সন্ধ্যায় এভাবেই প্রাণের প্রবাহে উদ্দীপ্ত হয় ছায়ানট আয়োজিত শ্রোতার আসর। ধানমন্ডির ছায়ানট ভবনের রমেশচন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনকেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অমিত আচার্য হিমেল গেয়ে শোনান ‘গগনে প্রলয় মেঘের মেলা’ ও ‘তুমি দিলে দুঃখ অভাব’ শীর্ষক গান। আনিলা আমিরের কণ্ঠে ‘মালা গাঁথা শেষ না হতে’ ও ‘হে প্রিয় আমারে দিব না ভুলিতে’। অনামিকা সরকার সোমা পরিবেশন করেন ‘একেলা গোরী জলকে চলে’ ও ‘মেঘ-মেদুর বরষায়’। শরিফুর রহমান গেয়ে শোনান ‘দাঁড়ালে দুয়ারে মোর’ এবং ‘তুমি যদি রাধা হতে শ্যাম’। সানজিদা রহমানের গাওয়া গানের শিরোনাম ছিল ‘শ্রান্ত ধারা বালুতটে’ ও ‘কে নিবি ফুল’। নাওশিন তাবাসসুম শুনিয়েছেন ‘অন্তরে তুমি আছো চিরদিন’ ও ‘রিম ঝিম রিম ঝিম ঝিম’ শীর্ষক সঙ্গীত। জারি সুবাহ্্ গেয়েছেন ‘মাটির প্রতিমা পূজিস রে তোরা’ ও ‘জানি জানি প্রিয়’ শিরোনামের গান। ধ্রুব সরকার পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘আমি গগন গহনে’ ও ‘মাগো চিন্ময়ী রূপ ধরে আয়’। শুক্লা সরকার পরিবেশন করেন ‘শাওন আসিল ফিরে’ ও ‘আধো ধরণী আলো’ শীর্ষক সঙ্গীত। মৌসুমী সাহার কণ্ঠে গীত হয় ‘সংসারেরই দোলনাতে মা’ ও ‘তোমার বুকের ফুলদানিতে’। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠান। নিত্যপুরান নাটকের শততম মঞ্চায়ন ॥ প্রাচীনকাল থেকেই সমাজের বিদ্যমান উঁচু-নিচুর ভেদাভেদ। চিরকালই উচ্চশ্রেণীর কর্তৃক নিপীড়িত নিম্নবর্ণের মানুষ। আবার শ্রেণী বৈষম্যের সেই নিষ্পেষণে কখনও জেগে ওঠে সেই প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। বিদ্রোহের মাধ্যমে খুলে ফেলে শাসকের দম্ভের মুখোশ। মহাভারতের প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে সমাজের শ্রেণী বৈষম্য ও লড়াইয়ের সেই চিত্রই উঠে এসেছে নাট্যসংগঠন দেশনাটকের নিত্যপুরাণ নামের প্রযোজনায়। শুক্রবার বিকেলে ও সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে অনুষ্ঠিত হয় দর্শকনন্দিত নাটকটির নিরানব্বই ও শততম প্রদর্শনী। নাটকটি রচনার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন মাসুম রেজা। বৃদ্ধাঙ্গুলি বিসর্জনের শতরাত্রি শিরোনামে শততম এই মঞ্চায়নে নাটকটি আবার দর্শকদের মন জিতে নেয়। নিত্যপুরাণের শততম মঞ্চায়ন উপলক্ষ্যে শুক্রবার সকালে শিল্পকলা একাডেমিতে শিল্প বিচারে নিত্যপুরাণ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। আলোচক হিসেবে ছিলেন মফিদুল হক, খায়েরুজ্জাহান মিতু, রোবায়েত ফেরদৌস ও ড. মাহফুজা হিলালী। দুটি প্রদর্শনীতেই অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ২৪ বছর পর মঞ্চে দেখা মেলে অভিনেতা মাসুম রেজার। নিজের রচিত দ্রোণাচার্যের চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ১৯৯৫ সালের পর আবার মঞ্চে হাঁটলেন কুশলী এই অভিনেতা। টানা দুই যুগ পর অভিনয়ে ফেরা বিষয়ে মাসুম রেজা বলেন, নাটকই তার প্রাণ। তিনি নাটক লিখেছেন। নির্দেশনা দিয়েছেন। সেগুলো অনেকবার প্রদর্শিত হয়েছে। তবে শততম মঞ্চায়নে নিত্যপুরাণই প্রথম। রচয়িতা ও নির্দেশক হিসেবে এটা বড় পাওয়া। তিনি বলেন, অভিনয়ের মধ্য দিয়ে খুব সহজে দর্শকদের কাছে যাওয়া যায়। তবে তিনি পেছনেই কাজ করতে চেয়েছেন। দীর্ঘ বিরতির পর আবার মঞ্চে। এরপর ফের ফিরে যাবেন লেখা ও নির্দেশনার কাজে। শতকের পথে নাটকটিতে আরও চমক ছিল দর্শকদের জন্য। নাটকের অন্যতম চরিত্র দ্রৌপদীরূপে একই মঞ্চে দেখা মিলেছে শিরিন খান মনি, নাজনীন হাসান চুমকী, বন্যা মির্জা ও সুষমা সরকারের। গত ৯৮টি প্রদর্শনীতে বিভিন্ন সময়ে দ্রৌপদীর চরিত্রে অভিনয় করে এই চারজনই দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
×