ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গ্যাসের দাম বাড়লেও বিতরণ কোম্পানির লভ্যাংশ মার্জিন বাড়ছে না

প্রকাশিত: ১০:২৯, ৯ জুলাই ২০১৯

 গ্যাসের দাম বাড়লেও বিতরণ কোম্পানির লভ্যাংশ মার্জিন বাড়ছে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্যাসের দাম বাড়লেও বিতরণ কোম্পানির লভ্যাংশ মার্জিন বাড়ছে না। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পূর্ণাঙ্গ আদেশে বিষয়টি সম্পর্কে নির্দেশনা থাকবে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিআরসি) সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। শীঘ্রই গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পূর্ণাঙ্গ আদেশ দেয়া হবে বলে কমিশন জানিয়েছে। কমিশন চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম সোমবার বিকেলে গ্যাসের দাম বাড়লেও মার্জিন বৃদ্ধি না করার বিষয়টি জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আমরা বিশেষ প্রেক্ষাপটে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করেছি। এলএনজি আমদানির ঘাটতি মেটাতে এবার দাম বাড়ানো হয়েছে। সঙ্গত কারণেই এবার মার্জিন বাড়ছে না। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির শুনানির সময় সকল কোম্পানিই তাদের মার্জিন বৃদ্ধির জন্য আবেদন করে। কমিশন ওসব আবেদনের ওপর শুনানিও করে। তখন বিতরণ কোম্পানিগুলোর গ্যাসের মার্জিন বৃদ্ধির আবেদনে কমিশনের কারিগরি কমিটি সাড়া দিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত কমিশন গ্যাসের দাম বাড়ালেও মার্জিন বৃদ্ধির আবেদনে সাড়া দেয়নি। তবে মার্জিন না বাড়লেও গ্যাস বিক্রি থেকে অতিরিক্ত আয় করবে কোম্পানিগুলো। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এলএনজি আমদানিতে দেশে আগের তুলনায় প্রতিদিন ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট বেশি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর ফলে বিতরণ কোম্পানির বিক্রির পরিমাণ বাড়বে। যেহেতু প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বিক্রির ওপরই লভ্যাংশ আদায় হয় সঙ্গত কারণে বিক্রি বাড়লে লাভের পরিমাণও বাড়ার কথা। সবশেষ ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর গ্যাস বিতরণ কোম্পানি এবং গ্যাস সঞ্চালন কোম্পানির গ্যাসের মার্জিন বৃদ্ধি করে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বিইআরসি। ওই সময় দেয়া বিইআরসির আদেশে বলা হয়, তিতাস, কর্ণফুলী, বাখরাবাদ, জালালাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির মার্জিন হবে প্রতি ঘনমিটারে ২৫ পয়সা আর পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ কোম্পানির মার্জিন হবে প্রতি ঘনমিটারে ৩৩ পয়সা। এছাড়া সঞ্চালনের দায়িত্বে থাকা গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি (জিটিসিএল) এর সঞ্চালন চার্জ ঘন মিটার প্রতি ৪২ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আদেশে বলা হয়, এলএনজি আমদানির ফলে জ্বালানি আমদানি খাতে মোট ১৮ হাজার ২৭০ কোটি টাকার ঘাটতি তৈরি হবে। এই ঘাটতি মেটাতে ভোক্তার পকেট থেকে ১০ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা তোলা হবে। অন্যদিকে সরকার সাত হাজার ৬৯০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেবে। ভোক্তার কাছ থেকে তোলা টাকার মধ্যে দাম বৃদ্ধি করে আট হাজার ১৬০ কোটি টাকার সংস্থান করা হবে। অন্যদিকে বাকি দুই হাজার ৪২০ কোটি টাকা জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে সংস্থান করা হবে। অভিযোগ রয়েছে বিতরণ সঞ্চালন কোম্পানি নিজস্ব উদ্যোগে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সেগুলোকে গ্যাস বিক্রির সঙ্গে সমন্বয় করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আবেদন করে। এতে করে গ্যাসের বিতরণ মার্জিন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কিন্তু বাস্তবে বিতরণ এবং সঞ্চালন কোম্পানির মার্জিন বৃদ্ধির প্রয়োজন পড়ে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যবসা করতে গেলে কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগ করতে হবে। কিন্তু কোম্পানি যে টাকা বিনিয়োগ করবে তা মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সমন্বয় করা অনুচিত হলেও তাই করা হচ্ছে। গ্যাস খাতের কোম্পানিগুলো তাদের বিতরণ মার্জিন বৃদ্ধির যৌক্তিকতা হিসেবে বলছে আর্থিক তারল্য, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষা, করদায় সঙ্কুলান এবং নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রাহকসেবার মান উন্নয়নে বিতরণ মার্জিন বৃদ্ধি করতে চেয়েছে তারা। প্রসঙ্গত গত ৩০ জুন গ্যাসের বর্ধিত দাম ঘোষণা করে বিইআরসি। এবার ৩২ দশমিক ৮ ভাগ গ্যাসের দাম বেড়েছে। ক্ষুদ্র এবং কুটিরশিল্প ছাড়া অন্য সব খাতে এবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে।
×