ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বেড়িবাঁধ ভেঙে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি

পানিতে ভাসছে পটিয়া

প্রকাশিত: ০০:৪১, ১১ জুলাই ২০১৯

পানিতে ভাসছে পটিয়া

নিজস্ব সংবাদদাতা, পটিয়া ॥ ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানিতে চট্টগ্রামের পটিয়া যেন ভাসছে। উপজেলার ১৭ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে রয়েছে। শ্রীমাই খালের বেড়িবাঁধ ভেঙে উত্তর ছনহরা, ভাটিখাইন ও কচুয়াই এলাকার অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। প্রাইমারী স্কুল, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাঁটু পরিমান পানি জমে রয়েছে। ফলে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পানির ¯্রােতে কেলিশহরের মৌলভী হাট, দক্ষিণ হাইদগাঁও শ্রীমতি বাড়ি এলাকা, কচুয়াই ইউনিয়নের পারিগ্রাম, ভাটিখাইন ও ছনহরা ইউনিয়নে বেশ কিছু মাটির বসতঘর ভেঙে পড়েছে। পটিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান টানা ৪ দিনের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে নগদ অর্থ বিতরণ করেছেন এবং ত্রান তহবিল থেকে চাল ও শূকনো খাবার বিতরণ করার আশ্বাস দিয়েছেন। টানা ৪ দিনের অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত নিস্কাশন হতে না পেরে শ্রীমাই খালের বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। বৃষ্টির কারণে শ্রমজীবি মানুষ বাড়ি ঘর বের হতে পারছেন না। তাছাড়া কৃষকের সবজিসহ নানা ধরনের ফসল ক্ষেত পানিতে ডুবে রয়েছে। এদিকে, প্রথম শ্রেণীর পটিয়া পৌরসভা ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে যে ড্রেন নির্মাণ কাজ চলছে তা খুবই ধীরগতি হওয়ার কারণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরকান মহা সড়কের পৌর সদরের ডাকবাংলোর মোড়, পোস্ট অফিস মোড় এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। মূল কারণ হিসেবে স্থানীয়রা দেখছেন ড্রেন নির্মাণের ঠিকাদার নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না করা ও ড্রেনের পানি নিস্কাশনের সংযোগ না দেওয়ার কারণে এবার মোড়ে মোড়ে বৃষ্টির পানি জমে রয়েছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ৪ দিনের টানা বর্ষণ, পাহাড়ি ঢলের ¯্রােত ও জোয়ারের পানিতে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার কেলিশহর, হাইদগাঁও, কচুয়াই, খরনা, শোভনদন্ডী, ছনহরা, ভাটিখাইন, ধলঘাট, হাবিলাসদ্বীপ, জঙ্গলখাইন, আশিয়া, কাশিয়াইশ, জিরি, কুসুমপুরা, কোলাগাঁও, বড়লিয়া, দক্ষিণ ভূর্ষি ছাড়াও পৌর সদরের বেশিরভাগ ওয়ার্ডে বৃষ্টির পানি জমে মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড এর রামকৃষ্ণ মিশন রোড, পিডিবি সড়ক, ৪নং ওয়ার্ডের ছন্দা সিনেমা রোডের শেষ মাথায় কয়েকটি স্পটে বৃষ্টির পানি জমে রয়েছে। শ্রীমাই খালের ভাটিখাইনের ৭নং ওয়ার্ড এলাকায় ১শ গজের ব্যবধানে বেড়িবাঁধের ৩টি স্পটে পাহাড়ি ঢলের পানি এলাকায় ঢুকে পড়েছে। এতে মানুষের ফসল ও পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়াসহ ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভাটিখাইনের ৫,৭,৮,৯ ও ৪নং ওয়ার্ডের কিছু অংশের লোকজন এখন পানি বন্দি রয়েছেন। বেড়িবাঁধের ৩টি স্পটে ভেঙে বসতঘরসহ বিলীন হয়ে গেছে। উত্তম মেম্বার বাড়ি, ধৌপা পাড়া, ইলিয়াস মেম্বার বাড়ি, লোকমান সওদাগর বাড়ি, নুরুল ইসলাম সওদাগর বাড়ি, দে পাড়া, নাথ পাড়া, মাষ্টার বাড়ি, গনেশ সরকার বাড়ি, শীল পাড়ার বেশি ক্ষতি হয়েছে। ওইসব এলাকার কৃষকের ঢেড়শ বেগুন, কচু ক্ষেত ডুবে রয়েছে। অতি বৃষ্টিতে গ্রামীণ সড়কের বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকটি ইউনিয়নে গ্রামীণ সড়ক ভেঙে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে প্রকল্প কর্মকর্তার অফিস থেকে জানানো হয়। পটিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অধিদপ্তরের (পিআইও) উপ-সহকারী প্রকৌশলী তসলিমা ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানিতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের লোকজন এখনো পানিবন্দি রয়েছেন। কেলিশহর, হাইদগাঁও, কচুয়াই, ভাটিখাইন, আশিয়া ও ছনহরা এলাকায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ ৪শ পরিবারের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের জন্য শূকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া ত্রান ও দুর্যোগ অধিদপ্তর থেকে সহযোগিতার জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে একটি চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই তা শীঘ্রই বিতরণ করা হবে। চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবি ও ভাটিখাইন এলাকার বাসিন্দা খুরশিদ আলম জানিয়েছেন, তাদের ভাটিখাইন এলাকায় শ্রীমাই খালের বেড়িবাঁধ ১শ গজের ব্যবধানে ৩টি স্পটে ভেঙে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এলাকার লোকজন বর্তমানে পানি বন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতা করা খুবই জরুরী।
×