ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অনন্য রেজা করিম

‘সুপার থার্টি’ বিখ্যাত গণিতবিদ আনন্দ কুমারের বায়োপিক

প্রকাশিত: ১১:০১, ১১ জুলাই ২০১৯

 ‘সুপার থার্টি’ বিখ্যাত গণিতবিদ আনন্দ কুমারের বায়োপিক

বলিউডে বায়োপিক জোয়ারে নতুন নতুন সংযোজন দর্শকদের চমকিত এবং আলোড়িত করছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব, ঐতিহাসিক চরিত্রকে সেলুলয়েড়ে জীবন্ত করে তুলতে বায়োপিকগুলো বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে বলা যায়। বলিউডের বায়োপিকগুলোর অধিকাংশই বক্স অফিসে সাড়া তুলেছে। যে কারণে এ ধরনের সিনেমা নির্মাণের ব্যাপারে নির্মাতাদের বিশেষ ঝোঁক লক্ষ্য করা যায়। এ সপ্তাহেই মুক্তি পাচ্ছে তেমনি আর একটি নতুন বায়োপিক সিনেমা ‘সুপার থার্টি।’ ভারতের সাড়া জাগানো বিখ্যাত গণিতবিদ আনন্দ কুমারের বাস্তব জীবনের নাটকীয় ঘটনাবলী নিয়ে আবর্তিত হয়েছে এ ছবির কাহিনী। বিহারের অধিবাসী দারুণ মেধাবী গণিতবিদ আনন্দ কুমার শিক্ষক হিসেবে নামী-দামী কোচিং সেন্টারে চাকরি জীবন শুরু করেন। ওই কোচিং সেন্টারে সমাজের উচ্চ শ্রেণীর ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানরাই শুধু পড়ার সুযোগ পেত। সেখানে সাধারণ নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা গ্রহণের কোন সুযোগ না থাকায় অনেকটা ক্ষুব্ধ এবং প্রতিবাদী হয়ে কোচিং সেন্টারের লোভনীয় বেতনের চাকরি ছেড়ে নিজেই সুপার থার্টি নামে নতুন একটি কোচিং সেন্টার চালু করেন। সেখানে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত সাধারণ নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের নিজের বিশেষ তত্ত্বাবধানে শিক্ষাদান শুরু করেন। আর্থিক অসঙ্গতির কারণে দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ লাভ থকে বঞ্চিত থাকবে। সমাজে তারা জ্ঞানী-যোগ্য মানুষ হিসেবে বিকশিত হতে পারবে না ফলে সমাজের হর্তাকর্তা থাকবে উচ্চ শ্রেণীর পরিবারের সন্তানরা, কিন্তু নিজেদের যোগ্য করে তোলার প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করতে না পারায় তারা চিরকালই ক্ষমতা লাভের পর্যায়ে যেতে পারবে না। এ ধরনের প্রচলিত ধারা ভেঙ্গে নতুন ধ্যান-ধারণার বিকাশ ঘটাতে এক সামাজিক বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন আনন্দ কুমার। তিনি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তার ‘সুপার থার্টি’ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। তার প্রতিষ্ঠিত সেই বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা গ্রহণ শেষে হতদরিদ্র নিম্ন আয়ের পরিবারের অনেক মেধাবী ছেলেমেয়ে আজ সমাজে উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হচ্ছে। সেই বিখ্যাত মেধাবী গণিতবিদ আনন্দ কুমারের বাস্তব জীবনের চাঞ্চল্যকর নাটকীয় গল্প চিত্রিত হয়েছে তার বায়োপিক মুভি সুপার থার্টিতে। বিকাশ বেহল পরিচালিত বছরের বহুল আলোকিত এবং প্রতীক্ষিত সিনেমাটিতে মূল ভূমিকায় অর্থাৎ আনন্দ কমারের ভূমিকায় অভিনয় করেছে হৃত্বিক রোশনের আগে হৃত্বিক ‘যোধা আকবর’ ছবিতে স¤্রাট আকবরের ভূমিকায় অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন। বায়োপিক ধাঁচের সিনেমায় এটাই তার প্রথম অভিনয়। আনন্দ কুমারের ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য তাকে প্রস্তাব দেয়ার পর বলিউডের আরেক জনপ্রিয় সুপার স্টার অক্ষয় কমারকেও প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল তবে শেষ পর্যন্ত প্রথম পছন্দ হিসেবে হৃত্বিকই ‘সুপার থার্টি’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য মনোনীত হন। এ ছবিতে আনন্দ কুমারের চরিত্রে রূপদান করতে গিয়ে হৃত্বিক