ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাখাইন প্রদেশ বাংলাদেশের সঙ্গে জুড়ে দেয়ার কথা বলে মার্কিন কংগ্রেসম্যান গর্হিত কাজ করেছেন ;###;রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের সর্বোচ্চ আশ্বাস

উন্নয়নের স্বার্থে দাম বৃদ্ধি ॥ সংবাদ সম্মেলনে গ্যাস প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:২২, ৯ জুলাই ২০১৯

উন্নয়নের স্বার্থে দাম বৃদ্ধি ॥ সংবাদ সম্মেলনে গ্যাস প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে জুড়ে দেয়ার মার্কিন কংগ্রেসম্যান শ্যারনের প্রস্তাবকে ‘অত্যন্ত গর্হিত ও অন্যায় কাজ’ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার (বাংলাদেশ) যে সীমানা আছে, আমার যে দেশটা আমরা তাতেই খুশি। অন্যের জমি নিয়ে আসা বা অন্যের কোন প্রদেশ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া, এটা আমরা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করি। এটা আমরা কখনই নেব না। প্রত্যেক দেশ তার সার্বভৌমত্ব নিয়ে থাকবে। সেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে রাখাইন স্টেট জুড়ে দিতে চায় কেন? এ ধরনের কথা বলা অত্যন্ত গর্হিত ও অন্যায় বলে আমি মনে করি। সম্প্রতি নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তার সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সব দেশেই হয়। কিন্তু একটা ভাল দিক যে এখন নির্যাতিত মেয়েরা সাহসের সঙ্গে সবকিছু বলছে, অতীতে মান-সম্মানের কারণে বলত না। তবে এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। এসব ঘটানোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ ধরনের জঘন্য কাজ যারা করছে তারা মানুষ নয়। এদের বিরুদ্ধে যা যা ব্যবস্থা গ্রহণের দরকার তা নেব এবং নিচ্ছি। তিনি এ ব্যাপারে দেশের পুরুষ সমাজকে নারী-শিশু নির্যাতনকারী ধর্ষকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের পুরুষ সমাজকেও বলব ধর্ষণটা তো পুরুষ সমাজ করে যাচ্ছে। তাই পুরুষ সমাজেরও বোধ হয় একটা আওয়াজ তোলা উচিত। যারা এ ধরনের জঘন্য কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে তাদেরও কিছু করা উচিত। খালি নারীরাই চিৎকার করে যাবে নাকি? নির্যাতনকারী ও তাদের স্বজাতীয় যারা আছে তাদের ব্যাপারে সবারই সোচ্চার হওয়া উচিত। সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে সদ্য সমাপ্ত চীন সফর নিয়ে আয়োজিত জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, চীন সফরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আমরা জোরালোভাবে তুলে ধরেছি। চীনের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়েছেন এবং এই সমস্যা সমাধানে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। এটি একটি সুখবর। জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে বসেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। এ সময় সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মার্কিন কংগ্রেসম্যানের প্রস্তাব গর্হিত কাজ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে জুড়ে দেয়ার মার্কিন কংগ্রেসম্যানের প্রস্তাবের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, প্রত্যেক দেশ তার সার্বভৌমত্ব নিয়ে সে থাকবে। সেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে রাখাইন স্টেট জুড়ে দিতে চায় কেন? হতে পারে তারা বড়, খুব বড় দেশ। সেই দেশের একজন কংগ্রেসম্যান। কিন্তু তারা কী তাদের অতীত ভুলে গেছে? তাদের যখন গৃহযুদ্ধ লেগেই থাকত, সেই অতীত তো তাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। সেটা যে ভবিষ্যতেও আসবে না সেটা তারা কীভাবে