ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ১১:০৩, ১১ জুলাই ২০১৯

 জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী

‘বর্তমানে শিল্পীরা আজকের জন্য কাজ করে না। ভবিষ্যতে কি হতে পারে তা নিয়েও কাজ করে। সুতরাং শিল্পীদের শক্তি অনেক বেশি। আজকে যারা প্রতিষ্ঠিত শিল্পী তাদের জন্য শুধু গ্যালারী থাকলেই হবে না। বর্তমান সময়ের ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবহারও জানতে হবে। অনলাইল পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যও এখন এক একটা গ্যালারী। আমরা শুধু রং তুলিতে ছবি এঁকেছি। এখন আইপ্যাডসহ বিভিন্ন ডিজিটাল যন্ত্রের মাধ্যমে রং তুলি ছাড়াই ছবি আঁকা যায়। তাই শিল্পীদের এখন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে হয়।’ ২৩তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলছিলেন চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী দেশের চারুশিল্পের বৃহত্তম উৎসব। ১৯৭৪ সালে সমকালীন চিত্রকলা প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিষয়ক কর্মকা- শুরু হয়। ১৯৭৫ সালে শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর যাত্রা শুরু। প্রতি দুই বছর পর পর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে এ প্রদর্শনী আয়োজিত হয়। ১ জুলাই ২০১৯ শুরু হয়েছে ২৩তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম প্রদর্শনীর শুভ উদ্বোধন ও বিজয়ী শিল্পীদের পুরস্কার প্রদান করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি সবাইকে উপযুক্ত মূল্য দিয়ে শিল্পকর্ম ক্রয় করার আহ্বান জানান। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্টশিল্প সংগ্রাহক ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘আমাদের এই প্রচেষ্টা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য এই জন্য যে, বাংলাদেশের একটা ঐতিহ্য বাংলাদেশ হওয়ার আগে থেকেই তা প্রতিষ্ঠা শুরু হয়েছে। জয়নুল আবেদিন যখন কলকাতা আর্ট স্কুল থেকে পাশ করেন। তারপর থেকেই এই দিক দর্শন আমরা পেয়ে আসছি। গ্লোবাল শিল্পকলার পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এক ধরনের শিল্পকলা প্রতিষ্ঠা করে ছিল। কিন্তু জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসানসহ আমাদের শিল্পীরা যে নতুন ধারা প্রবর্তন করেন সেটির ইন্ডিয়া কোম্পানির চেয়ে অনেক বেশি মানসম্মত। আমাদের শিল্পীরা একটা রিয়েলিস্টিক পেইন্টিংয়ের সূচনা করেন। এর মধ্যেই আবার রঙের সমাহারকে গুরুত্ব দেন এবং আমরা তা ভালভাবেই বুঝতে পারি। আমাদের এই ট্রেডিশন অত্যন্ত উন্নত ও আধুনিক।’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দিয়েছেন চারুকলা বিভাগের পরিচালক শিল্পী আশরাফুল আলম পপলু। বিচারকমন্ডলীর সভাপতি শিল্পী আব্দুস শাকুরশাহ বলেন, ‘পুরস্কার পওয়া একটা আনন্দের বিষয়, বিশেষ করে তরুণদের জন্য। কারণ এই পুরস্কারের ওপর ভিত্তি করে তাদের শিল্পচর্চা আরও বেগবান হয়। এই প্রদর্শনীতে বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ এসেছে। তাই নম্বর প্রদানে বিচারকদের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য ছিল।’ এবারের প্রদর্শনীতে ৩১০ জন শিল্পীর ৩২২টি শিল্পকর্ম স্থান পাচ্ছে। চিত্রকলা, ছাপচিত্র, ভাস্কর্য, কারুশিল্প, স্থাপনা ও ভিডিও আর্ট মাধ্যমের শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। এছাড়াও আছে কৃৎকলা (পারফরমেন্স আর্ট)। প্রাথমিক পর্যায়ে শিল্পকর্ম বাছাইয়ের পর পুরস্কারের জন্য সেরা শিল্পকর্ম বাছাইয়ে বিচারক হিসেবে ছিলেন শিল্পী আব্দুস শাকুরশাহ, স্থপতি শামসুল ওয়ারেস, শিল্পী রণজীৎ দাস, শিল্পী ড. ফরিদা জামান ও শিল্পী মোহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে মোট ৮টি পুরস্কার প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি গ্র্যান্ড পুরস্কার পেয়েছেন শিল্পী কামরুজ্জামান। তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রিন্ট মেকিং বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। বৈশি^ক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে তৈরি হওয়া অসামঞ্জস্যতা এবং এর ফলে পরিবেশের যে বিপর্যয় ঘটছে সেটিই তুলে ধরেছেন ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং-২’ শিরোনামের এই স্থাপনা শিল্পটিতে। পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই অর্জন আমার কাজে অনেক বেশি শক্তি জোগাবে। শিক্ষক হিসেবে আমি লিথোগ্রাফী মিডিয়াটাকে পরিচিতি করা এবং এর চর্চা বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাব। কিন্তু পুরস্কার পেলেই শুধু কাজে অনুপ্রেরণা পাব এমনটি ঠিকনয়। আমাদের উচিত নিঃস্বার্থে কাজ করা।’ এই অর্জনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ বছর থাইল্যান্ডের ব্যাংককে আয়োজিত ‘৫ম ব্যাংকক ড্রায়িং এ্যান্ড প্রিন্টট্রিয়েনাল প্রদর্শনী ২০১৯’ প্রদর্শনীতে পুরস্কার পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। ১৯ জুলাই দেশটির রানীর কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করবেন। এছাড়াও চীনে অবস্থিত বিশে^র সবচেয়ে বড় গ্যালারীতে প্রদর্শিত হচ্ছে তার শিল্পকর্ম। এছাড়া চিত্রকলা, ভাস্কর্য, ছাপচিত্র, স্থাপনা- এই চারটি বিভাগে সম্মানসূচক পুরস্কার পেয়েছেন যথাক্রমে শিল্পী রাফাত আহমেদ বাঁধন, শিল্পী তানভীর মাহমুদ, শিল্পী রুহুল করিম রুমী, শিল্পী সহিদ কাজী। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন পুরস্কার পেয়েছেন শিল্পী উত্তম কুমার তালুকদার। দীপা হক পুরস্কার পেয়েছেন সুমন ওয়াহিদ ও চিত্রশিল্পী কাজী আনোয়ার হোসেন পুরস্কার পেয়েছেন শিল্পী ফারিয়া খানম তুলি, প্রদর্শনীটি ১-২১ জুলাই ২০১৯ পর্যন্ত চলবে। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা ও শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮ পর্যন্ত চলবে।
×