ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আকর্ষণীয় দ্বীপ, অপার সম্ভাবনা- অন্তরায় অনুন্নত যোগাযোগ

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ৯ জুলাই ২০১৯

আকর্ষণীয় দ্বীপ, অপার সম্ভাবনা- অন্তরায় অনুন্নত যোগাযোগ

জনকণ্ঠ ফিচার ॥ পর্যটনের জন্য সম্ভাবনাময় এক দ্বীপ সোনাদিয়া। অবহেলা ও পরিকল্পিত উন্নয়নের অভাবে দ্বীপটি মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে। কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ সোনাদিয়া হলেও স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে আজ অবধি এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থার তেমন উন্নয়ন হয়নি। ফলে এখন পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে সোনাদিয়া দ্বীপ। একই সঙ্গে পর্যটনকে ঘিরে গড়ে উঠছে না সোনাদিয়াকেন্দ্রিক কোন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা বাণিজ্য। এ ক্ষেত্রে কক্সবাজার-মহেশখালীর মধ্যবর্তী বাঁকখালী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ হলে খুলে যাবে পর্যটন উন্নয়নের রুদ্ধদ্বার। বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড় সমৃদ্ধ কক্সবাজারের একটি আকর্ষণীয় দ্বীপ সোনাদিয়া। এ দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৭শ’ ২০ জন। ভোটার ৫শ’ ১৬ জন। তন্মধ্যে মধ্যে ২শ’ ৬৭ জন পুরুষ ও ২শ’ ৯৪ মহিলা। যে দ্বীপের জমির পরিমান ২৯৬৫.৩৭ একর। ২৯৬২.২২ একর জমির উপর ১৯৭১ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত শুধু একটি সাইক্লোন শেল্টার ছাড়া অন্য কোন উল্লেখযোগ্য স্থাপনা গড়ে উঠেনি। সমগ্র দ্বীপটিকে ঘিরে ব্যক্তি মালিকানাধীন ৩.১৫ একর জমি রয়েছে। পূর্ব পাড়া আর পশ্চিম পাড়া নিয়ে সোনাদিয়ার জনসাধারণের বসবাস। চর ভরাট হয়ে এক হাজার একর জায়গায় বনবিভাগ প্রাকৃতিক বনায়ন সৃষ্টি করেছে এদ্বীপে। পূর্ব পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ডেউয়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ত জীবনযুদ্ধে আয়ু শেষ করছে সোনাদিয়াবাসী। অপার সম্ভাবনাময় এই সোনাদিয়া দ্বীপ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। এতে দৃষ্টিনন্দন প্যারাবন, বালিয়াড়ী, ঝাউ বাগান ছাড়াও রয়েছে কোলাহল মুক্ত সৈকত। রয়েছে বিচিত্র পাখপাখালীর বিচরণ। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসার প্রসার ঘটবে সমগ্র কক্সবাজার জেলায়। অসংখ্য লাল কাঁকড়ার মিলন মেলা সোনাদিয়া দ্বীপে। পূর্ব পাশে জেগে উঠা চর আকর্ষণ বাড়িয়েছে দ্বীপটির। বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিমসহ দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যাবলী দ্বীপবাসীর নিজস্ব সংস্কৃতি ও সাদা মাটা জীবন-যাপন সবাইকে আকৃষ্ট করে। জেলেদের সাগরের মাছ ধরার দৃশ্য, সূর্যাস্তের দৃশ্য, প্যারাবন বেষ্টিত আঁকা-বাঁকা নদী পথে নৌকা ভ্রমণ, স্পিডবোট বা ইঞ্জিন বোট দিয়ে মহেশখালী চ্যানেল হয়ে সাগরের মাঝ পথে বঙ্গোপসাগরের দৃশ্য অবলোকন যা পর্যটকদের জন্য ব্যতিক্রমধর্মী বাড়তি আকর্ষণ। প্রচুর সম্ভাবনা সত্ত্বেও এ দ্বীপে সরকারী বা বেসরকারীভাবে পর্যটন শিল্প বিকাশে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হলে পর্যটন জোন হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠবে এ দ্বীপটি। কক্সবাজার শহরের অদূরবর্তী এ দ্বীপটি পর্যটন বিকাশে অন্যতম স্থান হতে পারে যা দেশের তথা কক্সবাজারের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ঘটিভাঙ্গা ঘাট পারাপারের মাঝি কলিমুল্লাহ জানান, প্রতি শীত মৌসুমে বিপুলসংখ্যক পর্যটক সোনাদিয়ায় আসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলেও যোগাযোগ ক্ষেত্রে পরিবর্তন না হওয়ায় সাগর পাড়ি দিয়ে সোনাদিয়া আসা ঝুঁকি মনে করছেন পর্যটকরা। কেউ কেউ স্পিডবোট যোগে সাগর পাড়ি দিয়ে সোনাদিয়া আগমন করলেও মূলত স্বল্প সময়ের ঘুরাঘুরি করে চলে যেতে বাধ্য হয়। সোনাদিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন ভেঙ্গে পড়েছে। তার মতে, কক্সবাজার-মহেশখালীর মধ্যবর্তী বাঁকখালী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ হলে এখানে প্রচুর পর্যটকের আনাগোনা বাড়বে। ঘটিভাঙ্গা দিয়ে যে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছিল এখন তা অনেকটা অচল। সোনাদিয়া নিয়ে কিছু করতে হলে শুরুতে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন খোকন জানান, বর্তমানে সোনাদিয়া এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল থাকার পরও পর্যটকদের কোন সুযোগ সুবিধা না থাকায় কোন পর্যটক আসছে না। পর্যটন শিল্প বিকাশে সোনাদিয়াকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরী। সরকার আগামীতে এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনা নিয়েছে। বাঁকখালী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ হলে পর্যটন উন্নয়নের আরও এক ধাপ এগিয়ে যেত। সাগর পথে এসে এ দ্বীপে নামার জন্য টেকসই জেটি নির্মাণ করা প্রয়োজন। পরিবেশবাদীদের মতে, সোনাদিয়া দ্বীপ সরকার ঘোষিত পরিবেশ সঙ্কটাপন্ন এলাকা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী এই দ্বীপে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এমন সব কর্মকান্ড নিষিদ্ধ এবং প্রচলিত ট্যুরিজমের যেহেতু অনেক ধরনের নেতিবাচক দিক রয়েছে, সুতরাং এই দ্বীপে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে ইকোট্যুরিজমের উন্নয়ন অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। সোনাদিয়া দ্বীপবাসীর সম্পৃক্ততায় কমিউনিটি ভিত্তিক ইকোট্যুরিজমের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে, যা দ্বীপবাসীর বিকল্প আয়ের ব্যবস্থাসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
×