ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে নিউজিল্যান্ড

প্রকাশিত: ১০:৩০, ১১ জুলাই ২০১৯

 ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে  নিউজিল্যান্ড

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ক্রিকেটে ভাগ্যবিধাতার খেয়াল বোঝা দায়, ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা, যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে অনিশ্চয়তা আর রোমাঞ্চ। তাই তো যুগে যুগে খেলাটির আবেদন এত বেশি। ভাগ্যবিধাতার খেয়াল, অনিশ্চয়তা কিংবা রোমাঞ্চ- ক্রিকেটবিশ্ব এবার একসঙ্গে সবই দেখল। তাও আবার বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে। আশা জাগিয়েও হারল দুর্দান্ত প্রতাপে সেমিতে উঠে আসা ভারত। অন্যদিকে অনেকটা ভাগ্যগুণে সেরা চারের টিকেট পাওয়া নিউজিল্যান্ড ওড়াল বিজয়ের পতাকা। ওল্ডট্র্যাফোর্ডে বৃষ্টির কারণে বুধবার রিজার্ভ ডে’তে সমাপ্ত প্রথম সেমিফাইনালে ১৮ রানের জয়ে ১২তম বিশ্বকাপের ফাইনালে কেন উইলিয়ামসনের দল। টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালের মঞ্চে চিরসবুজের দেশ নিউজিল্যান্ড। অন্যদিকে গতবারের মতো এবারও সেমিতে স্বপ্নভঙ্গ ক্রিকেটের অঘোষিত মোড়ল ভারতীয়দের। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে তোলা কিউইদের ২৩৯ রানের জবাবে বিরাট কোহলির দল ৩ বল বাকি থাকতে গুটিয়ে গেল ২২১ রানে। ৩/৩৭- দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচসেরা ব্ল্যাকক্যাপস পেসার ম্যাট হেনরি। রিজার্ভ ডে’র সকালেই প্রতিপক্ষকে এত অল্প রানে গুটিয়ে দেয়ার পর বিরাট কোহলিদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ছিল ইতিবাচক। মনে হচ্ছিল আত্মবিশ্বাস দলটি ফাইনালে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে কেবল। কে ভাবতে পেরেছিল বিশ্বসেরা ব্যাটিং নিয়ে এভাবে ভেঙ্গে পড়বে ভারত? অবিশ্বাস্য সেই ঘটনাই ঘটেছে ওল্ডট্র্যাফোর্ডে। টানা বৃষ্টিতে স্যাঁতসেঁতে উইকেট যেমন কিউই পেসারদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তেমনি অল্প পুঁজি নিয়ে শুরুতেই দুর্দান্ত বোলিং করেছেন ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরিরা। রেকর্ড ৫ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে উড়তে থাকা রোহিত শর্মাকে ব্যক্তিগত ১ রানে ফিরিয়ে প্রথম আঘাত হানেন হেনরি। তৃতীয় ওভারে বিরাট কোহলিকে (১) এলবিডব্লিউ ফাঁদে ফেলে ভারতকে সবচেয়ে বড় ঝাঁকুনি দেন অভিজ্ঞ বোল্ট। পরের ওভারেই হেনরির বলে ১ রান করা লোকেশ রাহুল যখন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৫ রানে ৩ উইকেট নেই ভারতের। কঠিন বিপদের মধ্যে আশা জাগিয়ে নিজেদের ইনিংস বড় করতে পারেননি দুই তরুণ ঋষভ পন্থ (৫৬ বলে ৪ চারে ৩২) ও হারদিক পা-িয়া (৬২ বলে ২ চারে ৩২)। তার আগে দীনেশ কার্তিক আউট হন ৬ রান করে। ৩১তম ওভারে দলীয় ৯২ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর মনে হচ্ছিল ভারতের হারটা যেন সময়ের ব্যাপার। কিন্তু স্রোতের বিপরীতে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করে আশা জাগিয়ে তোলেন রবীন্দ্র জাদেজা ও মহেন্দ্র সিং ধোনি। সপ্তম উইকেটে ১০৪ বলে ১১৬ রানের জুটি গড়েন দু’জন। উইকেটের সবদিকে সমানে খেলছিলেন জাদেজা। তুলে নিয়েছিলেন ক্যারিয়ারের ১১তম হাফ সেঞ্চুরি। শেষ ৫ ওভারে ৫২ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের। ধোনি অন্যসাইড থেকে দারুণ সাপোর্ট দিয়ে যচ্ছিলেন। শেষ ৩ ওভারে অর্থাৎ ১৮ বলে চাই ৩৭। ম্যাচে তখন তুমুল উত্তেজনা। বোল্টকে মারতে গিয়ে উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ তুলে দেন মাত্র ৫৯ বলে ৪ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৭ রান করা জাদেজা। ধোনি ছিলেন বলে হয়তো তখনও আশা ছিল। কিন্তু পরের ওভারেই মার্টিন গাপটিলের দুর্দান্ত এক থ্রোয়ে রানআউট সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক। ৭২ বলে ১ চার ও ১ ছক্কায় ৫০ রান করেন তিনি। রানের খাতা খোলার আগে একই ওভারে ফার্গুসনের শিকারে পরিণত হন ভুবনেশ্বর কুমার। শেষ ওভারে যুবেন্দ্র চাহালকে (৫) ফিরিয়ে ৩ বল আগেই নিউজিল্যান্ডকে জয়ের উৎসবে মাতান জিমি নিশাম। ২২১ রানে অলআউট ভারত। কিউইদের হয়ে জয়ের নায়ক হেনরি ৩৭ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। ট্রেন্ট বোল্ট ও মিচেল স্যান্টনারের শিকার দুটি করে। বৃষ্টির কারণে আগেরদিন যেখানে শেষ হয়েছিল বুধবার সেখান থেকে শুরু হয় দিনের খেলা। ৪৬.১ ওভারে ৫ উইকেটে নিউজিল্যান্ডের রান ছিল ২১১। বাকি মাত্র ২৩ বলের (৩.৫ ওভার) জন্য আবার বোলিং করতে নামতে হয় ভারতকে। তবে ভারতীয় পেসারদের কৌশলী বোলিংয়ের মুখে খুব বেশি রান যে স্কোরবোর্ডে যোগ করতে পারেনি কিউইরা। এই ২৩ বলের মধ্যেও তাদের হারাতে হয় ৩ উইকেট। আগেরদিনের ৫ উইকেটে ২১১ রান নিয়ে খেলতে নেমে স্কোরবোর্ডে কিউইরা যোগ করতে পারে কেবল ২৮ রান। ৮ উইকেটে ২৩৯ রানে শেষ হয় কিউইদের ইনিংস। আগেরদিন ৬৭ রানে অপরাজিত থাকা রস টেলর আর ৭ রান যোগ করে ৪৮তম ওভারের শেষ বলে রবীন্দ্র জাদেজার সরাসরি এক থ্রোতে রানআউট হয়ে যান। পরশু টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক উইলিয়ামসন। ভারতীয় বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে তাদের ব্যাটিং ছিল খুবই মন্থর। এক পর্যায়ে তো ৩-এর নিচে ছিল রান তোলার গড়। তবে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন এবং শেষদিকে রস টেইলরের দৃঢ়তায় চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড় করায় কিউইরা। শেষ পর্যন্ত দুইদিন মিলিয়ে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৩৯ রান তুলতে সক্ষম হয় নিউজিল্যান্ড। রস টেলর রানআউট না হলে হয়তো স্কোরটা আরও একটু বড় হতো। ৯০ বলে ৩ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় তিনি করেন ৭৪ রান। ১১ বলে ১০ রান করা টম লাথাম ভুবনেশ্বর কুমারকে ছক্কা মারতে গিয়ে একেবারে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন রবীন্দ্র জাদেজার হাতে। এছাড়া ম্যাট হেনরি আউট হন ১ রানে। ৯ রানে মিচেল স্যান্টনার এবং ৩ রানে অপরাজিত থাকেন ট্রেন্ট বোল্ট। আগেরদিন ২৮ রানে ওপেনার হেনরি নিকোলস, জিমি নিশাম ১২ রানে এবং মার্টিন গাপটিল আউট হন কেবল ১ রান করে। ভুবনেশ্বর কুমার নেন ৩ উইকেট। জাসপ্রিত বুমরা, হারদিক পা-িয়া, রবীন্দ্র জাদেজা এবং যুবেন্দ্র চাহাল নেন ১টি করে উইকেট। স্কোর ॥ নিউজিল্যান্ড ॥ ২৩৯/৮ (৫০ ওভার; গাপটিল ১, নিকোলস ২৮, উইলিয়ামসন ৬৭, টেইলর ৭৪, নিশাম ১২, ডি গ্র্যান্ডহোম ১৬, লাথাম ১০, স্যান্টনার ৯*, হেনরি ১, বোল্ট ৩*; ভুবনেশ্বর ১০-১-৩৪-৩, বুমরা ১০-১-৩৯-১, পা-িয়া ১০-০-৫৫-১, জাদেজা ১০-০-৩৪-১, চাহাল ১০-০-৬৩-১)। ভারত ॥ ২২১/১০ (৪৯.৩ ওভার; রাহুল ১, রোহিত ১, কোহলি ১, পন্থ ৩২, কার্তিক ৬, পা-িয়া ৩২, ধোনি ৫০, জাদেজা ৭৭, ভুবনেশ্বর ০, চাহাল ৫, বুমরা ০*; বোল্ট ১০-২-৪২-২, হেনরি ১০-১-৩৭-৩, ফার্গুসন ১০-০-৪৩-১, ডি গ্রান্ডহোম ২-০-১৩-০, নিশাম ৭.৩-০-৪৯-১, স্যান্টনার ১০-২-৩৪-২)। ফল ॥ নিউজিল্যান্ড ১৮ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ ॥ ম্যাট হেনরি (নিউজিল্যান্ড)।
×