ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মানিলন্ডারিং ॥ সিনহার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

প্রকাশিত: ১০:২৩, ১১ জুলাই ২০১৯

মানিলন্ডারিং ॥ সিনহার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভুয়া ঋণপত্র তৈরির মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংক থেকে ৪ কোটি টাকা আত্মসাত, পাচার করা ও পাচারের চেষ্টার দায়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ (এসকে সিনহা) ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আইন অনুযায়ী মামলার আসামিরা দেশের বাইরে থাকলেও দেশে এনে বিচারের চেষ্টা করবে দুদক। বুধবার সংস্থাটির সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত তার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। বুধবার দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। এর মাধ্যমে এই প্রথমবারের মতো কোন সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। দ-বিধির ৪০৯, ৪২০, ১০৯ ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২), (৩) ধারায় মামলা করা হয়। মামলায় ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) শুলশান শাখা ও প্রধান কার্যালয়কে ঘটনাস্থল বলা হয়। ২০১৬ সালের নবেম্বর থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঘটনার সময় দেখানো হয়েছে। এসকে সিনহা ছাড়া মামলার বাকি আসামিরা হলেন ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) সাবেক এমডি একেএম শামীম, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ জিয়াউদ্দিন আহমেদ, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ লুৎফুল হক, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মোঃ শাহজাহান, একই এলাকার নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা, রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়। এর আগে গতবছরের অক্টোবরে ফারমার্স ব্যাংকের দুটি এ্যাকাউন্ট থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। কথিত ব্যবসায়ী শাহজাহান ও নিরঞ্জন ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে চার কোটি টাকা ঋণ পেয়েছিলেন। সেই টাকা রণজিৎ চন্দ্র সাহার হাত ঘুরে বিচারপতি সিনহার বাড়ি বিক্রির টাকা হিসেবে দেখিয়ে তার ব্যাংক হিসাবে ঢুকেছে বলে অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তে নামে দুদক। মামলা সম্পর্কে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। তিনি ভুয়া ঋণপত্র সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থ পাচারের চেষ্টা ও আত্মসাত করেছেন। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ করলেও প্রধান আসামি সিনহার এ্যাকাউন্টে একটি পে অর্ডারের মাধ্যমে টাকা রাখা হয়। এ অর্থের মূল উৎস গোপন রাখার অপরাধে কমিশন এ মামলা দায়ের করেছে। প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এই প্রথমবারের মতো কোন মামলা করলো দুদক। কিসের ভিত্তিতে এ মামলা দায়ের করা হলো সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। যার বিরুদ্ধেই দুদক অভিযোগ পাচ্ছে তার বিরুদ্ধেই স্বাধীনভাবেই তদন্ত করেছে ও প্রয়োজনে মামলা করছে। অর্থ পাচার বা পাচার চেষ্টা করেছেন আসামিরা এমন অভিযোগের তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। অপরাধ প্রমাণ হলে কি শাস্তি হতে পারে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী তার যা সাজা প্রাপ্য তাই হবে। মামলার আগে সিনহার কোন সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছে কি না এ প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাই তা সঠিকভাবে বলতে পারবেন। তবে বিদেশে অবস্থান নেয়ায় তার বিরুদ্ধে আইনী যা ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাকে দেশে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দেশের আইনে সব ব্যবস্থা রয়েছে। অন্যদের ক্ষেত্রে যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তার ক্ষেত্রেও সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া দুদক বিদেশে অবস্থানরত অনেকের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করেছে। সবার ক্ষেত্রে যা হবে তার ক্ষেত্রেও তাই করা হবে। সচিব বলেন, মূলত টাকার উৎস গোপন রাখা হয় যা আইনে অপরাধ। অর্থপাচার ও পাচারের চেষ্টার কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক অপরাধজনিত বিশ্বাস ভঙ্গ করে ফারমার্স ব্যাংক গুলশান শাখার নিকট থেকে অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে সিনহা একই দিনে ব্যক্তিগত এ্যাকাউন্টে পে অর্ডারের মাধ্যমে স্থানান্তর করেন। পরে এ এ্যাকাউন্ট থেকে নগদ, চেক বা পে অর্ডারের মাধ্যমে অন্য হিসেবে স্থানান্তর হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে আত্মসাত করে নিজের ভোগদখল ও এর অবৈধ প্রকৃতি উৎস অবস্থান গোপনের মাধ্যমে পাচার বা পাচারের প্রচেষ্টায় সংঘবদ্ধভাবে সম্পৃক্ত থেকে দুদক আইন অনুযায়ী যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এজাহারে বলা হয়, মামলার ৮ ও ৯ নং আসামি যথাক্রমে মোঃ শাজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা, ২০১৬ সালের ৬ নবেম্বর ফারমার্স ব্যাংকে ২টি চলতি হিসাব খোলেন। এর বিপরীতে ২ কোটি টাকা করে মোট ৪ কোটি টাকা বাড়ির বিপরীতে ব্যাংক ঋণের আবেদন করেন। দুদক তদন্তে দেখা যায় এটি সাবেক বিচারপতি এস কে সিনহার মালিকানাধীন বাড়ি। এছাড়া ঋণের বিপরীতে সাভারের ৩২ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করা হয়। যা সিনহার পরিচিত লোকজনের। এ আবেদনটি কোন প্রকার যাচাই-বাছাই না করেই ও কোন প্রকার ব্যাংক নীতিমালা বিশ্লেষণ না করেই শুধু গ্রহকের আবেদনের ওপর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আসামিরা ঋণ প্রস্তাব প্রস্তুত করে তাতে তারা স্বাক্ষর করেন। এরপর সেই ঋণ প্রস্তাব নিয়ম না মেনে হাতে হাতেই ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে যান। প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কর্মকর্তারা কোন প্রকার যাচাই-বাছাই না করেই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজে কোন প্রকার যাচাই-বাছাই করতে বা নির্দেশনা না দিয়েই সরাসরি তিনি ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন দেন। এরপর ঋণ মঞ্জুর হওয়ার পরদিনই আবেদনকারীদের বিপরীতে ঋণ মঞ্জুরের পে অর্ডার ২ কোটি করে মোট ৪ কোটি টাকা সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহার নামে চেক ইস্যু করা হয়। যা এরপর দিনই সুপ্রীমকোর্ট সোনালী ব্যাংকের সিনহার পার্সোনাল এ্যাকাউন্টে পে অর্ডার মূলে জমা হয়। এ টাকা তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তিকে ক্যাশ চেক বা পে অর্ডার দিয়ে এ টাকা উত্তোলন করেন। এর মধ্যে শাহজালাল ব্যাংক উত্তরা শাখায় তার আপন ভাইয়ের এ্যাকাউন্টে ২৮ নবেম্বর ২০১৬ তারিখে এক কোটি ৪৯ লাখ ৬ হাজার টাকা ও ৭৪ লাখ ৫৩ হাজার টাকা স্থানান্তর করেন। পরে এ টাকা আবার বিভিন্ন সময় উত্তোলন করেন। এজাহারে বলা হয়, আসামি রণজিৎ চন্দ্র সাহা এ ঋণ অনুমোদন পেতে ব্যাংকে উপস্থিত থেকে ঋণ পেতে প্রভাব বিস্তার করেন। এছাড়া আসামি রণজিৎ ও শাজাহান ছোটকালের বন্ধু। তাদের দুজন অত্যন্ত গরিব ও দুস্থ তাদের কোন তারা কখনোই কোন প্রকার ব্যবসা বাণিজ্য করেননি ও তাদের কোন ব্যবসা নেই বলে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেন। এছাড়া সিনহা তাদের ভুল বুঝিয়ে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করেন। উল্লেখ্য, ভুয়া ঋণের মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ এখন পর্যন্ত ব্যাংকে পরিশোধ করেননি। যা দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজাহারে মামলার তদন্তকালে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলা হয়। উল্লেখ্য ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর ছুটিতে যান তৎকালীন সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। পরে বিদেশ থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন বলে ওই সময় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা’র অস্ট্রেলিয়া যাত্রার পরদিনই তার বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন, অর্থপাচারসহ ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনে সুপ্রীমকোর্ট। ২০১৭ মালের ১৪ অক্টোবর তৎকালীন রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। আনীত অভিযোগগুলোর মধ্যে আর্থিক অনিয়মসহ দুর্নীতির কথাও বলা হয়েছে। ঐ দিনই পদত্যাগকারী প্রধান বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তি রয়েছে বলে মনে করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সাবেক প্রধান বিচারপতির বিদায়ের যাত্রাকালে তার বাসভবনের সামনে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে দেশবাসী বিভ্রান্ত হয়েছেন। দেশবাসীর এই বিভ্রান্তি দূর করতে পাঁচ বিচারপতির আজকের দেয়া বিবৃতির প্রয়োজন ছিল। একইসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া বিচারিক কাজ পরিচালনা, বেঞ্চ গঠনসহ সকল দায়িত্ব তিনি সাংবিধানিকভাবে পালন করতে পারবেন। সুপ্রীমকোর্টের ঐ বিবৃতিতে বলা হয়, এসব অভিযোগ প্রধান বিচারপতিকে জানিয়ে আপীল বিভাগের অন্যান্য বিচারপতি তার কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেন। কিন্তু তিনি সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। এ কারণে বাকি বিচারপতিরা তার সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান। এ সময় সিনহা পদত্যাগ করবেন বলেও তাদের জানিয়েছিলেন। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতির পদটি একটি প্রতিষ্ঠান। সেই পদের ও বিচার বিভাগের মর্যাদা রাখার স্বার্থে ইতোপূর্বে সুপ্রীমকোর্টের তরফ থেকে কোন প্রকার বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান করা হয়নি। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশক্রমে বিবৃতি প্রদান করা হলো। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে রওনা হওয়ার সময় নিজ বাসভবনের সামনে সাংবাদিকদের প্রধান বিচারপতি জানান, আমি অসুস্থ না, আমি ভাল আছি, আমি পালিয়েও যাচ্ছি না। আমি আবার ফিরে আসব। আমাকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়নি। আমি নিজে থেকেই ছুটি নিয়েছি। তিনি বলেন, আমি একটু বিব্রত, আমি বিব্রত। আমি বিচার বিভাগের অভিভাবক। আমি চাই না, বিচার বিভাগ কলুষিত হোক। বিচার বিভাগের স্বার্থে আমি সাময়িকভাবে যাচ্ছি। কারও প্রতি আমার কোন বিরাগ নেই। বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকুক, এটাই আমি চাই।এর পরিপ্রেক্ষিতে পরের দিন সুপ্রীমকোর্ট একটি বিবৃতি বিজ্ঞপ্তি আকারে বিবৃতি দেয়। প্রধান বিচারপতি দায়িত্বগ্রহণের পর একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের বাধা সৃষ্টির লক্ষ্যে পুরাতন হাইকোর্ট চত্বর থেকে ট্রাইব্যুনাল সরানোর জন্য একাধিকবার আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রদান , সুপ্রীমকোর্টের বাৎসরিক ছুটি কমানোর সিদ্ধান্ত, আদালতের সময় এগিয়ে আনা, সুপ্রীমকোর্ট চত্বরে ভাস্কর্য স্থাপন, বিচারপতি নিয়োগে পছন্দ মতো লোক না দেয়ায় বাধা সৃষ্টিগুলো অন্যতম। এতে আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মোঃ জয়নুল আবেদীনের দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তদন্তে করা যাবে না এমন চিঠি প্রদান, প্রধান বিচারপতির আয়কর রিটার্ন ও ব্যাংক এ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনসহ নানা বিষয়ে জনকণ্ঠসহ অন্যান্য মিডিয়াতে প্রকাশ পায়। এরপর সর্বশেষ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় সংসদ নিয়ে তিনি যে পর্যবেক্ষক দিয়েছেন, তাতে দেশের রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে আইনজীবী বিচারপতিগণও ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি অসুস্থ হওয়ায় রাষ্ট্রপতির নিকট এক মাসের ছুটির আবেদন করেন। ১৩ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়া যাবার প্রাক্কালে তিনি যে বিবৃতি দেন তা নিয়ে বিতর্কেও সৃষ্টি হয়। পরে সেই বিবৃতিকে কেন্দ্র সুপ্রীমকোর্ট ব্যাখ্যা প্রদান করে। ছুটি ভোগরত প্রধান বিচারপতি সিনহা সহোদয় গত ১৩ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে বিদেশ গমনের সময় একটি লিখিত বিবৃতি উপস্থিত গনমাধ্যম কর্মীদের নিকট হস্তান্তর করেন। উক্ত লিখিত বিবৃতিটি সুপ্রীমকোর্টেও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। উক্ত লিখিত বিবৃতি বিভ্রান্তিমূলক। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সুপ্রীমকোর্টের বক্তব্য নিম্নরূপ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ প্রধান বিচারপতি সিনহা মহোদয় ব্যতীত আপীল বিভাগের অন্য পাঁচ বিচারপতিকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান। বিচারপতি মোঃ ইমান আলী মহোদয় দেশের বাইরে থাকায় বঙ্গভবনের ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেননি। অপর চার জন, অর্থাৎ বিচারপতি আবদুল ওহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার মহামান্য রাষ্ট্রপতির সহিত সাক্ষাত করেন। দীর্ঘ আলোচনায় এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি সিনহা মহোদয়ের বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সংবলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন। তন্মধ্যে বিদেশে অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ আরও সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে বিচারপতি মোঃ ইমান আলী ঢাকায় ফেরার পর ১ অক্টোবর ২০১৭ সালে আপীল বিভাগের উল্লিখিত ৫ জন বিচারপতি মহোদয় এক বৈঠকে মিলিত হয়ে উক্ত ১১টি অভিযোগ (সংযুক্তসহ) বিশদভাবে পর্যালোচনার পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ঐ সকল গুরুতর অভিযোগসমূহ সিনহাকে অবহিত করা হবে। তিনি যতি ঐ সকল অভিযোগের ব্যাপারে কোন সন্তোষজনক জবাব বা সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন তা হলে তার সঙ্গে বিচারালয়ে বসিয়া বিচারকার্য পরিচালনা করা সম্ভব হইবে না। কিন্তু দীর্ঘ আলোচনার পরও তাঁহার নিকট হইতে কোন প্রকার গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা বা সদুত্তর না পেয়ে আপীল বিভাগের পাঁচজন বিচারপতি তাকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, এমতাবস্থায় এসব অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে বিচার কাজ পরিচালনা করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। এ পর্যায়ে সিনহা সুস্পষ্টভাবে বলেন যে, তিনি পদত্যাগ করবেন। তবে এ ব্যাপারে পরদিন তিনি তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। অতপর পরদিন ২ অক্টোবর তিনি উল্লিখিত বিচারপতিদের কোন কিছু অবহিত না করে রাষ্ট্রপতির কাছে এক মাসের ছুটির দরখাস্ত দেন। রাষ্ট্রপতিও তা অনুমোদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে অনুরূপ কার্যভার পালনের দায়িত্ব প্রদান করেন।
×