ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুঁজিবাজারে মানুষ যত সম্পৃক্ত হবে, ততই শিল্পায়ন এগোবে

প্রকাশিত: ১০:২৩, ৯ জুলাই ২০১৯

 পুঁজিবাজারে মানুষ যত  সম্পৃক্ত হবে, ততই শিল্পায়ন এগোবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে নতুন নতুন উদ্যোগ ও বিনিয়োগে অংশীদার করা সম্ভব। যত বেশি মানুষ পুঁজিবাজারে সম্পৃক্ত হবে, শিল্পায়ন তত বেশি ত্বরান্বিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁয়ে এশিয়া প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন ফিন্যান্সিয়াল রেগুলেটর্স ট্রেনিং ইনিশিয়েটিভের (এপেক এফআরটিআই) রিজিওনাল সেমিনার অন ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি এ্যান্ড ইনভেস্টর্স প্রোটেকশন শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৩ সালের মধ্যে দুই সংখ্যায় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য আমাদের। আমাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, পুঁজিবাজারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে ও বিনিয়োগে অংশীদার করা সম্ভব। ফলে যত বেশি মানুষ পুঁজিবাজারে সম্পৃক্ত হবে, আমাদের শিল্পায়ন তত বেশি ত্বরান্বিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই দেশের কোন মানুষই দরিদ্র থাকবে না। অন্তত মৌলিক চাহিদাগুলো যেন পূরণ হয়, সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক কিন্তু শিল্পায়নও আমাদের একান্তভাবে প্রয়োজন। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা দেশে শিল্পায়নের মাধ্যমে অধিক হারে কর্মসংস্থানের চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং এটা সম্ভব। তিনি আরও বলেছেন, আমাদের উন্নয়নটা সমগ্র দেশব্যাপী হতে পারে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, জিডিপির ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪৩তম এবং কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে ৩২তম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ২০১৭ সালে দ্রুততম প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী শীর্ষ দশটি দেশের তালিকায় ছিল। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা যখন বিনিয়োগ করতে যান তখন মুনাফার সবটুকু বিনিয়োগ করে ফেলবেন না। অন্তত কিছু টাকা জমিয়ে রেখে তারপর বিনিয়োগ করবেন। অনেক সময় দেখা যায়, বেশি পাওয়ার লোভে সবটুকু বিনিয়োগ করে শেষে শূন্য হয়ে যেতে হয়। সেটা যেন না হয়। এজন্য যাই উপার্জন করবেন, তার কিছু হাতে রাখবেন। তাহলে আমার মনে হয় আপনাদের আয় স্থিতিশীল থাকবে। শেখ হাসিনা বলেন, পুঁজিবাজারে বিভিন্ন পর্যায়ে অনিয়ম দূর করে জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে দীর্ঘমেয়াদি অর্থ যোগান দেয়ার জন্য সরকার একটি শক্তিশালী শেয়ারবাজার গঠনে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের করমুক্ত আয়ের সীমা ২৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ফিন্যান্সিয়াল প্রোডাক্টসহ বন্ড প্রচলনের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। শর্ট সেল ও রিক্স বেজড সংশ্লিষ্ট দুটি বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে। একটি শক্তিশালী শেয়ারবাজার গড়ে তোলার জন্য ধারাবাহিকভাবে পলিসি সাপোর্ট, আইনগত সংস্কার, অবকাঠামোগত নির্মাণসহ নানাবিধ সহযোগিতা দিয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএসইসির সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সরকার জনবলসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। বিএসইসির নিজস্ব ভবনও আমরা নির্মাণ করে দিয়েছি। বিএসইসির কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারীরা অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া ডিএসইতে স্মল ক্যাপ মার্কেট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যার ফলে ছোট ও মাঝারি কোম্পানি পুঁজি উত্তোলন করতে পারবে এবং স্টার্ট আপ কোম্পানির তালিকাভুক্তির সুযোগ সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের শেয়ারবাজার এখনও শ্রেণী বিনিয়োগকারীর ওপর নির্ভরশীল। শক্তিশালী শেয়ারবাজার গঠনে দৈনন্দিন লেনদেনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। একটি জ্ঞাননির্ভর বিনিয়োগকারী গোষ্ঠী গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে বিএসইসির মাধ্যমে বিভাগীয় শহরগুলোতে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সকল জেলা সদরে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বস্ততপক্ষে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারের মূল চালিকাশক্তি। তাই তাদের সচেতনতা শক্তিশালী শেয়ারবাজার গঠনের অন্যতম শর্ত। জেনে বুঝে বিনিয়োগ করলে একদিকে ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা বাড়ে, অন্যদিকে শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হয়। বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার পাশাপাশি অধিকতর নিশ্চিত হয়ে একটি বিকশিত শেয়ারবাজার গড়ে উঠবে। যে শেয়ারবাজার ২০৪১ সালের মধ্যে অন্যতম রাষ্ট্রের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বিনিয়োগের অন্যতম উৎস হিসেবে আবির্ভূত হবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন ও এডিবি বাংলাদেশ প্রধান মনমোহন প্রকাশ।
×