ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাজী ফিরোজের পুত্রবধূ গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন

প্রকাশিত: ১০:২৭, ৯ জুলাই ২০১৯

  কাজী ফিরোজের পুত্রবধূ গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর  সঙ্গে  লড়ছেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাবেক মন্ত্রী, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের পুত্রবধূ মেরিনা শোয়েব গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। তিনি রাজধানীর ধানম-ির ল্যাবএইড হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। ইতোমধ্যেই তার অস্ত্রোপচার হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ তার পেট থেকে বুলেট বের করতে পারেননি চিকিৎসকরা। বুলেটটি পেটের ভেতরে ঢুকে স্পর্শকাতর স্থানে আটকে আছে। বিবাহ-বিচ্ছেদ হওয়া স্বামীর বৈধ পিস্তল দিয়ে শ্বশুরবাড়িতে পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে এমন ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ ও পরিবারের দাবি। পিস্তলটি জব্দ করা হয়েছে। পিস্তলের গায়ে থাকা হাতের ছাপ ও পিস্তলের ব্যালাস্টিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া বাড়িতে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। মেরিনার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা নিছক আত্মহত্যার চেষ্টা নাকি অন্য কিছু তা জানতে গভীর অনুসন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ। ইতোমধ্যেই পরিবারের সবার সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। গত রবিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ৯/এ নম্বর সড়কের ৬৫ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলায় কাজী ফিরোজ রশীদের ফ্ল্যাটে ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার সময় বাড়িতে আহত মেরিনার মেয়ে ও ছেলে, দেবর ও শাশুড়ি ছিলেন। মেরিনার ছেলে ও দেবর ঘরেই ক্রিকেট খেলছিল। মেরিনার মেয়ে নিজের রুমে ছিল। আহত মেরিনার বড় সন্তান বিশ বছর বয়সী একমাত্র মেয়ের বরাত দিয়ে ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ পারভেজ ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, ঘটনার সময় কাজী ফিরোজ রশীদ সংসদে ছিলেন। আর যারা বাড়িতে ছিলেন, তারা ওই ফ্ল্যাটেই যে যার যার মতো ছিলেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে ওই তলার একটি বেডরুমে গুলির শব্দ হয়। গুলির শব্দ পেয়ে বাড়ির সবাই হতভম্ব হয়ে যান। তারা বিভিন্ন রুমে গিয়ে কি হয়েছে তা জানার চেষ্টা করেন। মেরিনার একমাত্র মেয়ে তার পিতামাতার বেডরুম থেকে কান্নার আওয়াজ পান। তিনি দ্রুত বেডরুমে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, তার মা মেঝেতে পড়ে আছেন। পেট দিয়ে অঝোরে রক্ত ঝরছে। এ সময় রক্ত বন্ধ করতে মেয়ে তার মায়ের পেটে কাপড় দিয়ে চাপ দিয়ে রাখেন। মেরিনা তার মেয়েকে বলেন, আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করো না। আমি বাঁচব না। পরে দ্রুত তাকে কাছেই ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে মেরিনা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে বার বার অক্সিজেন দেয়া হয়। অক্সিজেন টানার মতো শক্তিও মাঝে মাঝে পাচ্ছিলেন না তিনি। দ্রুত তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। রাতেই তার শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। ল্যাবএইড হাসপাতালের এজিএম (কর্পোরেট কমিউনিকেশন) সাইফুর রহমান লেলিন সাংবাদিকদের জানান, গুলি মেরিনার পেটে আটকে আছে। রবিবার অপারেশন করা হলেও বুলেট বের করতে পারেননি দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসকরা। পেটে গুলি থাকায় ভেতরে অনেক ক্ষতি হয়েছে। পেটের অনেক নাড়ি ভুঁড়ি ছিদ্র হয়ে গেছে। সেগুলো মেরামত করা হয়েছে। তাকে ট্রায়াল হিসেবে কিছুক্ষণ পরপর ভেন্টিলেশন দেয়া হচ্ছে। আবার খুলে ফেলা হচ্ছে। তিনি আশঙ্কামুক্ত নন। তবে তার জ্ঞান আছে। ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ পারভেজ ইসলাম আরও জানান, গুলিবিদ্ধ মেরিনার পাশেই একটি অত্যাধুনিক সেভেন পয়েন্ট সিক্স ফাইভ বোরের অটোমেটিক বিদেশী পিস্তল পাওয়া গেছে। পিস্তলটি জব্দ করা হয়েছে। জব্দ করা পিস্তলটি আহত মেরিনা শোয়েবের স্বামী কাজী শোয়েব রশীদের নামে লাইসেন্স করা। পিস্তলটির ভেতরে থাকা ম্যাগজিনে ১০টি বুলেট পাওয়া গেছে। আর পিস্তলের নলের ভেতরে একটি তাজা বুলেট ছিল। একটি বুলেটের খোসা মেঝেতে পড়ে ছিল। এছাড়া আরও ৩৬টি রাউন্ড তাজা বুলেট ও তিনটি জব্দ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৪৭ রাউন্ড তাজা বুলেট জব্দ হয়েছে। আর একটি বুলেটের খোসা। পিস্তলের গায়ে থাকা হাতের বা আঙ্গুলের ছাপ কার, তা নিশ্চিত হতে পিস্তল ও বুলেটের ব্যালাস্টিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এছাড়া বাড়ির ভেতরের ও বাইরে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজের পর্যালোচনা চলছে। ঘটনাটি নিছক আত্মহত্যার চেষ্টা নাকি অন্য কিছু তা জানতে গভীর তদন্ত চলছে। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ এ ঘটনায় কোন মামলা হয়নি। এছাড়া ওই ফ্ল্যাটের সবার জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়েছে। শুধু মেরিনার জবানবন্দী অসুস্থতার কারণে নেয়া সম্ভব হয়নি। তিনি সুস্থ হলে ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে তারও জবানবন্দী নেয়া হবে। এ বিষয়ে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জনকণ্ঠকে বলেন, ঘটনাটি গভীরভাবে তদন্ত করতে কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় রেখেই তদন্ত চলছে। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২৮ বছর আগে মেরিনার সঙ্গে কাজী ফিরোজ রশীদের ছেলে কাজী শোয়েব রশীদের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে বিশ বছর বয়সী একটি মেয়ে ও দশ বছর বয়সী একটি পুত্র সন্তান আছে। মেয়ে এ লেভেল পাস করেছে। মেরিনা এক সময় মাদকাসক্ত ছিলেন। তাকে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রেও ভর্তি করা হয়েছিল। মেরিনার একজন বয়ফ্রেন্ডও ছিল। দীর্ঘ দিন সেই বয়ফ্রেন্ডের তার অস্বাভাবিক যোগাযোগও ছিল। নানা কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। বছর তিনেক আগে মেরিনার সঙ্গে কাজী শোয়েব রশীদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও সামাজিক লোকলজ্জা আর ছেলে মেয়ে বড় হওয়ার কারণে মেরিনা তার শ্বশুর বাড়িতেই ছিলেন। স্বামীর সঙ্গে প্রায়ই তার সম্পর্ক ভাল থাকত। আবার মাঝে মধ্যেই সম্পর্ক চরম তিক্ততায় রূপ নিত। মেরিনার দুই সন্তানের বরাত দিয়ে পুলিশ বলছে, গত কয়েক বছর ধরেই মেরিনার কথাবার্তা ও চালচলনে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। মেরিনা প্রায়ই বাড়ির লোকজনদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। কয়েকবার আত্মহত্যা করারও হুমকি দিয়েছেন। যদিও এসব হুমকির বিষয়ে পুলিশের কাছে কোন লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। মেরিনার পিতা সিরাজুল ইসলাম পাটোয়ারী সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, স্বামী-স্ত্রীর বনিবনা হলে এমন ঘটনা ঘটত না। সকালে আইসিইউতে দেখতে গেলে মেয়ে শুধু তাকে চিনতে পেরেছে। তবে কিছুই বলেনি। ঘটনার সময় শোয়েব বাড়ি ছিল না বলে দাবি করেছে। পুলিশ শোয়েবের জবানবন্দী নিয়েছে। ইতোমধ্যেই থানায় একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তবে মামলা করা হয়নি। সার্বিক বিষয় জেনে শুনে মামলা দায়েরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মেরিনার পিতা।
×