ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আলী যাকের

মধ্যাহ্ন, অপরাহ্ণ!

প্রকাশিত: ১০:০৯, ১২ জুলাই ২০১৯

 মধ্যাহ্ন, অপরাহ্ণ!

পর্ব-৩৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীনই থিয়েটারের প্রতি তার দুর্বলতার জন্ম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ফ্রান্সে অবস্থিত লিয়নে লোকনাট্য নির্মাণে সম্পৃক্ত হন। এখানেই তার থিয়েটারের প্রথাসিদ্ধ শিক্ষার শুরু। এরপর তিনি সুইজারল্যান্ডের জুরিখে চলে আসেন। এখানে হিটলারের ফ্যাসিবাদবিরোধী শিল্প সৃষ্টিতে তখনকার নাট্যজনেরা অত্যন্ত একাগ্রতা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। এই কাজে বার্টল্ট ব্রেশ্ট-এর দর্শন প্রধান অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। যদিও তিনি সাম্যবাদী দর্শনে বিশ্বাস করতেন, তবু পূর্ব জার্মানির কট্টর সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির সঙ্গে তার সংঘর্ষ বেধেই থাকত। পূর্ব জার্মানির তৎকালীন শাসকদের বিরুদ্ধে তার ব্যঙ্গ গ্রীক ক্লাসিক্যাল নাট্যকার সফোক্লিস এবং এরিস্টোফিনিস-এর নাটকের অবিকৃত অবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হতো। তার সঙ্গে সাক্ষাতের প্রথমেই তিনি আমাকে বলেছিলেন, তোমাদের সদ্য স্বাধীন দেশ, যেখানে কয়েক লাখ মানুষ আত্মাহুতি দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের জন্য, সেখানে নাটকের প্রচলিত ধারাকে ভেঙে নতুন করে পথচলা শুরু কর। এই কাজে তোমরা বার্টল্ট ব্রেশ্ট-এর নাট্যরীতি থেকে অনুপ্রেরণা পেতে পার। সেই সময়েই আমি ব্রেশ্ট-এর অনূদিত এবং রূপান্তরকৃত নাটকের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি কলকাতার নাটক দেখে এবং ভাবতে শুরু করেছি যে, ঢাকায়ও ব্রেশ্ট-এর নাটক করতে হবে। বেনেবেসোঁর উৎসাহেই ব্রেশ্ট নিয়ে আমার প্রথম কাজ, বস্তুতপক্ষে বাংলাদেশে ব্রেশ্ট-এর প্রথম কাজ ’সৎ মানুষের খোঁজে’ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করলাম। পরবর্তীতে বেনেবেসোঁ পূর্ব জার্মান সরকারের অধীনে আর কাজ করতে চাইলেন না। চলে গেলেন জেনেভায় এবং কাজ শুরু করলেন ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, পশ্চিম বার্লিন এবং সুইজারল্যান্ডে। ২০০৬-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি ৮৩ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যুর সময়ও তিনি সফোক্লিসের ’ইডিপাস’ নাটকের ওপর কাজ করছিলেন। বেসোঁর সঙ্গে আমার এক-দেড় ঘণ্টার দীর্ঘ আলাপে তার ছয় পেয়ালা গাঢ় কফির আতিথেয়তায় মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম আমি তার নাট্য ভাবনায়। আমি আগেই বলেছি, ঐ সময় পূর্ব জার্মানির বেশ কয়েকটি শহরে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। র্এফুর্ট জার্মানির একটি অতি প্রাচীন শহর। এর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ৭৪২ খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের আলোচনায়। এই শহরে একটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় আছে যার প্রতিষ্ঠা ১৩৯২-তে। ধর্মযাজক মার্টিন লুথার, যিনি একজন ধর্মযাজক ছিলেন, পরে ঐ সম্প্রদায়ের রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে প্রোটেস্টেন্ট রিফরমেশন করেছিলেন, তাঁর কর্মস্থল ছিল এই র্এফুর্ট। এখানকার ঐতিহাসিক গীর্জাটিতেই তিনি কাজ করতেন। বস্তুতপক্ষে র্এফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়েই তাঁর উচ্চতর শিক্ষা সম্পন্ন করেছিলেন। এই শহরেই বাস করতেন শুদ্ধ সঙ্গীতের প্রখ্যাত শিল্পী জোহান সেবাস্টিয়ান বাখ্-এর পূর্বপুরুষেরা। বেশ কিছু নামকরা জার্মান জাদুঘরও আছে এই শহরে। আমরা এই শহরে গিয়েছিলাম লাইপ্জিগ্ যাওয়ার পথে। আমার ইচ্ছা ছিল যে, খ্রিস্টান বিশ্বের বিদ্রোহী ধর্মযাজক মার্টিন লুথারের কর্মস্থল পরিদর্শন করব। ঠিক যেই পুরনো গির্জায় তিনি কাজ করতেন, সেটি ঘুরেফিরে দেখবার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। তখন অক্টোবরের প্রায় শেষ। আমি ঢাকা থেকে একটা গ্রীষ্মকালীন জ্যাকেট নিয়ে গিয়েছিলাম। ঐ সময় জার্মানিতে ঠা-া পড়তে শুরু করেছে। কয়েকদিন ধরে আমার কষ্ট হচ্ছিল ঠান্ডায়। ক্যারেনকে বলেছিলাম সে কথা। হঠাৎ র্এফুর্ট-এ এসে ক্যারেন বললো, এখানে একটা কাপড়-জামার বাজার আছে। যাবে নাকি? গেলাম ওর সঙ্গে। ইউরোপের শীত ঠেকাতে পারে এই রকম একটি কোট অতি সস্তায় কিনলাম। হালকা ধূসর রঙের কোট, গাঢ় নীল ডোরাকাটা। এই কোটটি দীর্ঘদিন ধরে আমার সঙ্গী ছিল। তবে বাংলাদেশের শীতে ওর প্রয়োজন পড়তো না খুব একটা। বার্লিন থেকে খুব ভোরে রওনা হয়ে সকাল সকাল র্এফুর্টে এসেছিলাম। এখানে দিনভর ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যার ট্রেনে রওনা হলাম লাইপ্জিগের পথে। লাইপ্জিগ্ একটি ব্যবসা প্রধান শহর হিসেবে পরিচিত সেই রোমান সা¤্রাজ্যের সময় থেকেই। পরবর্তীতে তৎকালীন পূর্ব জার্মানির অন্তর্গত এই শহরটি বিখ্যাত হয়ে ওঠে সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে। এই শহরটিরও নাম এসেছে একটি স্লাভিক শব্দ থেকে, যার অর্থ ’লেবু গাছ যেখানে দাঁড়িয়ে’। লাইপ্জিগ্রে বাণিজ্যমেলা এখন ইউরোপের একটি প্রধান বাণিজ্যমেলা হিসেবে মূল্যায়িত হয়। আমাদের এইখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মূলত সংস্কৃতি প্রধান শহর হিসেবে এই শহরের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য। লাইপ্জিগ্ েএক রাত, এক দিন ছিলাম। এখানে নাটক দেখার সুযোগ আমাদের হয়নি তবে সকাল থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে সকল সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছিল। জোহান সেবাস্টিয়ান বাখ্। প্রখ্যাত প্রতীচ্য-ধ্রুপদী সঙ্গীতজ্ঞ এই লাইপ্জিগ্ শহরে বসবাস করতে আসেন ১৭২৩ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর প্রধান যে কাজগুলো, সেগুলো তিনি এইখানেই সম্পাদিত করেন, সেন্ট টমাস চার্চে। এই সময় এখানকার বিভিন্ন গীর্জায় যে কয়্যার অর্কেস্ট্রা হতো, সেগুলো নির্মাণ এবং পর্যবেক্ষণ করার জন্য তাঁকে সঙ্গীত বিষয়ক পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বাখ্ ভীষণ খরুচে লোক ছিলেন। পকেটে টাকাপয়সা প্রায় কখনোই থাকতো না। এই জন্য লাইপ্জিগ্ শহরের কেন্দ্রতে তাঁর যে ভাস্কর্য আছে, সেখানে রসিক ভাস্কর তাঁর কোটের পকেটটি বের করে নিয়ে এসে উদোম দেখিয়েছেন এটা বোঝাতে যে, তাঁর পকেটে কোন পয়সা নেই। লাইপ্জিগ্ শহরে থাকতে আমাদেরকে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় দেখাতেও নিয়ে যাওয়া হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠা ১৪০৯ খ্রিস্টাব্দে এবং এটি জার্মানির সবচেয়ে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি। এক সকালে ব্রেকফাস্ট সারার পর চুপচাপ বসে ছিলাম। দিনটি ছিল রবিবার। মুস্তাফা নূর-উল ইসলাম স্যারকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি কী করবেন?’ উনি বললেন, ‘টুক টাক দু’-একটি জিনিস কেনার আছে। তবে এখনও তো কয়েকদিন আছি। পরে দেখা যাবে। আমি ভাবছি বেশি ঘোরাঘুরি না করে হোটেলেই থাকি।” অতএব, আমি একাই হাঁটতে বেরিয়ে পড়লাম। সেদিন সকাল দশটার দিকে বার্লিনে সোনালী রৌদ্র ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। কিন্তু উত্তর থেকে বইছে মৃদুমন্দ ঠান্ডা বাতাস। আমার পরনে জিন্স আর একটি পাতলা জ্যাকেট। পূর্ব বার্লিনের রাস্তাঘাটে একেবারেই ভিড় দেখা যেত না তখন। আর সেদিন রবিবার হওয়ায় মাঝে মধ্যে দু’চারটা গাড়ি যাওয়া-আসা করছিল। হাঁটছি আর বার্লিন শহরের প্রাতঃকালীন আমেজ সারা শরীর মন জুড়ে উপভোগ করছি। ঐ শহরে তখন ইট-কাঠের মাঝে মাঝেই ছোটখাটো ফুলের বাগান দেখা যেত। বাগানগুলোতে ফুলের সমারোহ দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। আমি নিজের অজান্তেই পশ্চিম দিকে হাঁটছিলাম। কখন যে ব্রান্ডেনবুর্গ গেইটের একেবারে সামনে এসে পড়েছি লক্ষ্য করিনি। এই ফটকটি অষ্টাদশ শতাব্দীতে নির্মিত নব্য ক্লাসিক্যাল স্থাপত্যের নিদর্শন। সেই সময় বার্লিন নগরে প্রবেশ দ্বার হিসেবে এইটি ব্যবহৃত হতো। ব্রান্ডেনবুর্গ ফটক পূর্ব এবং পশ্চিম জার্মানির মাঝে নির্মিত বার্লিন ওয়াল সংলগ্ন হয়ে একা দাঁড়িয়ে। বিশাল উঁচু, চমকপ্রদ এই ফটকটির পুবে দাঁড়িয়ে আমি এর নকশা এবং নির্মান শৈলী সৌকর্যে প্রায় কথা হারিয়ে ফেলেছিলাম। এর আগে আমি এই জার্মানির বিভিন্ন ইমারত, তোরণ এবং ফটক দেখেছি। কিন্তু ঐসব জায়গায় গিয়ে অভিনিবেশ সহকারে দেখতে পারিনি। কারণ আমাদের দোভাষী ক্যারেন ওগুলোর সম্বন্ধে আদ্যোপান্ত ব্যাখ্যা করতো আর তাই আমাদের নজর ওর দিকেই নিবদ্ধ থাকতো। আজকের এই অভিজ্ঞতা তাই অনন্য। আমি ব্রান্ডেনবুর্গ ফটক থেকে হোটেলে ফিরবো বলে চলতে শুরু করেছি এমন সময় পেছন থেকে নারীকন্ঠে ’স্যার’ ডাকে ফিরে তাকালাম। লক্ষ্য করলাম এক অতি সুন্দরী যুবতী দ্রুত আমার দিকে হেঁটে আসছে। আমি একটু ভড়কে গেলাম। মনে হলো কী জানি, এ আবার কী আপদ এসে জুটলো? আমি তার জন্য অপেক্ষা না করে হোটেলের দিকে হাঁটছি । মেয়েটি একেবারে নাছোড়বান্দা। প্রায় দৌড়ে এসে আমাকে ধরে ফেললো। তার প্রথম বাক্য, জার্মান ভাষায়, ‘স্প্রাখেন্ সি ডয়েচ্?’ অর্থাৎ ’তুমি কি জার্মান বলেেত পারো?’ আমি ইংরেজীতে বললাম, ‘নো’। তখন সে আমার সঙ্গে ভাঙা ভাঙা ইংরেজীতে কথা বলতে শুরু করলো। অতি সাধারণ সব কথা। কোত্থেকে এসেছি, কবে ফিরবো, ইত্যাদি। লক্ষ্য করলাম মেয়েটি বাংলাদেশ চেনে। আসলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত এবং সোভিয়েত দেশগুলো আমাদের সমর্থন করায় তাদের দেশের অনেকেই বাংলাদেশ সম্বন্ধে জানে। ততক্ষণে হোটেলে ফেরার পথে একজন সঙ্গী পাওয়ায় বেশ ভালোই লাগছে। হোটেলে পৌঁছে আমি তাকে ভদ্রতাবশত জিজ্ঞেস করলাম, কফি খাবে? সে একগাল হেসে আমার আমন্ত্রণ রক্ষা করলো। কফিশপে নানা কথার মাঝে মেয়েটি আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তুমি যে জিন্স পরে আছো, এই রকম আর কি তোমার আছে?’ আমার ঐ একটিই জিন্স। অতএব, বললাম, ‘না’। মেয়েটি একটু দমে গেল। তারপর দ্বিগুণ উৎসাহে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘আমি যদি তোমাকে ১০০ ফেনিগ (জার্মান মুদ্রা) জোগাড় করে দিই, তুমি কি তোমার এ জিন্সটি আমাকে দিবে?’ আমি বললাম,‘এটা দিয়ে তুমি কি করবে? এ তো পুরনো জিন্স।’ ও বললো, ‘আমার তাতেই চলবে, আমি ম্যানেজ করে নেবো।’ আমি একটু অবাক হলাম। পরে জানলাম যে, পশ্চিম জার্মানির ছেলেমেয়েদের এই রকম পোশাকে দেখে প্রতীচ্য ফ্যাশনের প্রতি এই মেয়েটি, হেলেনার, প্রচ- দুর্বলতা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের তরুণ-তরুণীদের সবাই কি এই ধরনের প্রতীচ্য ফ্যাশনের প্রতি আকৃষ্ট? ও চারদিকে তাকিয়ে বললো, ’ভীষণ’। কথায় কথায় বললো, ’এক জোড়া জিন্স আর এক ক্যান কোকাকোলা পেলে আমরা বাড়িঘরও বিক্রি করে দিতে পারি।’ শুনে চমকে উঠলাম। পরে যখন পূর্ব এবং পশ্চিম জার্মানি এক হয়ে গেল, তখন আমি নিশ্চিত যে, হেলেনা ওর জিন্স আর কোকাকোলা ঠিকই পেয়েছিল, কিন্তু পশ্চিম জার্মানির অধীনে এসে ওরা কি সত্যিই সুখী হতে পেরেছিল? বার্লিনের কাছেই ভাইর্মা ছোট্ট একটি শহর। অথচ এই শহরটিতে রয়েছে জার্মান সংস্কৃতির এক অফুরন্ত ভা-ার। এখানে থাকতেন জার্মান মহাকবি গ্যেটে এবং নাট্যকার শিলার। এ ছাড়াও নব্য স্থাপত্যকলার নিদর্শন বাউহাউসের প্রবর্তক ওয়াল্টার গ্রোপিয়াস্-ও এই শহরেই এই বিশেষ স্থাপত্যকলার চর্চা শুরু করেন। ভাইমার্ েগিয়ে আমি এবং স্যার গ্যেটে এবং শির্লা -এর বড়ি দেখতে গিয়েছিলাম। এই বাড়িগুলোকে কেন্দ্র করে ধ্রুপদী সাহিত্যের চর্চায় শহরের মেধাবী তরুণেরা নিয়োজিত ছিল। গ্যেটে এবং শির্লা -এর বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরূপ তাদের সম্পত্তিগুলোকে পরবর্তীতে সংগ্রহশালায় রূপান্তরিত করা হয়, যেখানে হাজার হাজার জার্মান প্রতিদিন বেড়াতে আসতেন। ভাইমার্ েএসেছিলাম একদিনের জন্য। শেষ দর্শনীয় স্থান জার্মান ন্যাশনাল থিয়েটার, যা এখন আর ঐ নামে নেই। সেই সময় এই থিয়েটারটি নব্য-জার্মান নাটকের চর্চায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এই থিয়েটারেরও সামনে গ্যেটে এবং শির্লা-এর স্মরণে তাদের দু’জনের হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে থাকা ভাস্কর্যটি সত্যিই নজর কেড়েছিল। ন্যাশনাল থিয়েটারের তখনকার পরিচালক ছিলেন প্রখ্যাত নাট্য নির্দেশক ফ্রিৎস্ বেনেভিৎস্। তিনি ব্রেশ্টের নাটক নিয়ে বিশদ আলোচনা করলেন আমাদের সাথে এবং বললেন যে, ভারতে যাচ্ছেন শিগগিরই ব্রেশ্টের ওপরে কাজ করার জন্য। আমরা জানি যে, এর অনেক পরে, ফ্রিৎস্ ভারতে এসেছিলেন মুম্বাই এবং কলকাতায় কাজ করতে। তাঁর নির্দেশনায় ’গ্যালিলিও’ নাটকটি আমি স্বয়ং দেখেছি কলকাতায়। তারও পরে তিনি সাগ্রহে এসেছিলেন বাংলাদেশে। এখানকার নাট্যাভিনেতাদের সাথে ব্রেশ্টের নাটক ‘লোক সমান লোক’ নিয়ে কাজ করতে। এই নাটকটিরও অতি সফল মঞ্চায়ন আমরা দেখেছি ঢাকার মঞ্চে।
×