ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাইট টাইমে রাইট ডিসিশন!

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ১২ জুলাই ২০১৯

 রাইট টাইমে রাইট ডিসিশন!

শাহাব উদ্দিন মাহমুদ ॥ ১৯৭১ সালের ১২ জুলাই দিনটি ছিল সোমবার। এই দিন কুমিল্লায় ক্যাপ্টেন গাফফারের কোম্পানি ও ফাস্টফিল্ড রেজিমেন্ট পাকবাহিনীর মন্দভাগ বাজার ঘাঁটি আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত আক্রমণে অনেক বাঙ্কার ও ঘর ধ্বংস হয় এবং অন্তত ৭০ জন পাকসৈন্য হতাহত হয়। দু’ঘণ্টা যুদ্ধের পর মন্দভাগ বাজার ও প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। রাত ৮টায় পাকহানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীর শালদা নদী ঘাঁটি আক্রমণ করে। ৪র্থ বেঙ্গলের ‘এ’ কোম্পানির মেজর সালেকের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ চালালে পাকসেনারা পর্যুদস্ত হয়ে আক্রমণ পরিত্যাগ করে। এতে পাকবাহিনীর অনেক সৈন্য হতাহত হয়। নারায়ণগঞ্জ ও দাউদকান্দি সড়কে বাউসিয়া সেতু এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের ডিমোলিশন পার্টির ওপর পাকবাহিনী ও রাজাকার দল অকস্মাৎ আক্রমণ চালায়। এতে ডিমোলিশন দলের ৩জন গেরিলা গুরুতরভাবে আহত হয়। এ সংঘর্ষে ডিমোলিশন দল আহত গেরিলাদের সহ নিরাপদে মুরাদনগর ঘাঁটিতে ফিরে আসতে সক্ষম হয়। সিলেটে ময়না মিয়ার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা দল পাকবাহিনীর শাহবাজপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘাঁটি আক্রমণ করে। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর ২জন সৈন্য নিহত হয়। মুক্তি বাহিনীর গেরিলা হামলায় নারায়ণগঞ্জের গদনাইলে অবস্থিত ইলেকট্রিক সাব-স্টেশনের যন্ত্রপাতি এবং আসবাবপত্র ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়। ফলে বিদ্যুতের অভাবে বেশ কয়েকটি কলকারখানার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে-চিত্তরঞ্জন এবং লক্ষ্মীনারায়ণ পোশাক কারখানা এবং পাট বিপণন কর্পোরেশন। কলকাতা ৮ নম্বর থিয়েটার রোডে স্থাপিত মুক্তিবাহিনীর সদর দফতরে সেক্টর-কমান্ডারদের সাত দিনব্যাপী এক দীর্ঘ অধিবেশন চলে। এই অধিবেশনেই বাংলাদেশকে মোট ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে প্রতিটি সেক্টরের সীমানা নির্ধারণ করা হয়। ভারতে অবস্থানরত কুড়িগ্রাম কলেজের অধ্যাপক বলাই চন্দ্র পালের নেতৃত্বে উত্তরাঞ্চল সাংস্কৃতিক পরিষদ গঠন করা হয়। এই সাংস্কৃতিক পরিষদ ছয় নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন ঘাঁটিতে দেশাত্ববোধক গানের অনুষ্ঠান করে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করত। বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরেও অনুষ্ঠান করে মাতৃভূমিহারা নারী-পুরুষ-বৃদ্ধসহ সব শ্রেণীর শরণার্থীদের সাহস ও প্রেরণা জোগাত। ভাওয়াইয়া শিল্পী কসিমুদ্দিন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছেন। তিনি তিস্তা পাড়ের শিল্পী হিসেবে ওপার বাংলায় পরিচিতি লাভ করেছিলেন। সে সময় ভারতের কলম্বিয়া রেকর্ডিং কোম্পানিতে গান রেকর্ড করে তিনি যে রয়ালিটি পেয়েছিলেন-তার সমস্তটাই মুক্তিযুদ্ধের ফান্ডে জমা করেছিলেন। পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো তেহরান থেকে কাবুল না গিয়ে আকস্মিকভাবে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। জামায়াতে ইসলামীর আমির মওলানা আবুল আলা মওদুদী এক বিবৃতিতে ভুট্টো উত্থাপিত পাকিস্তান সরকার কর্তৃক শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের মধ্যে আপোস মীমাংসার পরামর্শকে ‘রাজনৈতিক হঠকারিতা ও দূরভিসন্ধিমূলক’বলে অভিহিত করেন। কনভেনশন মুসলিম লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী লাহোরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, পূর্ব-পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তবে ভারতের দালালরা সেখানে সক্রিয় রয়েছে। এদের হুমকি মোকাবেলা করার জন্য দেশপ্রেমিক নাগরিক আজ ঐক্যবদ্ধ। জামায়াতে ইসলামীর আমীর মিয়া তোফায়েল ঢাকা শহরে জামায়াতের এক কর্মী সমাবেশে বলেন, ২৫ মার্চের পূর্বে বাঙালীদের অধিকার আদায়ের নামে যে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালানো হয়েছিল তা ছিল পাকিস্তানকে ধ্বংস করার জন্য দুশমনদের একটি সুসংগঠিত চক্রান্ত। তিনি বলেন, ‘দুশমনদের চক্রান্ত থেকে মহান সেনাবাহিনী দেশকে রক্ষা করছে। আমাদেরই এই অবস্থা ধরে রাখতে হবে। রাজশাহী বেতারের বরাত দিয়ে সাপ্তাহিক স্বাধীন বাংলার রিপোর্টে জানা যায়, বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দেশ মাতৃকাকে মুক্ত করার জন্য নিবেদিতপ্রাণ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম সাহসিকতাপূর্ণ তৎপরতার সামনে টিকতে না পেরে বিভিন্ন এলাকায় পাক ফৌজ পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। চট্টগ্রামের বাড়িতে বাড়িতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা শোভা পাচ্ছে। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার আনাচে কানাচে পাক ফৌজ ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। সর্বত্র পাক সেনারা পিছু হটছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে জনতা মুক্তিবাহিনীর বিজয় অবধারিত জেনে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেছেন। কুমিল্লা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত টাউন হলের শীর্ষেও বাংলাদেশের পতাকা শোভা পাচ্ছে। কুমিল্লা এখন বিস্ফোরণের শহর। প্রায় প্রতি মুহূর্তে সেখানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এমনকি ইয়াহিয়া খানের বেতার ভাষণের সময় কুমিল্লা বিমান বন্দরের দিক থেকে দুটি বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে। জানা গেছে সামগ্রিকভাবে কুমিল্লা জেলা পাক ফৌজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বাইরে থেকে প্রচুর সৈন্য আমদানি করেও তারা মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পেরে উঠতে পারছে না। যশোরে গেরিলা তৎপরতার সামনে পাক ফৌজের সব প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়েছে। গত এক সপ্তাহের খ- খ- যুদ্ধে পাক ফৌজের দুই শতাধিক সেনা নিহত হয়েছে। যশোরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাক ফৌজ হটে গেছে বলে জানা গেছে। টাঙ্গাইল এবং ময়মনসিংহ এখনও মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাছাড়া ফেনী মহকুমা, দিনাজপুর জেলার অমরখানা, সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকায় মুক্তিবাহিনীর অবস্থান সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে। নিউজ উইক এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থাকা সত্ত্বেও বিদ্রোহ দমন এখনো অনেক দূরেই আছে। সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা যুদ্ধে তাৎপর্যপূর্ণ উন্নতি প্রদর্শন করেছে। গুরুত্বপূর্ণ রেললাইন ও মহাসড়ক কেটে দিয়েছে ,ডজনের উপর ব্রীজ উড়িয়ে দিয়েছে, তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ধ্বংস করেছে এবং স্থানীয় সরকার প্রচলনে সেনাবাহিনী দ্বারা নিযুক্ত অবাঙ্গালী সদস্যদের গোপনে হত্যা করছে। ইয়াহিয়ার সেনাবাহিনীতে স্নায়ূ উত্তেজনা বাড়ছে এবং পূর্বাঞ্চলে চার ডিভিশনের সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করতে আরও দুই ডিভিশন সৈন্য পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে। গত সপ্তাহে পূর্ববঙ্গের রাজধানী ঢাকায় নিউজ উইকের লরেন্স জেনকিন্সকে একজন বিদেশী রাষ্ট্রদূত বলেছেন যে, ‘এভাবেই ভিয়েতনামে শুরু হয়েছিল।’ সেনাবাহিনী যতদিন ইচ্ছে এর মূল্য দিতে এখানে অবস্থান করতে পারে। কিন্তু সরকার গেরিলা যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার মতো অবস্থায় নেই। একই রকম উপসংহারে পৌঁছে গত সপ্তাহে এগারোটি দেশের সমন্বয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের একটি দল ৫০০ মিলিয়ন ডলারের সরবরাহ নিয়ে পাকিস্তানে পৌঁছেছে। দলটি বিধ্বস্ত পূর্বাঞ্চল পরিদর্শনের পর ইয়াহিয়াকে এই শত্রুতার রাজনৈতিক সমাধান খুঁজতে বাধ্য করার জন্য এই সহায়তা ফিরিয়ে নিতে সুপারিশ করে। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই এর বিরোধিতা করে ঘোষণা করে যে, ইসলামাবাদের প্রতি তার সহায়তা অবিরত রাখবে এবং সম্ভবত এটা শান্তির পথে নিয়ে যেতে তাকে উদ্বুদ্ধ করবে। প্রকৃতপক্ষে এটাই সত্য যা ঢাকার এক কূটনৈতিক গত সপ্তাহেই পুনর্মিলনের কোন সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন। ‘যেদিন থেকে পূর্বাঞ্চলে সেনাবাহিনী প্রবেশ করেছে সেদিনই পাকিস্তানের মৃত্যু হয়েছে। টাইম ম্যাগাজিন এক প্রতিবেদনে লিখেছে, গত মার্চে যখন ইন্দিরা গান্ধী সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসেন তখন তিনি উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন কর্মসূচীর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যাতে ভারতের প্রায় ৬০০ মিলিয়ন জনতার জীবনধারা বদলে যাবে। গত সপ্তাহে এটা পরিষ্কার হয়েছিল যে দেশের অর্থনীতি কিছুতেই শক্তিশালী হচ্ছিল না এবং এই বাধার কারণগুলো কিছুতেই শ্রীমতি গান্ধীর দ্বারা তৈরি হয়নি। গত মার্চ মাস হতেই পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানের ওপর তাদের নিপীড়ন ও সন্ত্রাসের বর্বর আগ্রাসন শুরু করার পর ষাট লাখের ও অধিক শরণার্থী ভারতে পালিয়ে এসেছে। শরণার্থীদের আশ্রয় ও খাদ্যের যোগান এবং কলেরায় আক্রান্ত হাজারো শরণার্থীর চিকিৎসায় প্রথম ছয়মাসেই কমপক্ষে ৪০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে। মুসলিম প্রধান পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের প্রায় ৮০% হিন্দু যারা পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের পূর্বাঞ্চলে যেখানে তাদের সহ-সম্প্রদায়ের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে সেখানে তাদের আশ্রয়স্থল খুঁজছিল। মূলত ভারতকে যা দুশ্চিন্তায় ফেলছিল তা হচ্ছে তাদের নিজেদের ভিটে-বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে আসছিল। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লী হতে বলা হয়েছিল যে পাকিস্তানীরা পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুদের ভিটে-বাড়ি ও সহায় সম্পত্তি ধ্বংস করে ফেলছিল। আর তাই ভারতকে পাকিস্তানী শরণার্থীদের যা ক্রমান্বয়ে ১০ লক্ষাধিক হতে পারে তাদেরকে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য মেনে নিতে হতে পারে। জরুরী সহায়তা প্রদান ও পূর্ব পাকিস্তানে দমন প্রশমনে অন্য দেশসমূহকে রাজি করানোর চেষ্টায়, ভারতের পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে প্রধানমন্ত্রী তার বিভিন্ন সহকর্মীকে বিদেশে পাঠিয়েছেন। ভারত যা চায় তা হচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দ্বারা কঠোর দমন নীতির ফলে লাখ লাখ পূর্ব পাকিস্তানীর হত্যা রাজনৈতিক