ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঐক্যফ্রন্ট ছাড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রকাশিত: ১০:২৫, ৯ জুলাই ২০১৯

 ঐক্যফ্রন্ট ছাড়লেন কাদের সিদ্দিকী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আট মাসের টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে চলা ঐক্যের বন্ধন শেষ পর্যন্ত ছিঁড়েই গেল! নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে বনিবনা না হওয়ায় ড. কামালের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে গেলেন কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী। তার ভাষায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে যে জোট তারা গড়েছিলেন, নির্বাচনের পর গত সাত মাসে তার কোন অস্তিত্ব এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জাতীয় কোন সমস্যাকে তারা তুলে ধরতে পারছে না। এরকম একটি জোট যে আছে তা দেশের মানুষ জানেই না। এই প্রেক্ষাপটে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে একত্রে পথচলা সম্ভব নয় বলে মনে করেন সাবেক এই আওয়ামী লীগ নেতা। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিএনপি বা গণফোরামের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোন প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের এই সাবেক সাংসদ। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অস্তিত্ব বা ঠিকানা খোঁজার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে জনগণের সকল সমস্যায় তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকারে কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ নতুন উদ্যমে পথচলা শুরু করবে। কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমরা সব সময় দেশবাসীর কাছে বিশ্বস্ত থাকার চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতেও সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। গত ৯ মে সংবাদ সম্মেলন করে কাদের সিদ্দিকী ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। তখনও তিনি ঐক্যফ্রন্টের নানান অসঙ্গতি তুলে ধরেন। শোধরানোর জন্য ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সময়ও দিয়েছিলেন তিনি। কাদের সিদ্দিকীর আল্টিমেটামের প্রেক্ষিতে কামাল হোসেন তাকে বাসায় ডেকে আনেন। আলোচনার প্রেক্ষিতে সঙ্কট সমাধানের কথা জানানো হয়েছিল ফ্রন্ট নেতাদের পক্ষ থেকে। আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার পর কাদের সিদ্দিকী বলেছিলেন, তিনি অপেক্ষা করছেন। সময় হলে সব পরিষ্কার হবে। সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে সে বিষয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ৯ মে তিনি জোটের সব শরিকদের চিঠি দেন। কিন্তু ৪ জুনের আগ পর্যন্ত কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। ৪ জুন ড. কামাল হোসেন তাকে ডাকেন। এরপর ১০ জুন জেএসডি সভাপতি আ স ম রবের বাসায় কামাল হোসেন বৈঠক ডাকেন। কিন্তু সে বৈঠকে কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন না। তিনি না আসায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাও সেদিন উপস্থিত হননি বলে জানান কাদের সিদ্দিকী। এ ছাড়া তিনি বলেন, সেদিন আনুষ্ঠানিক সভা হয়নি, অপ্রয়োজনীয় আলোচনা হয়েছে। এরপরে প্রায় এক মাস হতে চললেও ঐক্যফ্রন্টে কোন সাড়া শব্দ নেই বলে জানান তিনি। কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ জানায়, সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তারা ঐকমত্যের ভিত্তিতে গণ-আন্দোলন করবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার, তাসনিম সিদ্দিকী প্রমুখ। হত্যা, ধর্ষণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপির প্রতি ক্ষোভ ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বের সমালোচনা করে আসছিলেন কাদের সিদ্দিকী। সংবাদ সম্মেলনে কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। সেখানে বলা হয়, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অস্তিত্ব বা ঠিকানা খোঁজার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে জনগণের সব সমস্যায় তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকারে কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ নতুন উদ্যমে পথচলা শুরু করছে।’ তাদের বক্তব্যে আরও বলা হয়, নির্বাচন পরবর্তী সাত মাসে ঐক্যফ্রন্টের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে অসমাপ্ত বৈঠক ছাড়া কোন নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা হয়নি। এতে তাদের মনে হয়েছে, বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক জোট বা ফ্রন্ট গঠনই হয়নি। ঐক্যফ্রন্ট ছেড়ে দিচ্ছেন কি না প্রশ্নের জবাবে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ঐক্যফ্রন্ট খুঁজে পাওয়া যায় না। তার কোন কর্মকান্ড নেই। তবে জানান, তাদের লিখিত বক্তব্য সেটাই বোঝায়। ঐক্যফ্রন্টের বর্তমান অবস্থার দায় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কাদের সিদ্দিকী বলেন, দায় কমবেশি সবার। ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সমালোচনা করে কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ। জোটের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সমালোচনা করে বলা হয়, কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জোট গঠন হলেও তাকে তেমন সক্রিয় দেখা যায়নি। জোট গঠন হলেও মূলত জোটের অন্যতম শরিক বিএনপি কেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন জোটের অফিস থেকে হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অফিস থেকে বিএনপির নেতৃত্বে তা হয়েছে, যা ঐক্যফ্রন্ট গঠনের নীতিমালার পরিপন্থী বলে জানায় কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ। এ ছাড়া জামায়াতকে একই প্রতীকে মনোনয়ন দেয়ারও সমালোচনা করেন তারা। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে জালিয়াতির নির্বাচন বলে মন্তব্য করে সংবাদ সম্মেলনে কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ বলে, নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচনের দাবি সঠিক ছিল। তবে সে পথ থেকে সরে এসে গণফোরাম ও বিএনপির নির্বাচিতদের শপথ নেয়ারও সমালোচনা করা হয়। এ ছাড়া মির্জা ফখরুলের শপথ না নেয়াকে দ্বিচারিতা উল্লেখ করে বলা হয়, জনগণ কোন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে এ রকম প্রতারণা প্রত্যাশা করে না। ফেনীর নুসরাত হত্যা, বরগুনার রিফাত হত্যা, কৃষকের ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়াসহ জাতীয় কোন ইস্যুতে ঐক্যফ্রন্ট দাঁড়ায়নি বলে অভিযোগ করে কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ।
×