ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে পরামর্শক নিয়োগ চুক্তি

প্রকাশিত: ১১:০৬, ১২ জুলাই ২০১৯

 ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে পরামর্শক  নিয়োগ চুক্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিমানবন্দর থেকে ইপিজেড পর্যন্ত চব্বিশ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে আরেক দফা অগ্রগতি হলো। এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্পেনের টিপসা এবং বাংলাদেশের দোহওয়া এ্যান্ড ডিডিসির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী ফেরদৌস আলম এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অন্তোরিও রদ্রিগেজ ক্যাস্তেলানস চুক্তিতে সই করেন। সোমবার সেতু ভবনে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয়েছে। এতে উপস্থিত থেকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতুর পাইলিংয়ের জন্য ‘মাথা লাগবে’ বলে গুজব রটনাকারীদের চিহ্নিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন। এদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে শেষে মন্ত্রী এ কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৩০৪ কোটি ১৪ লাখ ৬৯ হাজার টাকার চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হবে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে আবদুল্লাহপুর, ধউর, বড় আশুলিয়া, জিরাবো, বাইপাইল হয়ে ঢাকা ইপিজেড পর্যন্ত যাবে এই এক্সপ্রেসওয়ে। প্রকল্পের আওতায় ১০ দশমিক ৮৩৪ কিলোমিটার র‌্যাম্প, ১৪ দশমিক ২৮ কিলোমিটার রাস্তা, নবীনগরে এক দশমিক ৯৫১ কিলোমিটার ফ্লাইওভার, ২ দশমিক ৭২ কিলোমিটার সেতু এবং ১৮ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ করা হবে। ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানান মন্ত্রী কাদের। প্রকল্প সহায়তা প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা এবং জিওবি প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় আশুলিয়া এলাকার বিস্তীর্ণ হাওড়ের জলপ্রবাহ অবাধ রাখা, ঢাকা মহানগর ঘিরে সার্কুলার জলপথ এবং পরিবেশ সুরক্ষায় আশুলিয়ায় বিদ্যমান সড়ক বাঁধের পরিবর্তে প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি চারলেন সেতু নির্মাণ করা হবে। এক্সপ্রেসওয়ের নিচ দিয়ে বিদ্যমান প্রায় ১৪ কিলোমিটার সড়ক চারলেনে উন্নীত করা হবে। নবীনগরে দুটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় এক কিলোমিটার। সড়কের দু’পাশে প্রায় ১৮ কিলোমিটার ড্রেনেজ নির্মাণ করা হবে। ঢাকা মহানগরীর সঙ্গে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল ও ইপিজেড এর যোগাযোগ সহজতর করতে বাংলাদেশ ও চীন সরকার জি-টু-জি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। শীঘ্রই এই ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হবে। বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন, আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। নইলে পদ্মা সেতুতে কেন মানুষের মাথা লাগবে, কেন রক্ত লাগবে- এ রকম একটা অদ্ভূত, উদ্ভট, অবিশ্বাস্য কল্পকাহিনীর মতো বিষয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে। এটা নিয়ে সারাদেশে আতঙ্ক সৃষ্টিরও একটা পাঁয়তারা চলল। পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে ‘মানুষের মাথা লাগবে’ বলে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত গুজবে বিভ্রান্ত না হতে সম্প্রতি এক স্মারকপত্রের মাধ্যমে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সরকারের সেতু বিভাগ। গুজব রটনাকারীদের ধরতে এরইমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী কাদের বলেন, ‘আমাদের সেতু বিভাগ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, র‌্যাব এদের সঙ্গে কথা-বার্তা হয়েছে। তারা দায়িত্ব নিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনিও নির্দেশ দিয়েছেন এ ধরনের একটা অবৈজ্ঞানিক, অবাস্তব, হাস্যকর উপাদান যারা করেছে তাদের বের করা দরকার। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া উচিত। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে একজন গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয় জানা গেছে কি না জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখনও জানা যায়নি। অনুসন্ধান চলছে। এখনও বিষয়টি পুরোপুরি জানা যায়নি। সবই জানা যাবে। গোপন থাকার কোন কারণ নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা এ ধরনের অপপ্রচার চালিয়েছে সে সত্য তো চাপা দিয়ে রাখা যাবে না। সত্য উদঘাটিত হবে, দেশের এমন একটা বিষয় নিয়ে অপপ্রচারে যারা জড়িত শাস্তি তাদের পেতেই হবে। অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতুর অগ্রগতি তুলে ধরেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত মূল সেতুর কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৮১ ভাগ, সার্বিক অগ্রগতি ৭১ ভাগ। নদীতে মূল সেতুর ২৬২টি পাইলের মধ্যে ১৬১ দশমিক ৫টি পাইলের কাজ হয়ে গেছে। অবশিষ্ট পাইলের অর্ধেকের কাজ জুলাইয়ের ১৫ তারিখের মধ্যে শেষ হবে। মূল সেতুর ৪২টি পিয়ারের মধ্যে ৩০টির কাজ শেষ হয়েছে। মাওয়া প্রান্তে ২৫টি স্প্যানের মধ্যে ১৪টি স্থাপন করা হয়েছে। ফলে এখন পদ্মা বহুমুখী সেতুর দুই হাজার ১০০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে।
×