ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যামুক্ত ভাসমান বাড়ি

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ১৩ জুলাই ২০১৯

বন্যামুক্ত ভাসমান বাড়ি

সিরাজগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠে রানীগ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশেই নির্মিত এই ভাসমান বাড়ি বা বন্যামুক্ত বাড়িটিকে বলা হচ্ছে উভচর বাড়ি। বন্যার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়িটিও ভাসতে থাকবে এবং পানি সরে গেলে তা মাটিতে যথাস্থানে অবস্থান করবে তিন ভাগ জল আর এক ভাগ স্থলের এই পৃথিবীতে মানুষের আবাস যে স্থলেই সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের এই সময়ে জীবন যাপনেও এসেছে ব্যতিক্রম উদ্যোগ, আয়োজন। তাই মানুষ স্থলের পাশাপাশি জলেও আবাসন গড়তে উৎসাহী হচ্ছে। ইউরোপ আমেরিকায় এমন আবাসন নতুন নয়। তবে বাংলাদেশে এমন বাড়ি নতুন। সিরাজগঞ্জের যমুনারপাড়ে বন্যার সময় জলে বসবাসের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে এমনই একটি ভাসমান বাড়ি। দাবি করা হচ্ছে এটি সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তিতে তৈরি বাংলাদেশের প্রথম বন্যা প্রতিরোধক উভচর বাড়ি। তবে বন্যার পানি স্পর্শ করার আগেই বাড়ির মালিককে তা হস্তান্তর করা হয়েছে। আট শতক জমির ওপরে দুই হাজার বর্গফুটের আধুনিক ডিজাইনের নান্দনিক স্থাপনা হিসেবে পরিচিত এই বাড়ি দেখার জন্য এ অঞ্চলের মানুষকে আকর্ষণ করছে। ১৯০০ সালে বা তারও কিছু আগে থেকে জলে বাড়ি তৈরির ভাবনা দানা বাঁধতে শুরু করে স্থপতিদের মধ্যে। আর তখন থেকেই গড়ে উঠতে শুরু করে সিয়াটল, ওয়াশিংটন ও পোল্যান্ড অরিগানোর মতো জলভিত্তিক শহর। বহু বছর আগে থেকে জিম্বাবুয়ে, ইন্ডিয়া, লাওস ইত্যাদি দেশে পর্যটন আকর্ষণ, যাতায়াত বা আনন্দভ্রমণে নানা ধরনের বোট হাউস ব্যবহার হয়ে আসছিল। ঐতিহ্যগতভাবে কিছু সম্প্রদায়ের লোক এখনও নৌকাতে বসবাস করে। পাশাপাশি বাণিজ্যিক মাপকাঠিতেও ভাসমান বাড়ির চাহিদা এখন ব্যাপক। পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে সিরাজগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠে রানীগ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশেই নির্মিত এই ভাসমান বাড়ি বা বন্যামুক্ত বাড়িটিকে বলা হচ্ছে উভচর বাড়ি। বন্যার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়িটিও ভাসতে থাকবে এবং পানি সরে গেলে তা মাটিতে যথাস্থানে অবস্থান করবে। উন্নত প্রযুক্তিতে বাড়িটি নির্মাণে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে নেদারল্যান্ড সরকারের দুই গবেষক এবং বাংলাদেশের একজন বুয়েট গবেষক। বিশেষ প্রযুক্তিতে সিরাজগঞ্জে নির্মিত বাড়িটি বাংলাদেশে প্রথম বলা হচ্ছে। তবে এর আগেও বাংলাদেশের শরীয়তপুরের শিবচরে একটি ভাসমান বাড়ি নির্মিত হয়েছে। তবে তার প্রযুক্তির সঙ্গে এ বাড়ির প্রযুক্তিগত এবং কৌশলগত ভিন্নতা রয়েছে। শরীয়তপুরের শিবচরের বাড়িটি নির্মাণে পানির ওপর খালি ড্রাম সাজিয়ে ঘর তৈরি করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জের যমুনার পাড়ে বাড়িটি নির্মাণে ড্রামের পরিবর্তে বিশেষ ধরনের ভাতশোলার প্লেট ব্যবহার করা হয়েছে। এ প্লেটটিও আমদানি করা হয়েছে দেশের বাইরে থেকে। তবে কোন দেশ থেকে তা পরিষ্কার করে বলা হয়নি। স্থানীয় পর্যায়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ও সরকারী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সহযোগিতা করেছেন। বুয়েটের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শাহ আলম খান বন্যা প্রতিরোধক উভচর বাড়ি তৈরির প্রযুক্তি এবং এর সুবিধা সম্পর্কে বলেছেন বন্যা প্রতিরোধক উভচর বাড়ি তৈরি প্রযুক্তি বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো পরিচিত পেতে যাচ্ছে। যেখানে গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করছে আরবানাইজিং ডেল্টাস অব দ্যা ওয়ার্ল্ড প্রকল্পের বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের কোর বাংলাদেশ প্রজেক্ট এবং নেদারল্যান্ডসের আইএইচই ডেলফ্ট। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে বন্যা আক্রান্ত জনগোষ্ঠী বন্যার কারণে যে আর্থিক ও সামাজিক ক্ষতি হয় তা থেকে দ্রুত প্রতিকার পাওয়া যায়। তিনি আরও জানান, বন্যা প্রতিরোধক উভচর বাড়ির সুবিধা হলো- এই বাড়ি বন্যার পানিতে ভেসে উঠবে এবং বন্যার পানি যখন সরে গেলে তা আবার যথাস্থানে প্রতিস্থাপিত হবে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে দুইমাসে আট শতক জায়গার ওপর নির্মিত প্রথম ২ হাজার বর্গফুট বাড়িটি তৈরিতে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে পরবর্তী বাড়ি নির্মাণ ব্যয় প্রথম বাড়ির ব্যয় থেকে অনেকটা কমে যাবে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। বন্যাপ্রবণ এলাকা হিসেবে সিরাজগঞ্জে এমন বাড়ি আশার সঞ্চার করে। কিন্তু বন্যা আসার আগেই বাড়িটির নির্মাণ কাজ শেষ না করে তড়িঘড়ি করে উদ্বোধন করা হয়েছে। কোন ঘরেই নেই দরজা-জানালা। আর পানির জন্য আলাদা মোটরের ব্যবস্থা থাকলেও এটি অন্যান্য জায়গায় সরবরাহের জন্য নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। শহিদুল ইসলাম, যিনি এই ঘরটি তৈরির জন্য জায়গা দিয়েছেন, তিনি জানালেন, ঘরটি তৈরির আগে যারা তার সাথে যোগাযোগ করেছেন। তারা যেমনটি বলেছিলেন তেমনটি করে ঘরটি তৈরি করা হযনি। এখনও বসবাসের উপযোগী নয় এই বন্যামুক্ত বাড়ি। বাড়িটি পানিতে ভাসলেও, বৃষ্টির পানি সহজেই ঘরের মধ্যে চলে যায়। তাতে ঘরের মধ্যে থাকা কষ্ট হবে। আর এনজিও’র কোন এক কর্মকর্তা তাকে জানিয়েছেন, ঘরের দরজা-জানালা তাকেই তৈরি করে নিতে হবে। যেটা তিনি করতে নারাজ। কেননা, উঁচু ভিটায় তার টিনশেড বিল্ডিং রয়েছে। যেখানে তিনি আরামেই আছেন। তবে বন্যার সময় আশপাশের মানুষ বন্যামুক্ত বাড়িতে এলে তিনি সেখানে তাদের থাকতে দেবেন। পাশাপাশি তিনি আশা করছেন খুব শীঘ্রই বাড়ির অন্যান্য নির্মাণ কাজগুলো শেষ করা হবে। বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ থেকে
×