ভাবে? প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাখাইন স্টেটে প্রতিনিয়ত যে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, তা আমরা জেনে-বুঝে ওই ধরনের একটা গোলমেলে জিনিস আমার দেশের সঙ্গে যুক্ত করব কেন? এটা আমরা কখনই করব না। আমাদের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার। সেখানকার লোকেরা যখন আশ্রয় চেয়েছে, মানবিক কারণে আমরা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছি। তিনি বলেন, আশ্রয় দেয়ার অর্থ এটা নয় যে, আমরা তাদের রাষ্ট্রের একটা অংশ নিয়ে চলে আসব। এই মানসিকতা আমাদের নেই। এটা আমরা চাই না। সরকারপ্রধান বলেন, প্রত্যেকটা দেশ তার সার্বভৌমত্ব নিয়ে থাকবে, সেটাই আমরা চাই। আমরা এটাও চাই যে, মার্কিন কংগ্রেসম্যান এসব কথা না বলে বরং মিয়ানমার যেন তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই কথা যেন বলেন ও কাজ করেন। সেটাই তার করা উচিত। সেটাই হবে মানবিক দিক। সেখানে যে সমস্ত মানবতা লঙ্ঘন হচ্ছে, যা কিছু হয়েছে- তাদের সেটা দেখা উচিত। এভাবে একটা দেশের ভেতরে একটা গোলমাল পাকানো এটা কোনমতেই ঠিক নয়। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, যেখানেই তারা হাত দিয়েছে সেখানেই তো আগুন জ্বলছে। কোথাও তো শাস্তি আসেনি বরং জঙ্গীবাদ সৃষ্টি হয়েছে। অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের অঞ্চলটায় আমরা একটু শান্তিপূর্ণভাবে থাকার চেষ্টা করছি। এখানেও তাদের আগুন লাগানোর প্রচেষ্টা। এটা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের সহযোগিতার আশ্বাস ॥ রোহিঙ্গা সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (চীন) বলেছেন, বিষয়টা তারা বিবেচনা করবেন, দেখবেন। এটা কী সুখবর মনে হচ্ছে না? না দুঃখের খবর মনে হচ্ছে? এটা ঠিক যে চীন মিয়ানমারের সঙ্গে সব সময় আছে। এই যে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আছে, এটা যে বাংলাদেশের জন্য বিরাট সমস্যা- এই কথাটা তো তারা নিজেরাও উপলব্ধি করতে পারছে। সে জন্যই চীনও মনে করছে এই বিষয়টার দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত। এজন্য তারা যতটুকু করার প্রয়োজন ততটুকু করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারকে সম্মত করতে চেষ্টা করবেন বলে দেশটির রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। তিনি উল্লেখ করেন, চীন তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দুইবার মিয়ানমারে পাঠিয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনে তারা আবারও মন্ত্রীকে মিয়ানমারে পাঠাবে। তিনি বলেন, আমি উন্নয়নের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করি। রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে এই শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হতে পারে বলে আমি উল্লেখ করি। ৬১ টাকায় গ্যাস কিনে সরকার বিক্রি করছে মাত্র ৯ টাকায় ॥ গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে হরতাল এবং ১৪ দলের কিছু নেতার সমালোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ইস্যুতে বাম আর ডান (বিএনপি) মিলে গেছে। এক সুরে কথা বলছে, এটা তো খুব ভাল কথা। তবে আমার প্রশ্ন, আমাদের কি গ্যাসের প্রয়োজন আছে কি নেই? দেশের যদি আমরা উন্নয়ন করতে চাই, তবে এনার্জি একটা বিষয়। এলএনজির জন্য খরচ যথেষ্ট বেশি পড়ে, এতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, দাম বাড়ানোর পরও বছরে সরকারকে ১০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। তাহলে আমি এক কাজ করি, যে দামে কিনব সে দামে বিক্রি করি? বহুদিন পর হরতাল পেয়েছেন, এটা পরিবেশের জন্য ভাল। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে আন্দোলন করছে আবার বলেছে, ভারতে দাম কমিয়েছে। এ সময় ভারত ও বাংলাদেশে গ্যাসের দামের পার্থক্য তুলে ধরে তিনি বলেন, এলএনজি আমদানিতে খরচ বাড়ায় ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, ২০০৪-০৫ সালে মিয়ানমারের গ্যাস নিতে চীন ও জাপান বিনিয়োগ করেছিল। ভারত সেই গ্যাস বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পাইপ লাইনে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু খালেদা জিয়া সেটা হতে দেয়নি। আমি হলে ভারতে গ্যাস নিতে তো দিতাম, আমার ভাগটাও রেখে দিতাম। সেই গ্যাসটা যদি পেতাম তাহলে আজ এলএনজি আমদানি করতে হতো না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, আমাদের গ্যাসের প্রয়োজন আছে কি না? ২০০৮ সাল পর্যন্ত জিডিপি কতটুকু বেড়েছে? গ্যাস আমাদের আমদানি করতে হচ্ছে। এলএনজি আমদানিতে খরচ বেশি পড়ে। যেটুকু বাড়ানো হয়েছে, সেটা যদি না বাড়ানো হয় তাহলে এলএনজি আমদানি কমে যাবে। বিশ্বের সব দেশে এটা করা হয়, তারা মেনে নেয়। তিনি বলেন, ২০০১ সালে আমাদের কাছে প্রস্তাব ছিল গ্যাস বিক্রি করার। আমি রাজি হইনি। খালেদা জিয়া মুচলেকা দিয়েছিল গ্যাস বিক্রি করবে। যে কারণে ২০০১ সালে ভোট বেশি পেয়েও আমি ক্ষমতায় আসতে পারিনি। আমাকে জানতে হবে গ্যাসের মজুদ কত, বিক্রি করতে পারব কি না? প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, প্রতি ঘনমিটার এলএনজি আমদানি খরচ হয় ৬১ টাকা ১০ পয়সা। ভারতে গৃহস্থালির জন্য স্থানভেদে গ্যাসের দাম ৩০-৩৭ টাকা প্রতি ঘনমিটার। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে দাম মাত্র ১২ দশমিক ৬০ টাকা। শিল্পে আমাদের গ্যাসের দাম ১০ টাকা ৭০ পয়সা, সেখানে ভারতে এটির দাম ৪০ থেকে ৪২ টাকা। গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, যারা আন্দোলনের সময় বলছে ভারত কমিয়েছে, বাস্তবে ভারতে বছরে দুইবার গ্যাসের দাম বাড়ায়, এটাই তাদের নীতি। পয়লা এপ্রিল এবং অক্টোবরে গিয়ে তারা গ্যাসের দাম এ্যাডজাস্ট করে। অর্থাৎ মূল্যটা বাড়ায়। তিনি বলেন, ৬১ টাকা দিয়ে এলএনজি নিয়ে এসে আমরা সেটা বিক্রি করছি মাত্র ৯ টাকায়। তারপরও আন্দোলন! একটা মজার ব্যাপার আছে, বাম আর ডান মিলে গেছে। আমরা জিডিপি ডবল ডিজিটে নিয়ে যাব। আমাদের গ্যাস লাগবে। তিনি বলেন, গ্যাস খাতে ১০ হাজার কোটি টাকার ওপর বাড়ানোর পরও ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আন্দোলন যখন করছে তখন এক কাজ করি। যে দামে গ্যাস কিনছি সেই দামে বিক্রি করি। ৯টাকার গ্যাস ৬১ টাকায় নিই। তাহলে আর ভতুর্কি দিতে হবে না। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয় ॥ বিশ্বের বড় বড় পরাশক্তির মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পররাষ্ট্র নীতিই হচ্ছে- সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারোর সঙ্গে বৈরিতা নয়। কার সঙ্গে কার কী সমস্যা, কার সঙ্গে কার কী যুদ্ধ- সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। এক সময় চীন আমেরিকার বড় বন্ধু ছিল। এখন আবার তাদের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ। আমরা কারও সঙ্গে ঝগড়া করতে যাই না। আমরা কারোর ঘরে আগুন লাগলে আলু পোড়া দিয়ে খাব, এটা চিন্তা করি না। বরং কোন্ দেশের সঙ্গে আমরা কতটুকু অর্থনৈতিক সহযোগিতা পাব, সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে পারব- সে দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা চলি। বৈদেশিক ঋণ গ্রহণেও আমরা সতর্ক ॥ অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা খুব সতর্ক ও সচেতন। আমাদের বাজেটে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ তত বেশি নয়। জিডিপির মাত্র ১৪ ভাগ বৈদেশিক ঋণ। আমরা ঋণ নিয়ে আবার সময়মত পরিশোধ করি। বাজেটের ৯৯ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে আমরা বাস্তবায়ন করছি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে। সকল ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থানে থেকে কাজ করছি বলেই আমরা দেশকে সবদিক থেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি। নিজের দেশের ভাল কাজগুলো বিশ্ববাসীর সামনে ভালভাবে তুলে ধরার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের এবারের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ ভাগে উন্নীত হয়েছে। যা বিশ্বের মধ্যে অনেকটাই রেকর্ড। নিজ দেশের এমন ভাল কাজগুলো ভালভাবে তুলে ধরা উচিত। বাস্তবে দেশের কিছু মানুষ আছে তাদের কোন কিছুই ভাল লাগে না, তাদের চোখে কোন কিছুই ধরা পড়ে না। চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ॥ এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন নিয়মিত পড়াশোনা করলে ২৩-২৫ বছরের মধ্যেই সরকারী চাকরির পরীক্ষা দিতে পারে। এ ছাড়া তিনটি বিসিএসে দেখা গেছে, যারা বেশি বয়সী, তাদের পাসের হার খুবই কম। তিনি বলেন, এখন জন্ম নিবন্ধন হয়। নিয়মিত পড়াশোনা করলে ১৬ বছরে এসএসসি পাস করে। এরপর ২ বছরে এইচএসসি। এরপর ৪ বছরে অনার্স ও ১ বছরে মাস্টার্স করলে ২৩ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে সরকারী চাকরির পরীক্ষা দিতে পারে। তিনটি বিসিএসের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৩৫তম বিসিএসে ২৩ থেকে ২৫ বছরের প্রার্থীদের মধ্যে ৪০ দশমিক ৭ শতাংশ, ২৫ থেকে ২৭ বছরের প্রার্থীদের মধ্যে ৩০ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং ২৭ থেকে ২৯ বছরের প্রার্থীদের মধ্যে ১৩ দশমিক ১৭ শতাংশ পাস করেছে। এ ছাড়া ২৯ বছরের বেশি বয়সের প্রার্থীদের পাসের হার মাত্র ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ৩৬তম বিসিএসে ২৩ থেকে ২৫ বছরের প্রার্থীদের ৩৭.৪৫ শতাংশ, ২৫ থেকে ২৭ বছরের প্রার্থীদের মধ্যে ৩৪.৭৮ শতাংশ, ২৭ থেকে ২৯ বছর বয়সের ১৯.৮৯ শতাংশ প্রার্থী পাস করেছেন। এছাড়া ২৯ বছরের বেশি বয়সী প্রার্থীদের পাসের হার ৩.২৩ শতাংশ। ৩৭তম বিসিএসে ২৩ থেকে ২৫ বছরের ৪৩.৬৫ শতাংশ, ২৫ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে ২৩.৩৫ শতাংশ, ২৭ থেকে ২৯ বছর বয়সীর ৭.২০ শতাংশ প্রার্থী পাস করেছেন। এই পরীক্ষায় ২৯ বছরের বেশি বয়সী প্রার্থীদের পাসের হার দশমিক ৬১ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী এ সময় প্রশ্ন রেখে বলেন, এখন আপনারাই বলেন, চাকরির বয়স বাড়ালে কি হবে? চাকরি প্রার্থীদের যদি ৩৫ বছর বয়সে চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়, ততদিনে তাদের ঘর-সংসার, বউ-বাচ্চা হবে। এই বয়সে এসব সামলে চাকরি পাওয়া কঠিন। এ ছাড়া যদি কোন প্রার্থী ৩৫ বছরে চাকরিতে প্রবেশ করে তাহলে প্রশিক্ষণের পর চাকরি শুরু করতে করতে তার বয়স হবে ৩৭। এই বয়সে চাকরিতে প্রবেশ করলে তার চাকরির বয়স ২৫ বছর হবে না। এটি না হলে তিনি চাকরিতে পূর্ণ পেনশনও পাবেন না। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফর্মেন্সে খুশী প্রধানমন্ত্রী ॥ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পারফর্মেন্স প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যথেষ্ট উন্নতি করেছে। বিশ্বকাপ পাওয়া একেকটা নামী-দামী দলের সঙ্গে খেলা সেটা কিন্তু কম কথা নয়। কিন্তু সেখানে বাংলাদেশের পারফর্মেন্স অত্যন্ত চমৎকার ছিল। আমরা যে খেলতে পেরেছি বা এতটা যেতে পেরেছি এটা অনেক বড় কথা। আমাদের যারা খেলোয়াড় যেমন সাকিব আল হাসান, সে তো বিশ্বে একটা স্থান করে নিয়েছে। মুস্তাফিজ একটা স্থান করে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলা