ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস আজ

জন্মনিয়ন্ত্রণে ড্রপআউট ও বাল্যবিবাহে বাড়ছে দেশের জনসংখ্যা

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ১১ জুলাই ২০১৯

  জন্মনিয়ন্ত্রণে ড্রপআউট ও বাল্যবিবাহে বাড়ছে  দেশের জনসংখ্যা

নিখিল মানখিন ॥ পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীদের ড্রপআউটের উচ্চহার ও বাল্যবিয়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন পদ্ধতিতে ড্রপআউটের হার এখনও ৩৫.৭ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই দেশের ৬৬ শতাংশ কিশোরীর বিয়ে হয়। আর বিবাহিতদের মধ্যে কিশোরী অবস্থাতেই গর্ভধারণ করে শতকরা ৬৪ দশমিক ৩ ভাগ। গত তিন বছরে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারের হার মাত্র ১ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে প্রজননহার প্রায় একই আছে। প্রজননহার বা মহিলাপ্রতি গড় সন্তান জন্মদানের হার ২ দশমিক ৭। বর্তমানে প্রজননক্ষম সকল দম্পতি পরিবার পরিকল্পনার কোন না কোন পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত। কিন্তু পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার সন্তোষজনক হারে বাড়েনি। ১১.৭ শতাংশ দম্পতির মধ্যে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পরিবার পরিকল্পনা সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সচেতনতার অভাবে অনেক দম্পতির বেশি সংখ্যক সন্তান নেয়ার ঘটনাও ঘটছে। কিশোরী অবস্থায় সন্তান ধারণের জন্য দারিদ্র্য ও অশিক্ষাও এর পেছনে ভূমিকা রাখছে। মাঠকর্মীরা এখন আর বাড়ি বাড়ি যায় না। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে নানা কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। এবার দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘জনসংখ্য ও উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ২৫ বছর প্রতিশ্রুতির দ্রুত বাস্তবায়ন’। পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের পরিসংখ্যান পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার বৃদ্ধির চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬৫০ সালে এক কোটি ছিল। ২শ’ বছর পর ১৯৫১ সালে তা বেড়ে দ্বিগুণ অর্থাৎ ২ কোটি ৩ লাখ হয়। এই জনসংখ্যা ৪ কোটি ২০ লাখ হয় ৯০ বছরে (১৯৪১ সালে) । ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এর আগে ’১৭ সালের ১ জুলাই জনসংখ্যার প্রাক্কলন করা হয়েছিল ১৬ কোটি ২৭ লাখ। ওই হিসাব অনুযায়ী পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১৯ লাখ ১০ হাজার, নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লাখ ৪০ হাজার। ১৩ সাল থেকে একই হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। অর্থাৎ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৭ শতাংশেই স্থির রয়েছে। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে ৯৭৯ জন। বর্তমান হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের দিকে তাকালে দেখা যায়, ১৯৫০ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল উর্ধগামী। ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমতে শুরু করলেও তা প্রত্যাশিত হারে নামেনি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে এসডিজি অর্জনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাল্যবিয়ে। এটি এখনও একটি বড় সামাজিক সমস্যা। ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই মেয়েদের বিয়ে না দেয়ার বিদ্যমান আইন বেশি মাত্রায় লঙ্ঘন করা হয়ে থাকে। ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই দেশে শতকরা ৬৬ ভাগ মেয়ের বিয়ে হয়। এর এক-তৃতীয়াংশ ১৯ বছর হওয়ার আগেই গর্ভবতী অথবা মা হয়। দেশে প্রতি হাজার শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে ২ দশমিক ৯ মা মারা যায়। এদের মধ্যে কিশোরী মায়ের সংখ্যাই বেশি। পরিবার পরিকলল্পনা অধিদফতর জানায়, মা ও শিশু স্বাস্থ্য এবং কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম সফল করে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন। জোরালো করতে হবে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম। পরিবার পরিকল্প পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অস্বাভাবিক হার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও পরিবার পরিকল্পনা এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচী বেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। প্রতি বছর পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহীতা শতকরা গড়ে ১ দশমিক ৫ ভাগ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে গত দশ বছরে আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার বৃদ্ধি পেয়ে ৬১.২ শতাংশে উন্নীত হলেও স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতিতে তেমন কোন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। প্রজননহার বা মহিলা প্রতি গড় সন্তান জন্মদানের হার কমে বর্তমানে ২ দশমিক ৭ ভাগে নেমেছে। অপূর্ণ চাহিদার ক্ষেত্রে একটি উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী বিবাহিত মহিলাদের মধ্যেই অপূর্ণ চাহিদার হার সবচেয়ে বেশি। এ হার ১৯.৮ শতাংশ। এ বয়সীদের মধ্যে মাত্র ৩৭.৬ শতাংশ পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই দেশের ৬৬ শতাংশ কিশোরীর বিয়ে হয়। আর বিবাহিতদের মধ্যে কিশোরী অবস্থাতেই গর্ভধারণ করে শতকরা ৬৪ দশমিক ৩ ভাগ। শহরের তুলনায় গ্রামে অবস্থায় মা হওয়ার প্রবণতা বেশি। রাজশাহী বিভাগে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি, শতকরা ৩২ দশমিক ৮ ভাগ এবং সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ১৯ দশমিক ৭ ভাগ। স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি গ্রহণের হারও তুলনামূলক অনেক কম। শতকরা ৫ দশমিক ৭ ভাগ স্থায়ী এবং ৮ দশমিক ৬ ভাগ দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি গ্রহণ করছে। মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের পদ্ধতি গ্রহণের হার এখনও অনেক কম। শতকরা ৫ দশমিক ২ ভাগ পুরুষ স্থায়ী এবং অস্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করছেন।
×