ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উচ্ছেদ অভিযানে হামলা: নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আহত ৬

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ১১ জুলাই ২০১৯

 উচ্ছেদ অভিযানে হামলা: নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আহত ৬

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিআইডাব্লিটিএর উচ্ছেদ অভিযানে দেশীয় অস্ত্রনিয়ে হামলার ঘটনায় তুলকালাম কান্ড ঘটেছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ৬ জনকে পিটিয়ে যখম করেছে হমলাকারী দখলদাররা। এই ঘটনায় তিনজন হামলাকারীকে গ্রেফতারের করে পুলিশ। পরে তাদেরকে তিন মাসের কারাদন্ড দেয় ভ্রাম্যমান আদালত। হামলাকরীদের দুই হোতা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বিআইডাব্লিটিএ। বৃহস্পতিবার পোস্তগোলা ব্রিজের পশ্চিমপাশে শ্বশানঘাটে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলে এই ঘটনা ঘটে। তবে এই ঘটনার পরও উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করতে পারেনি ভুমিদস্যু নদী দখলকারীরা। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন জানান, সকাল সাড়ে নয়টায় অভিযান শুরুর আগেই স্থানীয় প্রভাবশালী ইব্রাহিম আহমেদ ওরফে রিপন ও তার ভাই ইকবল আহমেদ বাপ্পি শতাধিক অনুসারীকে নিয়ে শ্মশানঘাট এরাকায় অবস্থান নেন। এসময় তাদের হাতে রড, লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়। অভিযান শুরুর পরপরই বিআইডাব্লিটিএ কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর চড়াও হয় তারা। বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে মারামারি লেগে যায়। শুরু হয় ছুটাছুটি। এসময় ভ্রামমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: মোস্তাফিজুর রহমান ও বিআইডাব্লিটিএর যুগ্ম পরিচালক একেএম আরিফসহ ৬ জন বিআইডাব্লিটিএ কর্মকর্তা আহত হয়। প্রথম অবস্থায় পুলিশ চুপ থাকলেও পরে অতিরুক্ত পুলিশ মোতায়েন করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। এই ঘটনায় হামলাকারী দুই হোতা ইব্রাহীম আহমেদ রিপন ও ইউনুস আহমেদ পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থল থেকে ইব্রাহীম আহমেদ রিপনের ভাই ইকবাল আহমেদ বাপ্পি, আবুল বাশার মোল্লা ও রনজিত সরকারকে আটক করে পুলিশ। পরে ভ্রাম্যমান আদালত তাদেরকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করে কারাগারে পাঠায়। পালাতক দুই জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে বিআইডাব্লিটিএ। অবশ্য এই ঘটনার পর পুলিশি পাহারায় অভিযান পরিচালনা করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরিন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিটিএ)। নির্বাহী হাকিম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গত ২৯ জানুয়ারি থেকে ঢাকার চারপাশের নদ–নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালাচ্ছি আমরা। আজ এই অভিযান কার্যক্রমের ৪২ দিন। কোনো দখলদার এমন উদ্ধত আচরণ করেননি। গতকাল ও আজ এমন বাধার মুখে পড়লাম আমরা। তবে মূল হোতা পালিয়ে গেছেন। তার সহযোগী তিনজনকে আটক করে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। পোস্তগোলা শ্মশানঘাট এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালী ইব্রাহিম আহমেদ নদী ভরাট করে দীর্ঘদিন ধরে ইট, বালু ও ভাঙ্গড়ির ব্যবসা করে আসছেন। বুধবার বিকেলে বালুর ওই গদি অপসারণ করতে গেলে বিআইডব্লিউটিএকে বাধা দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার ফের উচ্ছেদে গেলে বিআইডব্লিউটিএ এর উপর হামলা চালায় তারা। বিআইডাব্লিটিএ বলছেন, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট ও এর আশপাশের এলাকায় শুল্ক আদায় ও মালামাল ওঠানো-নামানোর জন্য স্থানীয় ইকবাল আহমেদকে ইজারা দেওয়া হয়েছিল। অথচ দীর্ঘদিন ধরে সে সেখানে অবৈধভাবে নদী ভরাট করে ইট, বালু ও ভাঙ্গড়ির ব্যবসাসহ প্লেনসিটের জমজমাট ব্যাবসা পরিচালনা করছে। ইকবাল স্থানীয় প্রভাবশালী ইব্রাহিম আহমেদের ছোট ভাই। এর আগেও তাদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা করলে ইকবাল আহমেদের বাধার কারণে সেখানে অভিযান চালাতে সক্ষম হয়নি বিআইডাব্লিটিএ। বৃহস্পতিবারের অভিযানে মোট ৯০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে বিআইডাব্লিটিএ। বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর তীরে শ্যামপুর থানার শ্বশানঘাট থেকে লঞ্চঘাট পর্যন্ত এই অভিযানে অবৈধ বালুর গদি, ইট খোলা নিলামে বিক্রয়ের ফলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়েছে এক কোটি ৪৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। এসময় ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয় দোতলা একটি, একতলা ১৫টি, আধা পাকা ৪৫টি ও টিনের ঘর ২৯টি। এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান ও সার্বিক নির্দেশনা দেন বিআইডাব্লিটিএর যুগ্ম পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিন। আগামী মঙ্গলবার সকাল ৯ টা থেকে শ্যামপুর লঞ্চঘাট থেকে পাগলা অভিমুখে বুড়িগঙ্গা নদীতে উচ্ছেদ অভিযান চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন বিআইডাব্লিটিএ।
×