এমন একটা জিনিস অনেক সময় ভাগ্যও কিন্তু লাগে। সব সময় যে একই রকম হবে তা নয়। খেলায় সাহসী মনোভাব নিয়ে মোকাবেলা করতে পারা- আমি এটা প্রশংসা করি। এত দল খেলল তার মধ্যে মাত্র চারটি দল সেমিফাইনালে উঠেছে। তার মানে কি বাকি সবাই খারাপ খেলেছে? একেকটা জাঁদরেল জাঁদরেল দল, দীর্ঘদিন ধরে যারা খেলে খেলে অভ্যস্ত তাদের সঙ্গে মোকাবেলা করে খেলায় আমাদের ছেলেদের কনফিডেন্সের কোন অভাব দেখিনি। তিনি বলেন, আমি নিজে খেলা দেখেছি। আমাদের ছেলেদের ধন্যবাদ জানাব, তারা যথেষ্ট সাহসের পরিচয় দিয়েছে। তাদের ভেতর একটা আলাদা আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। ধীরে ধীরে আরও উন্নতি হবে। তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন খেলাধুলায় আসে কারা, প্লেয়ার পাচ্ছেন কতজন? ছোটবেলা থেকে ছেলেরা যাতে খেলায় অংশ নিয়ে অভ্যস্ত হয় সে পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। ছোটবেলা থেকে প্র্যাকটিস করে তাদের তৈরি করেছি। এটা আস্তে আস্তে করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আমার ছেলেদের কখনও নিরুৎসাহিত করি না। আমি বলি, তোমরা ভাল খেলেছ। ৩৮১ রানের টার্গেটে ৩৩৩ করেছে। এটাকে খারাপ বলবেন কি? বলব না। আমাদের ছেলেদের কেউ খারাপ বলতে পারবে না। আমি নিজে খেলা দেখেছি, যেখানে আমাদের ছেলেরা যথেষ্ট ভাল খেলেছে। খেলোয়াড়দের কনফিডেন্স, তাদের পারফর্মেন্স বাড়াতে আমরা কাজ করছি। ইলিশ না পাওয়া নিয়ে মমতার অভিযোগ প্রসঙ্গে ॥ এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হাস্যোজ্জ্বল কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিস্তার পানি দেননি বলেই ইলিশ পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন মমতা ব্যানার্জি। আমরা বলেছিলাম তিস্তায় পানি নেই। তবে ইলিশ আসবে কীভাবে? মমতা ব্যানার্জির ‘জয় বাংলা’ স্লোগান প্রদান প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শেখ হাসিনা বলেন, ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছে। শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে। একসঙ্গে যুদ্ধ করে তাদেরও অনেক সৈন্য প্রাণ দিয়েছেন। আর জয় বাংলা স্লোগান এসেছে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা থেকে। কেউ যদি জয় বাংলা স্লোগান দেয়, তার মুখ থেকে তো কেড়ে নিতে পারি না। মমতা ব্যানার্জি এ স্লোগান বলেছেন, ভাল লেগেছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা দেশের সমস্ত নদী খনন করব। বর্ষায় পানি সংগ্রহ করে রাখব। কারোর কাছে আমাদের পানি চাইতে হবে না। আমরা আত্মনির্ভরশীল হতে চাই, পরনির্ভরশীল নয়। তিনি বলেন, ১০ বছর আগে দেশের অবস্থা কি ছিল, এখন আমরা কী অবস্থায় দেশকে নিয়ে এসেছি তা একটু বিচার করুন। দেশের এত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে কারণ আওয়ামী লীগ এ দেশকে স্বাধীন করেছে। সেই দেশই প্রকৃত উন্নত করতে পারে যারা স্বাধীনতার সংগ্রাম করেছে, মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছে। উড়ে এসে জুড়ে বসা কোন দল দেশের কোন উন্নয়ন করতে পারে না, অতীতে তা বার বার প্রমাণ হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী সারাদেশে বিশাল আকারে পালন করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনে সরকারীভাবে কমিটি গঠন করা হয়েছে, দলীয়ভাবেও পৃথক পৃথক কমিটি করা হয়েছে। ২০২০-২০২১ বর্ষকে আমরা মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছি। রজতজয়ন্তী যেভাবে পালন হয়েছিল, এই বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার জন্মবার্ষিকী তার চেয়ে আরও ব্যাপক ও বিশালভাবে আমরা পালন করব। সেভাবেই আমরা কর্মসূচী সাজাচ্ছি।
×