ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইসলামী পর্যটনকে বিশ্বব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলুন

প্রকাশিত: ১১:০৬, ১২ জুলাই ২০১৯

ইসলামী পর্যটনকে  বিশ্বব্র্যান্ড হিসেবে  গড়ে তুলুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামী পর্যটনকে বিশ্ব বাণিজ্য ব্র্যান্ড হিসেবে বিকশিত করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলামী পর্যটনকে ‘বিশ্ব বাণিজ্য ব্র্যান্ড’ হিসেবে গড়ে তুলতে সার্বিক প্রয়াস ও রোডম্যাপের প্রয়োজন অতি জরুরী। কারণ এর বাজার বার্ষিক ৮ দশমিক ৩ শতাংশ হারে বেড়ে ২০২১ সাল নাগাদ তা ২৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছবে।’ তিনি বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ঢাকা দ্য ওআইসি সিটি অব ট্যুরিজম-২০১৯’ উদযাপন উপলক্ষে দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে এ আহ্বান জানান। খবর বাসসর। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি মুসলিমউম্মাহর একসঙ্গে কাজ করা একান্ত প্রয়োজন। যাতে আমরা সারাবিশ্বে সকলের সঙ্গে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে চলতে পারি। নিজেদের যে কোন সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে পারি। যাতে অন্য কেউ মুসলমানদের ভাগ্য নিয়ে খেলতে না পারে।’ তিনি আন্তঃওআইসি পর্যটক প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংস্থাটির সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভিসা সহজীকরণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং পর্যটনকেন্দ্রিক খাতগুলোর মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের ওপরও বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর মুসলিম পর্যটক এবং পাশ্চাত্য দেশগুলোর জন্য বিশ্বের সর্ববৃহৎ বালুময় সমুদ্রতট কক্সবাজারে পৃথক পর্যটন স্পট তৈরির প্রস্তাব করেন। তিনি বঙ্গপোসাগরের নিকটবর্তী দেশগুলোকে নিয়ে বাংলাদেশের একটি নৌট্যুরিজম রুট তৈরির পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান আর এ এম ওবায়দুল মুকতাদির চৌধুরী, মন্ত্রণালয়টির সচিব এম মহিবুল হক এবং ওআইসির সহকারী মহাসচিব মুসা কুলাকলিকায়া অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে ৪শ’ বছরের প্রাচীন নগরী ঢাকার মুসলিম ঐতিহ্য ও নিদর্শন নিয়ে একটি অডিও ভিজুয়াল পেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় দফতর ও বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তারা, সাবেক মন্ত্রী ও উপদেষ্টাসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনার, কূটনৈতিক মিশনের সদস্য, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি এবং অনুষ্ঠানে যোগদানকারী প্রায় ৩০টি দেশের পর্যটনমন্ত্রী ও তাদের প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি, ঢাকায় ওআইসির পর্যটনমন্ত্রীদের ১০ম সম্মেলনে গৃহীত ঢাকা ঘোষণায় ঢাকাকে ওআইসি সিটি অব ট্যুরিজম-২০১৯ হিসেবে নির্বাচন করা হয়। ৪ ওআইসিভুক্ত রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে শীর্ষস্থান দখল করে ঢাকা। সম্মেলনে বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজারবাইজানের ‘গাবালা’কে ২০২০ সালের সিটি অব ট্যুরিজম হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ঢাকাকে সিটি অব ট্যুরিজম ঘোষণাকে উদযাপনের জন্য আজ এবং আগামীকাল বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিদেশী পর্যটকদের জন্য ঢাকা ও এর আশপাশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক মুসলিম নিদর্শনগুলো পরিদর্শন, কনসার্ট এবং হাতির ঝিলে লেজার শো এবং আতশবাজির প্রদর্শন করা হবে। ওআইসির ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে মুসলিম ট্যুরিস্টের সংখ্যা ১৫৬ মিলিয়ন যা ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়াবে ১৮০ মিলিয়ন। একই বছর সারা বিশ্বের জনসংখ্যার ২৬ শতাংশ হবে মুসলিম। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ‘ইসলামী অর্থনীতি’ সম্পর্কে বলেন, ‘এটি বর্তমানে নবরূপে বিকাশ লাভ করছে। হালাল ফুডস, ইসলামী ফাইন্যান্স, হালাল ফার্মাসিউটিক্যালস এবং প্রসাধনী, হালাল পর্যটন ইত্যাদি হচ্ছে ইসলামিক অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান খাত।’ ‘এ খাতগুলো বিকাশের জন্য ওআইসি সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রসমূহের সরকারী ও বেসরকারী উভয় খাতের সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব একান্ত প্রয়োজন’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা ওআইসি পর্যটন নগরী ২০১৯’র মহা-উদযাপন আন্তঃওআইসি পর্যটক প্রবাহ বৃদ্ধি এবং টেকসই পর্যটন উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। যা সংস্থাভুক্ত রাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বিনিয়োগের সুযোগ উন্মোচন ও টেকসই উন্নয়নের প্রয়োজনীয় বিষয়টি মক্কা মুকাররমায় গত ৩১ মে অনুষ্ঠিত ওআইসির ১৪তম সম্মেলনে গুরুত্বের সঙ্গে স্বীকৃত হয়। মক্কা ঘোষণায় ওআইসি রাষ্ট্রসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে যৌথ ইসলামী কর্মপন্থা গ্রহণের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত হয়। তিনি বলেন, এর আগে ২০১৮ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি, ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওআইসি সদস্যভুক্ত পর্যটন মন্ত্রীদের ১০ম সম্মেলনে গৃহীত ঢাকা ঘোষণায় আন্তঃসাংস্কৃতিক বিনিময়, সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও ইসলামী পর্যটন জনপ্রিয় করার গুরুত্ব স্বীকার করা হয়। একইসঙ্গে পর্যটন খাতে দক্ষতা, উন্নয়ন ও সার্টিফিকেশনের জন্য একটি ইনস্টিটিউট স্থাপনের গুরুত্ব অনুধাবন করা হয়। তাঁর সরকারের সময়ে সারাদেশের অবকাঠামো ও যোগাযোগ সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের বিকাশে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর ৬.১৫ কিমি দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পর্যটন নগরী কক্সবাজারে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। সেইসঙ্গে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মানের হোটেল নির্মাণ ও অন্যান্য পর্যটন সুবিধাও থাকবে। জিডিপি ৮ দশমিক ১৩ শতাংশে উন্নীত, মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯০৯ ডলারে উন্নীত, মূল্যস্ফীতি কমানো এবং বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্রাজুয়েশন লাভের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
×