ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গোপাল, ল্যাংড়া শেষে রাজশাহীর বাজারে এখন ফজলির রাজত্ব

প্রকাশিত: ০৯:২১, ১১ জুলাই ২০১৯

 গোপাল, ল্যাংড়া শেষে রাজশাহীর বাজারে এখন ফজলির রাজত্ব

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ আমরাজ্য রাজশাহী থেকে এবার আগেই শেষ হয়ে গেছে সুমিষ্ট আম গুটি, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, খিরসাপাত। এখন মৌসুমের শেষের দিকে এসে রাজশাহীর বাজারে রাজত্ব করছে ফজলি জাতের আম। তবে এখনও বাজারে স্বল্প পরিমাণে আছে আম্রপলি। মূলত আম্রপলি আর ফজলির রাজত্ব এখন আম রাজ্যে। তবে শেষ সময়ে এসে ফজলির দাম বেড়েছে অনেক বেশি। পাল্লা দিয়ে দাম বেড়েছে সুমিষ্ট আম্রপলিরও। বুধবার রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার, শিরোইলের ঢাকা বাস স্ট্যান্ডের লক্ষ্মীপুর এবং শালবাগান এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। দাম তুলনামূলক অনেক বেশি হলেও বিক্রেতাদের দাবি আষাঢ়ের বৃষ্টির কারণে আমের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে কম। এই মুহূর্তে আমের দাম যতটা বাড়ার কথা ছিল তা বৃষ্টির জন্য বাড়েনি। নগরীর শিরোইল বাস স্ট্যান্ডের আম ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান জানান, আমের রাজধানী রাজশাহীর বাগানগুলোতে এখন উন্নতজাতের আম তেমন একটা নেই। গাছে অল্প পরিমাণে আশ্বিনা জাতের আম আছে। এখন চাহিদার বেশিরভাগ আম আসছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে। তার কাছে মহারাজ ফজলি ও সুরমা ফজলি জাতের আমই বেশি আছে। স্বল্প পরিমাণে আছে আম্রপলি। আম্রপলিগুলো রাজশাহীর বাগান থেকেই সংগ্রহ করা। কিন্তু ফজলি আনা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে। নগরীর সাহেববাজার এলাকার আম বিক্রেতা মনসুর আলী জানান, তিনি ফজলি জাতের আম বিক্রি করছেন এক হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে। গত সপ্তাহের তুলনায় এই আমের দাম মণপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কম। বৃষ্টির কারণে বিক্রি কমে যাওয়ায় দাম কমেছে বলে জানান মনসুর আলী। তবে খুচরা আম্রপলি এখন ৮০ থেকে ৮৫ টাকা আর ফজলি ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শালবাগানের পাইকারি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের কাছে প্রচুর পরিমাণে ফজলি আম দেখা যায়। তিনি জানান, সুরমা ফজলি তিনি ২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করছেন। আর মহারাজ ফজলি বিক্রি করছেন ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা মণ দরে। তার আমের মান ভাল হওয়ায় দাম বেশি বলে জানান তিনি। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের সামনে আম বিক্রি করছিলেন ব্যবসায়ী সবুজ আলী। তার কাছে আম্রপলি আম দেখা যায়। সবুজ জানান, প্রতি মণ আম্রপলি বিক্রি করছেন ৩ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকা মণ দরে। এই আমেরও দাম গত সপ্তাহের তুলনায় একটু কমেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, আমের মৌসুম ফুরিয়ে যাচ্ছে। বাজারে আমের পরিমাণও কমে আসছে। তাই দুই সপ্তাহ আগে থেকে আমের দাম বাড়তে শুরু করে। কিন্তু এখন বর্ষার বৃষ্টির কারণে বেচাকেনায় ভাটা পড়েছে। সে জন্য আমের দাম থমকে গেছে। আর বাড়ছে না। তবে এখনই বৃষ্টি থেমে গেলে দাম আবার বাড়তে শুরু করবে বলেও জানান তারা। এদিকে গাছ থেকে অপরিপক্ব আম যেন চাষীরা নামিয়ে বিক্রি করতে না পারেন সে জন্য গত কয়েক বছরের মতো এবারও আম নামানোর ক্ষেত্রে তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। সে অনুযায়ী, সবার আগে গুটি বা আঁটি আম নামতে শুরু করে গত ১৫ মে থেকে। সেদিন থেকেই শুরু হয় আমের মৌসুম। এরপর উন্নত জাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ, রানীপছন্দ, হিমসাগর, লক্ষণভোগ, ল্যাংড়া বাজারে আসে পর্যায়ক্রমে। গত ১৬ জুন থেকে ফজলি জাতের আম নামাতে শুরু করেন চাষীরা। আগামী ১৭ জুলাই থেকে আশ্বিনা আম নামাতে পারবেন চাষীরা। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামছুল হক জানান, রাজশাহীতে এ বছর প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। ঝড়-ঝাপ্টা সত্ত্বেও এসব বাগানে এবার আমের উৎপাদন ভাল হয়েছে। এ বছর চাষী এবং ব্যবসায়ীরা আম নিয়ে লাভবান হচ্ছেন বলেই জানান তিনি।
×