ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর

প্রকাশিত: ০৮:৫৪, ১১ জুলাই ২০১৯

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর

প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ দিনব্যাপী সফল চীন সফর শেষে গণভবনে সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে খোলামেলা কথাবার্তা বলেছেন প্রশ্নোত্তর পর্বসহ। উল্লেখ্য, এবার প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল দুটি। প্রথমত, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম বা ডব্লিউইএফ-এর সামার দাভোস সম্মেলনে অন্যতম অতিথি হিসেবে যোগদান। দ্বিতীয়ত, চীনের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীসহ উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পাশাপাশি মিয়ানমারে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে সে দেশের সহযোগিতা কামনা। নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, এ দুটো ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রী সফলকাম হয়েছেন এবং বাংলাদেশের ব্যাপক কূটনৈতিক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যা ও নির্যাতনের কারণে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ভূখন্ডে শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ত্রাণকার্য ও পুনর্বাসনে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য-ইইউ, ওআইসি বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। এর পাশাপাশি চীন, ভারত ও রাশিয়ারও সমর্থন এবং সহযোগিতা বাংলাদেশের প্রত্যাশিত অবশ্যই। ভারত বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র ও অকৃত্রিম সুহৃদ বিধায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়তা করতে সম্মত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এবারের চীন সফরে এক্ষেত্রে চীনের মনোভাব ও সহযোগিতা প্রদানের বিষয়টিও সুস্পষ্ট হয়েছে। মনে রাখতে হবে যে, চীন সর্বদাই মিয়ানমারের সঙ্গে আছে ও থাকবে। সেই প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি তারা দেখবে এবং সমস্যার সমাধানে সহায়তা করবে, যা হবে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে। এটি একটি অন্যতম কূটনৈতিক সাফল্য বৈকি। সম্প্রতি জনৈক মার্কিন কংগ্রেসম্যানের মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে বাংলাদেশের সঙ্গে জুড়ে দেয়ার প্রস্তাবটিও প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে নাকচ করে দিয়েছেন। দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে তিনি বলেছেন, আমরা আমাদের ভূখন্ড নিয়েই সন্তুষ্ট ও শান্তিতে থাকতে চাই। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে মিয়ানমারও তার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে থাকুক। এ ধরনের প্রস্তাব অন্যায় ও গর্হিত কাজ। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে পারলেও গ্যাসের চাহিদা মেটাতে হচ্ছে উচ্চ মূল্যে এলএনজি আমদানি করে। সরকার এলএনজি আমদানি করছে ৬১ দশমিক ১২ টাকায়, আর সেটা দেয়া হচ্ছে ৯ দশমিক ৮০ টাকায়। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি চাইলে এটুকু মেনে নিতেই হবে। এর বাইরেও প্রধানমন্ত্রী বিশেষ করে শিশুধর্ষণ ও হত্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সেটা বন্ধে নারীর পাশাপাশি পুরুষদেরও সোচ্চার ও প্রতিবাদী হওয়ার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে ‘ধর্ষক, খুনী ও নারী নির্যাতনকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করে যথোপযুক্ত শাস্তির নিশ্চয়তা প্রদান করেন। এবারের সামার দাভোস সম্মেলনে আরও একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো, আগামী বছর বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ডব্লিউইএফ বাংলাদেশে একটি ব্যাপক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান করবে, যেখানে বাংলাদেশই হবে কেন্দ্রবিন্দু। এটিও প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের অন্যতম একটি অর্জন বৈকি।
×