রোশনকে নানাভাবে ত্যাগ, স্বীকার করতে হয়েছে। নিজের প্রচলিত গেট আপ এবং লুক এর বাইরে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক লুক নিয়ে পর্দায় উপস্থিত হচ্ছেন। তাকে কালো বর্ণ ধারণ করতে হয়েছে সুপার থার্টি ছবিতে। বিহারি উচ্চারণে কথা বলা রপ্ত করতে হৃত্বিক রোশন একজন প্রশিক্ষক নিয়োগ করেছিলেন। গণিতবিদ আনন্দ কুমারের কলেজ জীবনের সময়কার চেহারার সঙ্গে ‘সুপার থার্টি’ ছবির ফার্স্ট লকে হৃত্বিক রোশনের অনেকটা মিল খুঁজে পেয়ে আনন্দ উচ্ছ্বাসে নিজের ফেসবুকের টাইম লাইনে নিজের কলেজ জীবনের ছবি পোস্ট করেন তিনি। ‘সুপার থার্টি’ সিনেমার কাজ শুরু হওয়ার পর পরই পরিচালক বিকাশ বেহলের বিরুদ্ধে একজন উঠতি অভিনেত্রী এবং প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের এক নারী কর্মী যৌন হয়রানির অভিযোগ আনলে তাকে ছবিটি পরিচালনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন প্রযোজনা সংস্থা ফ্যান্টম ফিল্মম। কিন্তু পরবর্তীতে পরিচালক হিসেবে বিকাশ বেহলকে বহাল রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। হৃত্বিকের নিজস্ব ফিটনেস ব্র্যান্ড এইচ আর এক্স ছবিটির প্রযোজক হিসেবে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। শুরুতে শোনা গিয়েছিল সাইফ আলি খান তনয়া সারা আলি খানের রুপালি পর্দায় অভিষেক ঘটবে ‘সুপার থার্টি’। সিনেমায় হৃত্বিক রোশনের নায়িকা হিসেবে। যদিও পরবর্তীতে, এ ছবিতে হৃত্বিকের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন ছোট পর্দার আলোচিত প্রিয় মুখ মৃনাল ঠাকুর। জি টিভির দর্শক নন্দিত সিরিয়াল ‘কুমকুম ভাগ্য’-এর বুলবুল চরিত্রে চমৎকার অভিনয়ের সুবাদে অগণিত দর্শকের মন জয় করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন সুন্দরী মেধাবী এই তন্বী অভিনেত্রী। গত বছর বড় পর্দায় তার অভিষেক হয়েছিল ভিন্ন ধারার সিনেমা লাভ সোনিয়ার মাধ্যমে। তবে ওই ছবিতে ভাল অভিনয় করলেও বলিউডে নিজেকে তেমনভাবে বিখ্যাত করে তোলা সম্ভব হয়নি তার পক্ষে। ‘সুপার থার্টি’ ছবিতে মৃনাল ঠাকুর অভিনীত চরিত্রটি এক সাধারণ তরুণীর যার সঙ্গে আনন্দ কুমারের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। এখানে মৃনাল অভিনীত চরিত্রটির নাম রিতু রেশমি। এ ছবিতে যতটুকু সুযোগ পেয়েছেন তিনি তার পুরোটাই কাজে লাগিয়েছেন। হৃত্বিক রোশনের বিপরীতে ছবিটিতে অভিনয় করতে যাচ্ছেন মৃনাল যখন এ ছবির জন্য অডিশন দিয়েছিলেন তখনও জানতেন না। পরবর্তী সময়ে ছবির শূটিং শুরু হলে বিপরীতে নায়ক হিসেবে ছোটবেলা থেকেই প্রয় অভিনেতা হিসেবে যাকে শয়নে-স্বপনে-কল্পনায় ভাবতেন সেই গ্রীক দেবতা হৃত্বিক রোশনকে পাশে পেয়ে বিস্ময়ে অভিভূত হন। শুরুতে এক ধরনের নার্ভাসভাব মৃনাল ঠাকুরকে চেপে ধরলেও নায়ক হৃত্বিকের আন্তরিক সহযোগিতায় সেই নার্ভাসভাব কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন। আগামীতে মৃনালকে আবার দেখা যাবে ভিন্ন ধরনের থ্রিলার সিনেমা ‘বাটলা হাউজ’-এ। এখানে জন আব্রাহামের বিপরীতে অভিনয় করেছেন সুন্দরী এই অভিনেত্রী। সুপার থার্টি সিনেমার বড় একটা অংশের শূটিং হয়েছে বারানসিতে। হৃত্বিক রোশন অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ছিল ‘কাবিল’ যা ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে মুক্তি পেয়েছিল। তার ঠিক আড়াই বছর পর হৃত্বিক অভিনীত আরেকটি নতুন সিনেমা সুপার থার্টি’ মুক্তি পেতে যাচ্ছে। এ ছবিটির ব্যাপারে অভিনেতা হিসেবে হৃত্বিকের অনেক উচ্চাশা রয়েছে। সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী বিষয়বস্তু এবং একজন বিস্ময়কর মেধাবী মানুষের ভূমিকায় তার অভিনয় দর্শকদের কতটা আলোড়িত করতে সক্ষম হয় সেটাই হলো দেখার বিষয়।
×