ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সাপাহারে ৩শ’ কোটি টাকার আমবাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৯:২২, ১১ জুলাই ২০১৯

 সাপাহারে ৩শ’ কোটি টাকার আমবাণিজ্য

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ নওগাঁর সাপাহার উপজেলা এখন আমের রাজধানীতে পরিণত হয়েছে। এ উপজেলায় চলছে আমবাণিজ্য। গড়ে প্রতিদিন এখানে প্রায় ৫ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হচ্ছে। আজ থেকে অন্তত ১০ বছর আগে এই উপজেলায় কয়েকজন কৃষক তাদের ধানের উঁচু জমিতে ধান চাষাবাদের পরিবর্তে হাইব্রিড জাতীয় আম্রপলি আমের চাষ শুরু করে। ছোট ছোট এসব গাছ রোপণের এক বছর পর হতেই গাছে আম ধরতে শুরু করে। এসব আমের গুণগত মান অন্যান্য আমের তুলনায় বেশ ভাল হওয়ায় বাজারে চড়া দামেও বিক্রি হয় সাপাহারের আম। সেই থেকে একের পর এক কৃষক দিন দিন তাদের ধান চাষের জমির সংখ্যা কমিয়ে আম চাষে মনোনিবেশ করতে থাকে। বর্তমানে সাপাহার উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৪শ’ হেক্টর জমিতে এই আমের চাষ করা হয়েছে। গেল বছর আমের বাজার বেশ মন্দা গেলেও এ বছর আমের বাজার বেশ চড়া। বর্তমানে প্রতি মণ রুপালি (আম্রপলি) আম ৩ হাজার ৫শ’ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ বছর এই উপজেলার কৃষকরা ধান চাষে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে কিছুটা হলেও তাদের সে ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছে আমে। বর্তমানে বর্ষা মৌসুমের একমাস অতিবাহিত হলেও কাক্সিক্ষত কোন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষকরা আমন আবাদ ছেড়ে দিয়ে প্রতিযোগিতামূলকভাবে তাদের আমন চাষাবাদের জমিতে আম গাছ রোপণ করে চলেছে। সাপাহারের কৃষকরা যে হারে আমের বাগান করে চলেছে, তাতে করে আগামী দু’এক বছরে হয়ত এই উপজেলায় ধান চাষের জমি থাকবে না বলে স্থানীয় অভিজ্ঞমহল মনে করছেন। বর্তমানে সাপাহার উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী পোরশা, পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলার আম কেনাবেচা হচ্ছে সাপাহারে। গত কয়েক বছর থেকে সাপাহারে আমের বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে উঠলেও এ বছর তার পরিধি প্রায় দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেছে। দেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজধানী ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ কিছু এলাকা থেকে শ’ শ’ আম ব্যবসায়ী এসেছেন নওগাঁ জেলার সাপাহারে। ইউপি চেয়ারম্যান আকবর আলী জানান, সাপাহার উপজেলার হাসপাতালের মোড় হতে গোডাউনপাড়া পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দেড় শতাধিক আমের আড়ত গড়ে উঠেছে। আড়তগুলো প্রধান সড়কের উভয় পার্শ্বে হওয়ায় প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত রাস্তায় জ্যাম লেগেই থাকে। আর এই জ্যাম লেগে থাকায় স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও জরুরী কাজে নিয়োজিত এ্যাম্বুলেন্স, বিভিন্ন অফিসের সরকারী গাড়ি ও পথচারীরা পড়ছেন চরম বিপাকে। এই দুই কিলোমিটার রাস্তা পার হতে তাদের সময় লাগছে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। সাপাহারে এবারে শেষ পর্যন্ত প্রায় ৩শ’ কোটি টাকার আমের বাণিজ্য হবে বলে আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কার্তিক সাহাসহ অভিজ্ঞমহল মনে করছেন। বর্তমানে সাপাহারে আমের বাণিজ্য ব্যাপক আকার ধারণ করলে ভবিষ্যতে এই আমবাণিজ্য কেন্দ্রটি আন্তর্জাতিক বাজারে রূপ লাভ করার জন্য সর্বস্তরের ব্যবসায়ীগণ ও বাগান মালিকগণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেছেন। এলাকাবাসীর দাবি আগামীতে আমের বাজার সরিয়ে সদর হতে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার দূরে ৫/৭ একর জমি লিজ গ্রহণ করে সেখানে আম কেনাবেচা করার ব্যবস্থা নেয়া হোক।
×