হরমুজ প্রণালীতে তেলবাহী একটি ব্রিটিশ জাহাজকে আটকানোর চেষ্টা করেছে অস্ত্রসজ্জিত ইরানের তিনটি জাহাজ। তবে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর জাহাজ সেগুলোকে তাড়িয়ে দেয় বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ সরকারের একজন মুখপাত্র। বৃহস্পতিবার সকালে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, তেলবাহী জাহাজ ‘ব্রিটিশ হেরিটেজ’ ও ইরানের তিনটি জলযানের মাঝে গিয়ে অবস্থান নেয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ এইচএমএস মন্ট্রুজ। পরে ইরানের জাহাজগুলোকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়। তিনি ইরানের এই কর্মকান্ডকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী’ বলে বর্ণনা করেন। এ ঘটনার জন্য ইরানের বিপ্লবী বাহিনীকে দোষারোপ করা হয়েছে। তবে ব্রিটিশ তেলবাহী জাহাজ আটকানোর চেষ্টার বিষয়টি অস্বীকার করেছে ইরান। গত সপ্তাহে জিব্রাল্টারের কাছে ইরানের একটি তেলবাহী জাহাজ আটকের জবাব দেয়ার হুমকি দিয়ে আসছিল ইরান।
মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বলা হয়, ধারণা করা হচ্ছে জাহাজ তিনটি ইরানের বিপ্লবী বাহিনীর। ব্রিটিশ হেরিটেজ জাহাজটি উপসাগর থেকে হরমুজ প্রণালীর দিকে যাওয়ার সময় সেটিকে আটকানোর চেষ্টা করা হয়। ব্রিটিশ ফ্রিগেট এইচএমএস মন্ট্রুজ তেলবাহী জাহাজটিকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় জাহাজটির কামান ও বন্দুক ইরানের জাহাজগুলোর দিকে তাক করা হয়। এর আগে তারা ইরানের জাহাজগুলোকে ফিরে যাওয়ার জন্য মৌখিকভাবে সতর্ক করে। ইরানের জাহাজগুলো মৌখিক সতর্কতায় পিছু হটলে কোন গোলাগুলির প্রয়োজন পড়েনি।
গত সপ্তাহে ইরানের একটি তেলবাহী জাহাজ আটক করতে জিব্রাল্টারের কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করে ব্রিটিশ নৌবাহিনী। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইরানের জাহাজটি সিরিয়ার দিকে যাচ্ছিল বলে তথ্য-প্রমাণ থাকায় সেটি আটক করা হয় বলে দাবি করে তারা। এর জবাবে ইরানের একজন কর্মকর্তা বলেন, ইরানের আটক তেলবাহী জাহাজটি ছেড়ে দেয়া না হলে ব্রিটেনের একটি তেলবাহী জাহাজ আটক করা উচিত। এ ঘটনায় তেহরানে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ইরান। তারা এ ঘটনাকে ‘এক ধরনের দস্যুতা’ বলে অভিযোগ করে।
আর বুধবার ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি উপসাগরে তেলবাহী জাহাজকে নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ দিয়ে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাওয়ায় ব্রিটেনকে উপহাস করেছেন। তিনি এটাকে ‘ভীত’ ও ‘ব্যর্থতা’ বলে অভিহিত করেন। হরমুজ প্রণালীতে ব্রিটিশ তেলবাহী জাহাজ ‘প্যাসিফিক ভয়েজার’কে পাহারা দিয়ে নিয়ে যায় এইচএমএস মন্ট্রুজ। কিন্তু সে যাত্রায় কোন ধরনের ঘটনা ঘটেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ব্রিটেনের তেলবাহী জাহাজ আটকের চেষ্টা করা হলো। ইরানের সঙ্গে করা ২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে গেলে দেশটির সঙ্গে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু চুক্তির অন্যান্য পক্ষ ব্রিটেনসহ ইউরোপীয় মিত্রগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের পথ অনুসরণ করেনি। তারপরও ইরান ব্রিটেনের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। কারণ এর আগে গত জুনে উপসাগরে দুটি তেলবাহী জাহাজে হামলার জন্য ইরানকে দোষারোপ করে ব্রিটেন। এছাড়া ব্রিটিশ-ইরানিয়ান বংশোদ্ভূত নারী নাজানিন জাঘারি-র্যাটক্লিফকে মুক্তি দেয়ার জন্য ইরানের ওপর চাপ দিয়ে আসছে ব্রিটেন। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ২০১৬ সালে তাকে পাঁচ বছরের কারাদ- দেয়া হয়। কিন্তু গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগ অস্বীকার করেন ওই নারী।
ব্রিটিশ সরকারের মুখপাত্র বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইরানের জাহাজগুলো হরমুজ প্রণালীর বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের পথে ‘ব্রিটিশ হেরিটেজ’র ওপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। আমরা ইরানের এই কর্মকান্ডে উদ্বিগ্ন। এই অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমনে ইরানের কর্তৃপক্ষের প্রতি ফের আহ্বান জানাচ্ছি।’
ব্রিটিশ তেলবাহী জাহাজ আটকের চেষ্টার দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে ইরানের বিপ্লবী বাহিনী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলেন, হরমুজ প্রণালীর উত্তর দিকের প্রবেশ পথে এ ঘটনা ঘটেছে। এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইরানের জাহাজগুলোর দিকে বন্দুক তাক করা হয়েছিল এবং বেতারে তাদের সতর্ক করা হয়। পরে ইরানের জাহাজগুলো সরে যায়।’ আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা একটা হয়রানি এবং জলপথে হস্তক্ষেপের চেষ্টা।’ মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের মুখপাত্র ক্যাপ্টেন বিল আরবান বলেন, হরমুজ প্রণালীতে ইরানের বিপ্লবী বাহিনীর তেলবাহী জাহাজ ‘ব্রিটিশ হেরিটেজ’র গতিপথ রোধের চেষ্টার বিষয়টি নিয়ে আমরা সতর্ক। আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলের স্বাধীনতার ওপর হুমকির বিষয়ে আন্তর্জাতিক সমাধান প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি। ঘটনাটি মার্কিন একটি পর্যবেক্ষণকারী বিমান ভিডিও করেছে বলে সিএনএনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। -এএফপি, বিবিসি ও গার্ডিয়ান
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: