ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পী কামরুল সুলতান ও কাইয়ুমের প্রতি ভালবাসা

প্রকাশিত: ১০:০৬, ৯ জুলাই ২০১৯

 শিল্পী কামরুল সুলতান ও কাইয়ুমের প্রতি ভালবাসা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হলদে আলো ছড়িয়ে জ্বলছে বেশক’টি প্রদীপ। মেঝেতে ছড়িয়ে ছড়িয়ে আছে লাল গোলাপের পাপড়ি। ফুলের পাপড়িগুলো যেন ভালবাসা জানাচ্ছে দেশবরেণ্য তিন চারুশিল্পীকে। পাপড়ি আর প্রদীপের নিকটবর্তী দেয়ালে ঝুলে আছে তাদের প্রতিকৃতি। সেই শিল্পীত্রয় হলেন পটুয়া কামরুল হাসান, এস এম সুলতান ও কাইয়ুম চৌধুরী। সোমবার এক আয়োজনে স্মরণ করা হলো এই তিন শিল্পীকে। শিল্পকলা একাডেমির আয়োজিত ‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আয়োজনে বরেণ্য তিন শিল্পীর প্রতি নিবেদিত হলো শ্রদ্ধা-ভালবাসা। আলোকপাত করা হয় তাদের বর্ণিল জীবনের ওপর। একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কামরুল হাসানকে নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক ও গবেষক মফিদুল হক। এস এম সুলতানকে নিয়ে আলোচনা করেন চিত্র সমালোচক মোস্তফা জামান। কাইয়ুম চৌধুরীকে নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চিত্র-সমালোচক শাওন আকন্দ। আলোচনায় অংশ নেন শিল্পী হাশেম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন এবং শিল্প-সমালোচক মঈনুদ্দীন খালেদ। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চারুকলা বিভাগের পরিচালক আশরাফুল আলম পপলু। ‘গুরুসদয় দত্ত-কামরুল হাসান পরম্পরা’ শীর্ষক প্রবন্ধে মফিদুল হক বলেন, পাশ্চাত্য রীতির শিল্পচর্চা ছাপিয়ে গুরুসদয় দত্ত মনোনিবেশ করেছিলেন লোকায়ত শিল্পরূপের দিকে। এই একই লক্ষ্যে কামরুল হাসানকে ধাবিত করেছিলেন তিনি। গুরুসদয় দত্ত এবং ব্রতচারী শিল্পদর্শন ও কৃত্যের সঙ্গে সম্পৃক্তি কামরুল হাসানের শিল্পদৃষ্টি গড়তে প্রধান ভূমিকা পালন করে। লোকশিল্পের ঐতিহ্য অনুসন্ধান, তা ধারণ এবং এর পুনরস্থাপন কামরুল হাসানের জন্য কেবল শিল্পসাধনার বিষয় ছিল না। তিনি এর প্রায়োগিক তাৎপর্য প্রদানে সদা সচেষ্ট ছিলেন। গুরুসদয় দত্ত-কামরুল হাসান পরম্পরা দাবি করে আরও নিবিড় অধ্যয়ন ও অনুশীলন। এটা আমাদের বুঝিয়ে দেয় কেন কামরুল হাসান শিল্পী নন, হতে চেয়েছিলেন পটুয়া এবং হয়েছিলেনও বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের যুগ-সন্ধিক্ষণের পটুয়া। ‘এস এম সুলতানের সমালোচনা ও সৃষ্টিশীলতার পুনর্পাঠ’ শীর্ষক প্রবন্ধে মোস্তফা জামান বলেন, এস এম সুলতানের কাজ কেবল সিম্বল বা ফর্ম হিসেবে চোখের সামনে হাজির হয় না। তার যে সকল কাজ কেবল গ্রামীণ দৃশ্য নয়, তাতে কল্পদৃষ্টি দৃশ্যমান, যেমন ‘আদিম বৃক্ষ রোপণ’ অথবা ‘যাত্রা’, এসব চিত্রকল্পে পেছনের আখ্যানের সূত্র হিসেবে দর্শকের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। ‘লোকশিল্প, আধুনিকতাবাদ এবং শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী’ শীর্ষক প্রবন্ধে শাওন আকন্দ বলেন, বাংলাদেশের আধুনিক চিত্রকলার ইতিহাসে কাইয়ুম চৌধুরীর স্থান শেষ পর্যন্ত বিমূর্তধারার চিত্রকর হিসেবে নয়। বরং জয়নুল-কামরুলের ধারাবাহিকতায় তার চিত্রকলাতেও বাংলার লোক-ঐতিহ্য ও দেশজ সংস্কৃতির প্রতি ভালবাসা এবং মাতৃভূমির রূপ ও স্বদেশ ভাবনার প্রতিফলন দেখা গেছে। ষাটের দশকে তৎকালীন পশ্চিমা আধুনিকতার অভিঘাতে তিনি বিমূর্ত রীতির শিল্পী রচনা করলেও, তিনি কখনই দেশের পরিচয় মুছে ফেলতে চাননি। বরং লোকজ ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে নিজস্ব শৈলী নির্মাণের চেষ্টা করেছেন। সভাপতির বক্তব্যে লিয়াকত আলী লাকী বলেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বলেছিলেন ‘রুচির দুর্ভিক্ষ দূর করতে হবে’। এখন সময় এসেছে শিল্পের আশ্রয়ে সেই রুচির দুর্ভিক্ষ দূর করার। নইলে ধর্ষণ, খুন, নির্যাতনের মতো সামাজিক ব্যাধি উৎপাটন করা সম্ভব হবে না।
×