ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তান্ত্রিকতার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ১৩ জুলাই ২০১৯

 তান্ত্রিকতার নামে হাতিয়ে  নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় ॥ তান্ত্রিকতার নামে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে বছরের পর বছর ধোঁকা দিয়ে চলছে এক ভন্ড তান্ত্রিক। জ্যোতিষ বিদ্যায় কোন অক্ষরজ্ঞান না থাকলেও স্বপ্নে প্রাপ্ত কথিত বিদ্যা দিয়েই সব সমস্যার সমাধান আর জটিল সব রোগের দাওয়াই নাকি দিতে পারেন দেবীগঞ্জের সুকুমার রায় নামে কথিত এক তান্ত্রিক। এমন বিজ্ঞাপনে দূরদূরান্ত থেকে যাচাই করতে এসে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন হাজারো সাধারণ মানুষ। প্রতি মাসে লোক ঠকিয়ে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তান্ত্রিক সুকুমার। এভাবেই কয়েক বছরে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। অভিযোগ মতে, ভন্ড এই তান্ত্রিক টাকা আয়ের পাশাপাশি নিজের রাজনৈতিক অবস্থানটাও শক্ত করে নিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের খুশি করেন বলেই তার এই প্রতারণা ব্যবসায় কোন সমস্যা হয় না। বছরের পর বছর এভাবেই নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন তার প্রতারণার ব্যবসা। দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার বাজার থেকে কয়েক শ’ গজ ভেতরেই কথিত জ্যোতিষ ও তান্ত্রিক সুকুমারের সুদৃশ্য বাড়ি। বাড়ির সামনে কীর্তনের সুদৃশ্য ঘর ও কালীমন্দির। বংশ পরম্পরায় তারা এই গণক ও তান্ত্রিকতার ব্যবসা করে আসছেন। স্থানীয়দের কাছে সুকুমার মাহান, তান্ত্রিক, জ্যোতিষ ও গণক বলে পরিচিত। স্থানীয়রা জানায়, ১০ বছর আগেও সুকুমারের বাড়িতে বাঁশের চাটি বেড়ার ঘর ছিল। এখন তার ঘরবাড়ি দেখলেই অনুমান করা যায় ব্যবসা ভালই জমে উঠেছে। দূরদূরান্ত থেকে নানা সমস্যা ও জটিল অসুখ নিয়ে ডাক্তার বাদ দিয়ে সুকুমারের কাছে আসছেন অনেকেই। তাদের জিম্মি করে কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসা লোকদের ভাগ্য গণনা ও সমস্যার সমাধান দিতে বসেন সুকুমার। শুরুতে রোগীকে মানসিকভাবে দুর্বল করে ফেলেন এই চৌকস গণক। পরে আসেন চিকিৎসাতে। দর্শন ফি ১১০ টাকা। আর চিকিৎসা ব্যয় হিসেবে পরে জনপ্রতি ৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন সুকুমার। রোগীদের মগজ ধোলাই করে জটিল রোগ, পারিবারিক ও দাম্পত্য অশান্তি সব সমস্যার দাওয়াই দেন সুকুমার। টাকা পেলে জিন ভূতের আছরও ছাড়িয়ে দেন তিনি। ভন্ড তান্ত্রিকের এ দাওয়াই কোন কাজেই আসে না বলে অভিযোগ করেন রোগীরা। কিন্তু সুকুমারের টাকার থলে ঠিকই ভরতে থাকে। মাধ্যমিকের গন্ডি না পেরোতে পারলেও গণক ও তান্ত্রিকতার এই প্রতারণার দ্বারা সুকুমার সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার এই প্রতারণার ফাঁদে সাধারণ নিম্নবিত্তের মানুষরাই বেশি পা দিচ্ছেন। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় আগে থেকেই দূরদূরান্ত থেকে অনেক মানুষ এসেছেন সুকুমারের দাওয়াই নিতে। অনেকেই ভোর থেকে অপেক্ষা করছেন। দূরের ভক্তদের থাকার জন্য আশ্রমও করেছেন তিনি। দুই কক্ষ বিশিষ্ট অন্ধকার প্রায় একটি বন্ধ ঘরে আগত মানুষের ভাগ্য গণনা করছেন সুকুমার। ঘরে ঢুকেই দেখা গেল একটি উঁচু আসনে বসে টাকা গুনছেন এক ব্যক্তি। সাদা ধুতি, গেরুয়া পাঞ্জাবি আর সংস্কৃত স্লোক লেখা একটি চাদর পরে আছেন তিনি। সুকুমার চন্দ্র প্রথমে নিজেকে জ্যোতিষী দাবি করলেন। খানিক পরেই নিজেকে তান্ত্রিক ও কালী সাধক বলে পরিচয় দিলেন। মাধ্যমিকের গন্ডি পাড় হননি বলেও স্বীকার করে সুকুমার। জানালেন, দাদা লক্ষ্মীকান্ত থেকে তাদের এই ব্যবসার শুরু। পিতা চন্দ্রকান্তও নাকি জ্যোতিষ ছিলেন। অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রী এমপিও নাকি তার ভক্ত।
×