সমঝোতা হতে অনেক দূরে ঠেলে দেয়। দীর্ঘ মেয়াদে চলতে থাকলে ভারতীয়দের ভয় যে তারা তাদের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর চাইতেও ভয়াবহ হুমকির মুখোমুখি হতে হবে। সত্যিকারের বিপদ হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের গেরিলা আন্দোলন ভঙ্গূর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব হতে নকশালপন্থীদের হাতে চলে যেতে পারে যারা মাওবাদী চরমপন্থীদের সঙ্গে আদর্শিকভাবে আত্মীয় এবং যারা কলকাতা ও পাকিস্তান-ভারতের অন্যান্য অঞ্চলকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। ভারতীয়দের যে ভয় সেটা হচ্ছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে পাকিস্তানের পূর্ববাংলার একত্রীকরণের প্রয়াস যেখানে সংস্কৃতি ও ভাষার মিল আছে যা কোন এক সময় ধর্মীয় অমিলকে পরিবর্তন করে ফেলতে পারে। দ্য স্টেটসম্যান ও আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, জনসংঘের সভাপতি অটল বিহারী বাজপেয়ী অভিযোগ করেন যে, প্রধানমন্ত্রী সংসদে বাংলাদেশ সমস্যা নিয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার যে অঙ্গীকার করেছিলেন, তা অনেকটা বিদ্রুপের মতো। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শক্তিশালী দেশগুলোর চাপের কারণে ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে পারছেন না। মুক্তি ফৌজ ও পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের দীর্ঘমেয়াদী গেরিলা যুদ্ধের কারণে দেশের পূর্বাঞ্চলের অংশবিশেষ পশ্চিম বাংলা, অসম, নাগাল্যান্ড এবং বিহারের অবস্থাও খারাপ হতে পারে। অস্ত্র ও গোলাবারুদ নকশাল ও অন্যদের দ্বারা ভারতের পাশাপাশি রাজ্যগুলোতে পাচার হচ্ছিল। তিব্বতের মতো অবস্থা দেখতে না চাইলে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন দিতে দেরি করা উচিত নয়। স্বীকৃতি দেওয়ার পর সব ধরনের সামরিক সাহায্য দেয়া যেতে পারে বলে যোগ করেন বাজপেয়ী। বাংলাদেশকে অবিলম্বে স্বীকৃতি দেয়ার প্রশ্নে ভারতের জাতীয় জনমত প্রায় সর্বসম্মতভাবে এক। বাংলাদেশকে আশু স্বীকৃতি দানের প্রস্তাব নিয়ে সম্প্রতি পার্লামেন্টে যে বিতর্ক হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেস পার্লামেন্টারি দলে পরপর তিন দিন যে আলোচনা হয়েছে, তাতে সব বক্তাই শুধু যে স্বীকৃতি দাবি করেছেন তাই নয়, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, ভারত ছাড়া বিশ্বের কোন রাষ্ট্রই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে রাজি নয়। কিন্তু শ্রী জয় প্রকাশ নারায়ণ ৪৮ দিনে ১৮টি বিদেশী রাষ্ট্র সফর করে বলেছেন যে, ভারত স্বীকৃতি দিলে অবিলম্বে অন্তত বিশ্বের চার-পাঁচটি রাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে। ভারতের মস্কো মিশন নয়াদিল্লীকে জানিয়েছে, ‘রাশিয়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব বাস্তব ঘটনা বলে মেনে নিয়েছে।’ বিদেশের বহু রাষ্ট্রপ্রধান বলেছেন যে, ‘বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের প্রশ্নে পথ দেখাতে হবে ভারতকে। নীতিগতভাবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের বিরোধী নন ভারত সরকার। তবে ভারত সরকার মনে করেন যে, এখন স্বীকৃতি দিলে বাংলাদেশের পক্ষে সহায়ক হবে না, বরং ক্ষতি করা হবে। এদিকে বাংলাদেশের জাতীয় সরকার এবং সমগ্র জাতীয় দলগুলো বার বার বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের আবেদন জানাচ্ছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘রাইট টাইমে রাইট ডিসিশন নেয়া হবে’। লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক [email protected]
×