ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুষ্প্রাপ্য অর্কিড

প্রকাশিত: ১০:১৪, ১২ জুলাই ২০১৯

দুষ্প্রাপ্য অর্কিড

ফুল ভালবাসেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আর ফুল যারা ভালবাসেন, তাদের মনে অর্কিড দখল করে আছে এক অনন্য স্থান। পৃথিবীর সবচেয়ে দুষ্প্রাপ্য অর্কিডগুলোর কথা কি জানেন আপনি? চলুন জেনে নেয়া যাক। লিখেছেন-মীম নোশিন নাওয়াল খান স্কাই ব্লুসান অর্কিড অর্কিডের এই প্রজাতিটি এখন পর্যন্ত শুধু তাসমানিয়া, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া এবং ভিক্টোরিয়ায় পাওয়া গিয়েছে। পাইরেটস রোড এবং ম্যাসন পয়েন্ট নামে দুটো এলাকায় এই ফুল পাওয়া যায়। রজনীগন্ধার মতো একটি দন্ডে সাজানো থাকে ৬টি পর্যন্ত নীল ফুল। সাধারণত এই ফুলের ছয়টি পাপড়ি থাকে। বেগুনি-নীল পাপড়িগুলোর মাঝখানটায় আছে হলুদ রঙের ছোঁয়া। স্কাই ব্লুসান অর্কিড বর্তমানে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০০২ সালে পৃথিবীজুড়ে এই অর্কিড ছিল ৬০টিরও কম। আইইউসিএন-এর রেড লিস্টে ‘ক্রিটিক্যালি এন্ডেনজার্ড’ প্রজাতি এটি। ভিয়েতনামিজ প্যাফিওপেডিলাম এই অর্কিডটির ফুল হালকা গোলাপি রঙের। এটি পাওয়া গিয়েছে উত্তর ভিয়েতনামের একটি প্রদেশে। সম্ভবত বন্য পরিবেশে এই প্রজাতির অর্কিড ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে অর্কিড সংগ্রাহকদের কাছে এখনও এই অর্কিডটি পাওয়া যায়। ২০০৩ সালে সর্বশেষ বন্য পরিবেশে এই অর্কিড দেখা গিয়েছিল। ধারণা করা হয়, বর্তমানে অর্কিডটি ৫০ বা তারও কম রয়েছে। আইইউসিএনের রেড লিস্টে ভিয়েতনামিজ প্যাফিওপেডিলামকে ‘ক্রিটিক্যালি এন্ডেনজার্ড’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ওয়েস্টার্ন আন্ডারগ্রাউন্ড অর্কিড এই ফুলটির রংও হালকা গোলাপি। একেকটা ফুলের মধ্যে ৮-৯০টা ছোট ছোট মেরুন রঙের ফুল থাকে। এই ফুল জন্মে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায়। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, এই অর্কিডের পুরো জীবনটাই কেটে যায় মাটির নিচে। এমনকি, এর ফুলও ফোটে মাটি-কাদার মধ্যে। এর কোন সবুজ পাতা বা সবুজ অংশ নেই। তাই এই অর্কিড সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য তৈরি করতে পারে না। এরা খাদ্য সংগ্রহ করে এক ধরনের ফাঙ্গাসের কাছ থেকে। এখন পর্যন্ত মাত্র ১০টি ওয়েস্টার্ন আন্ডারগ্রাউন্ড অর্কিড খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। ধারণা করা হয়, পৃথিবীজুড়ে এর সংখ্যা ৫০ বা তার কম। আইইউসিএন এর রেড লিস্টে এটি ‘ক্রিটিক্যালি এন্ডেনজার্ড’ হিসেবে তালিকাভুক্ত। ফেইরিস প্যাফিওপেডিলাম ফেইরি’স প্যাফিওপেডিলামের ফুল বেগুনি এবং সাদার মিশেল। ফুলের দৈর্ঘ্য হয় সাধারণত ১০ সেন্টিমিটারের মতো। শরতের শেষে ফুল ফোটে। এই অর্কিডটি পাওয়া যায় ভারতের পূর্ব হিমালয় থেকে আসাম অঞ্চলে। অদ্ভুত সুন্দর দেখতে এই ফুলটির বিলুপ্তির পথে যাওয়ার কারণ মূলত এর সৌন্দর্য। এর রূপ দেখে মানুষ ইচ্ছেমতো গাছ তুলে নিয়ে যাওয়ায় এই প্রজাতিটি এখন বিলুপ্তপ্রায়। এটিও আইইউসিএনের রেড লিস্টের অন্তর্ভুক্ত ‘ক্রিটিক্যালি এনডেনজার্ড’ হিসেবে। ধারণা করা হয়, এই অর্কিডও বর্তমানে ৫০টির কম রয়েছে বন্য পরিবেশে। রথসচাইল্ডস স্লিপার অর্কিড এই অর্কিডকে গোল্ড অফ কিনাবালু অর্কিডও বলা হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী অর্কিড সংগ্রাহকদের কাছে অনেক কদর এই ফুলটির। আর সেজন্যই এটি এখন বিলুপ্তির পথে। শুধুমাত্র মালয়েশিয়ার মাউন্ড কিনাবালুতে পাওয়া যায় এই অর্কিড। বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী এর একেকটি ফুল কালোবাজারে ৫০০০ ডলার পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। আর এই চাহিদার জন্য অতিরিক্ত ফুল তোলায় এই অর্কিডটির অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। আইইউসিএনের রেড লিস্টের অন্তর্ভুক্ত এই প্রজাতিটি সম্পর্কে আইইউসিএন জানিয়েছে, ৫০টিরও কম রয়েছে এই ফুলটি এখন বন্য পরিবেশে। আইইউসিএন আরও জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী অনেক বেশি জনপ্রিয়তা থাকলেও অর্কিড সংগ্রাহকরা রথসচাইল্ড’স স্লিপার অর্কিড চাষ করেন খুব কম। তাই বন্য পরিবেশ থেকেই ফুল তুলে আনা হয় বিক্রির জন্য। ফলে প্রজাতিটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। লিয়েমস প্যাফিওপেডিলাম হালকা গোলাপি রঙের এই অর্কিডটি পাওয়া যায় ইন্দোনেশিয়ার উত্তর সুমাত্রার মাত্র ৪ বর্গকিলোমিটার এলাকায়। দুষ্প্রাপ্য অর্কিডের তালিকায় এর নাম দেখে অনেকেই অবাক হবেন, কেননা অনলাইনে অর্কিড শপ বা ফোরামগুলোতে বিক্রি হয়ে থাকে লিয়েম’স প্যাফিওপেডিলাম। আর এই জনপ্রিয়তাই এর বিলুপ্তির পথে যাওয়ার কারণ। এক সময় প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত এই অর্কিড। ১৯৭১ সালের পর থেকে অতিরিক্ত ফুল তোলার কারণে এর সংখ্যা কমতে থাকে। বন্য পরিবেশে এটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। আইইউসিএনের রেড লিস্টে থাকা এই অর্কিডটি বর্তমানে বন্য পরিবেশে রয়েছে ৫০টির কম।
×