ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গণপিটুনিতে ঘাতকের মৃত্যু

কুমিল্লায় মা-ছেলেসহ তিনজনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা

প্রকাশিত: ১০:৩০, ১১ জুলাই ২০১৯

 কুমিল্লায় মা-ছেলেসহ তিনজনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা ও স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ কুমিল্লায় মা-ছেলেসহ কুপিয়ে ৩ জনকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছে। পরে গণপিটুনিতে ঘাতক রিক্সাচালক মোখলেছুর রহমান (৩৫) মারা গেছে। এছাড়া ঘাতকের ধারালো ছেনির এলোপাতাড়ি কোপে মারাত্মক আহত হয়েছে ৪ নারীসহ ৫ জন। বুধবার সকাল সোয়া দশটার দিকে জেলার দেবিদ্বার উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। এদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছেলেধরা ও গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে মারা গেছে আরও দুই জন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেবিদ্বারের রাঁধানগর গ্রামের মর্তুজ আলীর পুত্র মোখলেছুর বুধবার সকাল ১০টার দিকে রিক্সা চালিয়ে বাড়িতে এসে ধারালো লম্বা ছেনি নিয়ে আবার বাড়ির বাইরে যায়। এরপর সে প্রতিবেশী নুরুল ইসলাম, তার স্ত্রী নাজমা বেগম ও মা মাজেদা বেগমকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। এতে ঘটনাস্থলেই নাজমার মৃত্যু হয়। পরে ঘাতক একই বাড়ির মৃত শাহ আলমের শিশু পুত্র আবু হানিফকে (১০) এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় হানিফের মা আনোয়ারা বেগম আনু ছেলেকে বাঁচাতে দৌঁড়ে আসলে ঘাতক তাকেও কুপিয়ে হত্যা করে। মা ও ছেলের মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘাতক মোখলেছ রক্তমাখা উন্মুক্ত ছেনি নিয়ে বাড়িতে ও রাস্তায় ফাহিমা, রাবেয়া বেগম, মাজেদা বেগম ও জাহানারা বেগমসহ আরও ৪ জনকে কুপিয়ে আহত করে। এ সময় অবস্থা বেগতিক দেখে স্থানীয় লোকজন ঘাতককে পিটিয়ে হত্যা করে। স্থানীয়রা মারাত্মক আহত নূরুল ইসলাম, ফাহিমা, রাবেয়া বেগম, মাজেদা বেগম ও জাহানারা বেগমকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছে। পুলিশ ঘাতক মোখলেছের স্ত্রী রাবেয়া বেগম ও ভাবি মরিয়ম আক্তারকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। নিহতের স্ত্রী রাবেয়া বেগম সাংবাদিকদের জানান, ‘তার ৩ মেয়ে ১ ছেলে রয়েছে। তার স্বামী মাদকাসক্ত কিংবা মানসিক সমস্যা ছিল না, তবে মাঝে মধ্যে তার মাথা ব্যথা করত, সে নিয়মিত মাথা ব্যথার ট্যাবলেটও খেত, প্রতিদিন রিক্সা চালিয়ে বিকেলে বাসায় ফিরলেও বুধবার সকাল ১০টার দিকে বাসায় ফিরে ধারালো ছেনি নিয়ে বের হয়ে সামনে যাকে পেয়েছে তাকেই কুপিয়েছে।’ কিন্তু কি কারণে সে বাড়ির লোকজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তা তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন। এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) সাখাওয়াৎ হোসেনসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। খবর পেয়ে এলাকার হাজার হাজার লোক ঘটনাস্থলে ভিড় করে। এমন নৃশংস হত্যাকা- নিয়ে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। হত্যাকা-ের বিষয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের জানান, ‘ঘাতকের স্ত্রী পুলিশকে জানিয়েছে তার স্বামীর মাথা ব্যথা ছিল, কি কারণে হঠাৎ সে উত্তেজিত হয়ে ৩ জনকে খুন করেছে ও ৫/৬ জনকে কুপিয়েছে এর প্রকৃত কারণ এখনও জানা সম্ভব হয়নি, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দেবিদ্বার থানার ওসি জহিরুল আনোয়ার জানান, ঘাতক এলোপাতাড়ি ৮/৯ জনকে কুপিয়ে ছিল। পরে ৩ জনের মৃত্যুর পর এলাকার লোকজন ঘাতককে পিটিয়ে মেরেছে। ব্রহ্মণবাড়িয়া গণপিটুনিতে ২ জনের মৃত্যু ॥ স্টাফ রিপোর্টার ব্রহ্মণবাড়িয়া থেকে জানান, আশুগঞ্জে ছেলে ধরা ও গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে ২ জন নিহত হয়েছে। উপজেলার চর-চারতলা ও লালপুরে এ ঘটনা ঘটে। বুধবার দুপুরে উপজেলার চর-চারতলায় ছেলে ধরা সন্দেহে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তবে নিহত যুবকের কোন পরিচয় পাওয়া যায়নি। আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ আল জানান, ছেলে ধরা সন্দেহে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে, উপজেলার লালপুরে গরু চুরির অভিযোগে এলাকাবাসীর গণপিটুনিতে আমজাদ হোসেন (২০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। বুধবার সকালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। সে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের টুকচানপুর গ্রামের তাহের মিয়ার ছেলে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে লালপুর গ্রামের মোক্তার মিয়ার বাড়িতে গরু চুরির উদ্দেশে হানা দেয় আমজাদসহ আরও কয়েকজন। বিষয়টি স্থানীয়রা টের পেয়ে তাদের ধাওয়া দিলে তারা দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আমজাদকে আটকের চেষ্টা করলে সে তার হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে আক্রমণ করে। এতে জহির মিয়ার নামে একজন আহত হয়েছে। পরে আমজাদকে ধরে উত্তেজিত জনতা গণপিটুনি দেয়। পুলিশ আরও জানায়, নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
×