ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তার পানি বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপরে

প্রকাশিত: ০০:০৭, ১২ জুলাই ২০১৯

তিস্তার পানি বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপরে

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী॥ তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি ঘটেছে। প্রচন্ড গতির ¯্রােত ধারায় তিস্তা নদী অববাহিকা কাঁপছে। উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার তিস্তার পানি দুই দফায় বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭ ও ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আজ শুক্রবার তিস্তা নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পায়। সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৬০ মিটার) ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভাটিতে তীরবেগে ধাপিত হচ্ছে। উজানের ঢল সামাল দিতে খুলে রাখা হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট। ফলে নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলা ও উপজেলার প্রায় ১৫টি চর গ্রাম হাটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। এতে প্রায় ১০হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। তিস্তার হিং¯্ররূপ এলাকাবাসীকে আতংঙ্কগ্রস্থ করে তুলেছে বলে ইউপি চেয়ারম্যানগন দাবী করেছে। এ ছাড়া তিস্তা বিপদসীমায় চলে যাওয়া নদীর বিভিন্ন স্থানের বাঁধে আঘাত করছে স্রোতে। ফলে বাঁধগুলো হুমকীর মুখে পড়েছে। জনপ্রতিনিধিরা জানান নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা অববাহিকার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি ও জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের বিস্তীর্র্ণ এলাকার ১৫টি চর ও গ্রামের পরিবারগুলো বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে । তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরন কেন্দ্র জানিয়েছে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সন্ধ্যা ৬টায় ২৫ ও রাত ৯টায় আরও ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শুক্রবার সকাল ৬টায় বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তা পাড়ের মানুষজন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওই হিসাব মানতে নারাজ। এলাকাবাসীর পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে দাবি তিস্তা নদীর পানি কম করে হলেও বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড অজ্ঞাত কারনে নদীর পানির সঠিক হিসাব প্রকাশ করছে না। সরেজমিনে দেখা যায় গত দুই দিনের চেয়ে নদীর গর্জন অনেকাংশে বেড়ে গেছে। নদীর উথাল পাতাল ঢেউ শোঁ শোঁ শব্দ করে দূর্বার গতিতে ভাটির দিকে ধাপিত হচ্ছে। ডিমলা উপজেলার পূবর্ ছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রভাষক আব্দুল লতিফ খান জানান গত দুই দিনের বন্যায় চেয়ে শুক্রবার উজানের ঢলের গতি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এলাকার নিচু ও উঁচু স্থানে নদীর পানি প্রবেশ করেছে। চরগ্রাম গুলোর ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। ইতিমধ্যে তার এলাকার ১ হাজার ১৪০ পরিবারের বসত বাড়ীতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এলাকার ঝাড়শিঙ্গেরশ্বর মৌজাটি তলিয়ে গেছে। ঘরবাড়িতে পানি আর পানি। হুমকীর মুখে পড়েছে সেখানকার মাটির রাস্তাগুলো। রাস্তার উপর দিয়ে নদীর পানি প্রবাহিত হওয়ায় এলাকাবাসী বালির বস্তা দিয়ে পানি ঠেকানোর চেস্টা করছে। ঝুনাগাছ চাপানি ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, ছাতুনামার চর,ফরেষ্টের চর, সোনাখুলীর চর ও ভেন্ডাবাড়ি চরে দেড় হাজার পরিবারের বসতবাড়ীতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। তিনি জানান দক্ষিন সোনাখুলী এলাকায় তিস্তা নদীর ডান তীরের প্রধান বাঁধের অদুরে ইউনিয়ন পরিষদের তৈরী করা মাটির বাঁধ হুমকীর মুখে পড়েছে। বাঁধের উপর দিয়ে তিস্তা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় দক্ষিন সোনাখুলী কুঠিপাড়া গ্রামের বসত ঘর ও আবাদী জমিগুলো তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। এই বাঁধটি বিধ্বস্থ্য হলে এলাকাটি বিলিন হবার ধারনা করা হচ্ছে। ইতো মধ্যে আমনের বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। খালিশা চাপানি ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান সরকার বলেন, পূর্ব বাইশ পুকুর ও ছোটখাতা মৌজার ৫ শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ীতে বন্যার পানি বয়ে যাচ্ছে। নদী সংলগ্ন বসবাসরত পরিবারগুলো সতর্ক অবস্থায় থাকার জন্য বলা হয়েছে। টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন তার এলাকার দক্ষিন খড়িবাড়ি ও পূর্ব খড়িবাড়ি, একতার চর, টাবুর চর মৌজায় তিস্তার বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ইতিমধ্যে দুই সহ¯্রাধিক পরিবারের বসতবাড়ীতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। খগাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন বলেন, কিসামত ছাতনাই মৌজার ৩ শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ীতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। প্রতিটি বাড়ীর উঠানে হাটু পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে তিস্তা পানি বৃদ্ধিতে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার শৌলমারী বান পাড়ায় ডানতীর প্রতি গ্রাম রক্ষা বাধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দা মনির উদ্দিনের ছেলে আশরাফ আলী ও দিদার রহমান জানায়, পরিবার পরিজন নিয়ে খুবেই ভয়ের মধ্যে আছি, এই বাধ ভেঙ্গে শুধু এই বান পাড়ায় নয়, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের ২০ হাজারেরও বেশি পরিবারের ঘরবাড়ি তিস্তা নদীতে পরিনত হবে। আমরা নিজেরাই বাঁশ ও কাঠ ফেলে বাধের ভাঙ্গন ঠেকাতে চেস্টা করছি। ছাবেদ আলী ও জহুরুল হক অভিযোগ করে বলেন, বাধ ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোড কোন পদক্ষেপ গ্রহন করে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুল হকের কাছে ভাঙ্গন রোধের জন্য বলা হলে জিও ব্যাগের বালু ভরে তারা ভাঙ্গন রোধের ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু মুখে বললেও তারা কাজ করেন না। ফলে আমরা নিজেরাই বাঁশ ও কাঠ ফেলে বাধের ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারী জোনের এসডি হাফিজুল হক জানায় বানপাড়া বাঁধ ৬০ মিটার পর্যন্ত ভাঙ্গন পাওয়া গেছে। আমরা ১২০ মিটার পর্যন্ত এই ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করছি। তবে এ বাধটি প্রকল্পের মাধ্যমে স্থায়ীভাবেরক্ষার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যা আগামী সেপ্টেম্বর থেকে এর কাজ শুরু হবে বলে আশা করা যায়। অপর দিকে ডিমলা উপজেলার চরখড়িবাড়ি এলাকায় স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বাঁধটি তিস্তার পানি তোড়ে ভাঙ্গনের মুখে পড়ায় ওই এলাকার ২হাজার পরিবার আতঙ্কের মুখে পড়েছে। বাঁধটি রক্ষার্থে বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদ হতে ১০ লাখ টাকার বরাদ্দ দেয়া হয় বলে ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক জানান। তিনি ওই বাধের ভাঙ্গর রোধে লোকজন নিয়ে কাজ করছেন বলে জানায়। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, উজানের ঢল ও বৃস্টিপাতের কারনে আমরা সর্তকাবস্থায় রয়েছি। শুক্রবার তিস্তা নদীর পানি সকাল ৬টায় বিপদসীমা অতিক্রম করে ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যারাজের সবকটি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে মর্মে তিনি স্বীকার করেন।
×