ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যশোরে দু’মাসে মাত্র ১৮ শতাংশ বোরো ধান সংগ্রহ, হতাশ কৃষকরা

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ১১ জুলাই ২০১৯

 যশোরে দু’মাসে মাত্র ১৮ শতাংশ বোরো ধান সংগ্রহ, হতাশ কৃষকরা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ চলতি বছর সরকারীভাবে ১২ হাজার ৭শ’ ১২ টন বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এখন পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র ২ হাজার ২শ’ ২১ দশমিক ৪শ’ ৪০ টন ধান, যা লক্ষ্যমাত্রার ১৮ শতাংশ। অন্যদিকে বাম্পার ফলনের পরও সরকারের কাছে সরাসরি ধান বিক্রি করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। তাদের দাবি, কৃষকদের কাছ থেকে সরকারী ধান কেনা না হলে আগামীতে তারা ধান উৎপাদনের আগ্রহ হারাবে। যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা বাজারে সপ্তাহে দুই দিন ধানের সবচেয়ে বড় হাট বসে। হাটের পাশেই সরকারী খাদ্য গুদাম। সেখানে সরকারীভাবে ১০৪০ টাকা দরে বোরো ধান সংগ্রহের কথা থাকলেও কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনছেন না সরকারী কর্মকর্তারা। এ গুদামে ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১ হাজার ২শ’ ৯৮ টন, যার মধ্যে গত দুই মাসে ক্রয় করা হয়েছে মাত্র ১শ’ ৪ টন ধান। বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা এলাকার কৃষক আরশাদ আলী জানান, এবার উৎপাদিত ধানের মধ্যে তিনি সরকারী গুদামে বিক্রি করতে পেরেছেন মাত্র ২৫ মণ ধান। কিছু ধান ৬শ’ ৮০ থেকে ৭শ’ টাকায় আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেছেন। এই দামে বিক্রি করে খরচের টাকাই উঠছে না। একই উপজেলার নিত্যানন্দপুর এলাকার কৃষক আব্দুস সবুর বলেন, ‘লিস্টে নাম না থাকায় সরকারী গুদামে ধান বিক্রি করতে পারছি না। তাছাড়া সরকারী গুদামও আমার এলাকা থেকে বেশ দূরে। বহন করে নিয়ে যাওয়া আরেক ঝামেলা। সে কারণে সাত শ’ টাকা দরে আড়তদারদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।’ কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ঘরে এখনও প্রচুর ধান রয়েছে। সরকারী গুদাম উপজেলার এক কোনায় হওয়ায় পরিবহন খরচের কথা চিন্তা করে অনেকে সেখানে যেতে পারছেন না। ইউনিয়ন পর্যায়ে ধান সংগ্রহের ব্যবস্থা এবং নগদ মূল্যে কেনা হলে কৃষকরা লাভবান হতেন। তারা জানান, এবার ধানের যে দাম পাওয়া গেছে, তাতে আমন ফলনে বেশ প্রভাব পড়বে। একে তো বৃষ্টি নেই, তার ওপর ধানের এই দাম। এসব কারণে কৃষকরা বেশ হতাশ। জাতীয় কৃষক সমিতি যশোর জেলার সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ‘উৎপাদিত ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় বেশিরভাগ কৃষকই আমন ধান উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। অনেকে জমি বন্ধক দিয়ে দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি নগদ মূল্যে ধান কিনতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে গুদাম তৈরি করে ধান সংগ্রহ করলে কৃষকরা বাঁচবেন। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের যে ভবন রয়েছে, তাতেও ধান সংগ্রহ সম্ভব। শুধু সরকারের সদিচ্ছার প্রয়োজন। কৃষক যদি তার ধান সঠিক দামে বিক্রি করতে না পারেন, তবে সামনে ধান চাষ থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেবেন।
×